বাঙালীর ভাষা সংগ্রামের মাস ফেব্রুয়ারি, বইমেলার মাস ফেব্রুয়ারি। বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় এই মাসে প্রকাশিত হয় অসংখ্য নতুন বই। প্রতিষ্ঠিত কবি সাহিত্যিকদের পাশাপাশি পরিচিতি পায় নতুন কবি সাহিত্যিক ও তাদের বই। আর সেই সুবাদেই বইমেলার চত্ত্বরে শুধু বই পড়ুয়া ঢাকাবাসীদেরই সমাগম হয় না, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসে অসংখ্য মানুষ। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে এবং প্রবাসী বাঙালীরাও আসেন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে। সুতরাং সময়টা ঢাকাতে সাহিত্য বিষয়ক যে কোন আলোচনা ও সম্মেলনের জন্যে অত্যন্ত উপযোগী। আর সেই অনুকূল পরিবেশেই ১৫ই ফেব্রুয়ারি জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে 'বাংলা-কবিতার কবি সম্মেলন-২০২০'। কবিতা বিষয়ক সারাদিনের কর্মসূচী নিয়ে 'বাংলা-কবিতা'র শতাধিক সৌখিন কবিবর্গ এই সম্মেলনে সমবেত হতে যাচ্ছেন। তার প্রাক্কালে আমার এই লেখাটির মূল উদ্দেশ্য একটু পিছনে ফিরে দেখা bangla-kobita.com এর আজ পর্যন্ত পথ চলা। আশা করি লেখাটি একদিকে আসরে প্রতিনিয়ত যোগ দেওয়া নতুন কবিবন্ধুদেরকে কিছু তথ্যে এবং নেপথ্যে সেবাদানকারী ব্যক্তিত্বের পরিচিতিতে সমৃদ্ধ করবে, এবং অপরদিকে প্রতিষ্ঠিত সদস্যদের উদ্বুদ্ধ করবে এই কাংক্ষিত সম্মেলনটি সফলভাবে সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে সাধ্যানুসারে সেবাদান করতে।
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস পর্যালোচনা করে বলা যায় নিঃসন্দেহে এটি একটি ব্যতিক্রমধর্মী প্রয়াস। আর এই প্রয়াসটি সফল হতে যাচ্ছে বাংলা কবিতার সর্ববৃহৎ অনলাইনভিত্তিক পোর্টাল bangla-kobita.com কে কেন্দ্র করে। bangla-kobita.com এর কর্মকাণ্ড শুরু হয় ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ সালে কবিতা প্রেমিক এক তরুণ কবি ও আইটি প্রফেসনাল আশফাকুর রহমান পল্লব - যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী এক বাংলাদেশীর একক প্রয়াসে। সেই থেকে অক্লান্ত পরিশ্রম, মেধা ও অর্থ বিনিয়োগ করে কবি আশফাকুর রহমান পল্লব নিরলসভাবে এই কর্মকাণ্ডের সংরক্ষণ ও সংবর্ধন করে চলেছেন। বর্তমানে এই ওয়েবসাইটটি শুধু স্বনামধন্য বাঙালী কবিদের কবিতার সর্ববৃহৎ অনলাইন সংগ্রহশালাই নয়, এটি অসংখ্য উদীয়মান কবিদের অনলাইন কবিতা প্রকাশের স্থান এবং প্রকাশিত কবিতার উপর কবি পাঠকের মন্তব্য ও সাহিত্য সমালোচনার স্থান। কবিতা প্রকাশের পাশাপাশি যে কোন কবিতার উপর আবৃত্তিও প্রকাশ করা যায় এখানে।
এই অনলাইন সাইটটিকে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে থাকা অগণিত বাংলা কবিতাপ্রেমী লেখক পাঠকের সার্বক্ষণিক পাঠাগারও বলা যায়। এই নিবন্ধটি লেখার সময় ওয়েবসাইটের তাতক্ষণিক পরিসংখ্যানে দেখা যায়: সৌখিন কবিদের রচিত ও প্রকাশিত মোট কবিতার সংখ্যা ছিল - ২,৫৬,৮৯৪টি; দিনপ্রতি গড়ে নতুন কবিতা প্রকাশ পায় - ১২৪টি; প্রতি কবিতায় দৈনিক গড় মন্তব্য আসে - ১০টি; বর্তমানে অনলাইন পাঠক - ১৯,৫৮৯ জন (যা কখনো কখনো ২৫ হাজারও ছাড়িয়ে যায়)। কিছু সঙ্গত নিয়ম কানুনের আওতায় এই ওয়েবসাইটটি কবিতা চর্চার একটি মুক্ত অঙ্গন। এখানে কবিতা চর্চায় নিবেদিত কিছু কবিদের নিয়েই গড়ে উঠেছে একটি এডমিন প্যানেল, একটি এডিটরিয়াল প্যানেল, একটি রিভিউয়ার প্যানেল এবং একটি মডারেটর প্যানেল। সবার অবৈতনিক নিবেদিত সেবার মাধ্যমে ওয়েব সাইটটি সুচারুভাবে চলছে এবং অসংখ্য লেখিয়ের একেবারেই প্রাথমিক হাতেখড়ি থেকে ধীরে ধীরে পরিণত কবি হিসাবে আত্মপ্রকাশ করার এক বিরল দৃষ্টান্ত গড়ে উঠছে।
এই অনলাইন কবিতার আসরের বিশিষ্ট কবি অনিরুদ্ধ বুলবুল; কবিতার বাইরে সাহিত্যের নানান অঙ্গনে তাঁর বিচরণ। সেসবের বাইরেও এই আসরে তাঁর যে দীর্ঘ অবদান তা অতুলনীয়। নিজের শারীরিক অসুস্থতা সত্ত্বেও আত্মভোলা এই মানুষটি দীর্ঘদিন রাতের পর রাত জেগে, ঘন্টার পর ঘন্টা ব্যয় করে নবীন কবিদের কবিতা পড়ে বিস্তারিত মন্তব্য দিয়ে, টুকিটাকি ভুল-ভ্রান্তি শুধরিয়ে দিয়ে আরও উন্নত কবিতা লেখায় যেভাবে উত্সাহিত করেছেন তার দ্বিতীয় উদাহরণ বিরল। তাছাড়াও এই অনলাইন কর্মকাণ্ডকে বাস্তবে শারীরিক রূপ দেওয়ার চিন্তায় ঢাকাতে কবিতার আড্ডার আয়োজন, আলোর মিছিল পত্রিকার প্রকাশ, নবীন কবিদের কবিতা নিয়ে অনেকগুলি যৌথ কাব্যগ্রন্থের সম্পাদনা এবং প্রকাশ, বাংলা-কবিতার প্রকাশনা অর্ক প্রকাশনী থেকে আসরের অনেক কবির কবিতার বই সম্পাদনা ও প্রকাশ, এ সবই প্রমাণ করে যে তিনি শুধু নিজে কবি হওয়ার চিন্তার ঊর্ধে উঠে অন্যকে কবি বাননোর ক্ষেত্রে বিরল অবদান রেখে যাচ্ছেন। এই আসন্ন সম্মেলনে যোগ্যতার সাথে নেতৃত্বদান তাঁর আর একটি বিরাট অবদান যা হয়তো একদিন বাংলা কবিতার ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। তাঁর এই দুঃসাহসী কাজে আর একজন যোগ্য সহযোগী, আসরের বিশিষ্ঠ কবি কবীর হুমায়ুনের অবদান একটুও ছোট করে দেখার কোন অবকাশ নেই। এই সম্মেলনের প্রস্তাব এবং ঘোষণা থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত নিরলসভাবে কাজ করেছেন পদ-নির্লোভী এই মানুষটি কবি অনিরুদ্ধ বুলবুলের সাথে হাত মিলিয়ে। তা ছাড়াও আসরের প্রতি তাঁর অবদান অনেক বড় ও দীর্ঘ - bangla-kobita.com এর প্রায় জন্মলগ্ন থেকেই মূল এডমিনের সহযোগী এডমিন (এডমিন৩) হিসাবে নিভৃতে কাজ করে যাচ্ছেন। তাই আমি কামনা করছি পরম করুনাময় যেন এই দুজনকেই দীর্ঘ সুস্থ জীবন দান করেন যাতে তাঁদের সেবাতে আমরা আরও বহুদিন ধন্য হতে পারি। তাঁদের জন্যে আমরা খুব কমই যা করতে পারি তা হল তাদেরকে অকৃপণ ধন্যবাদ দেওয়া ও প্রাপ্য সম্মান দেওয়া।
যে কোন বড় কাজ সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত যে কোন ব্যক্তি ভুল-ভ্রান্তি করতেই পারেন এবং অপূর্ণতা কিছু থাকতেই পারে। সেই কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট অন্যান্যদের সে ব্যাপারে মত দেওয়া ও গঠনমূলক সমালোচনারও অধিকার থাকে। সেইভাবেই আমাদের সবার এখন লক্ষ্য হওয়া উচিত নিজ নিজ সাধ্যানুসারে সম্পূরক কাজগুলি করে এই সম্মেলনকে সার্থক করি, দেশ বিদেশ থেকে আগত অতিথিদের সামনে এবং মিডিয়ার সামনে আমাদের সম্মিলিত এবং সুশৃংখল আচরণ প্রদর্শন করি। আর সর্বক্ষেত্রে আমাদের মনে রাখা উচিত এই সম্মেলনটি ঘটতে যাচ্ছে bangla-kobita.com এর ব্যানারে। সুতরাং যেখানেই কোন অমীমাংসিত ব্যাপারের উদ্ভব হবে সেখানেই আমরা bangla-kobita.com এর প্রতিষ্ঠাতা ও মূল এডমিনের পরামর্শ নিতে পারি ও তাঁর সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হিসাবে গ্রহণ করতে দ্বিধা থাকার কোন কারণ দেখি না। আশা করি আমরা অচিরেই কবি আশাফকুর রহমান পল্লবের কাছ থেকে অথবা তাঁর দ্বারা অনুমোদিত সম্মেলন দিবসের কর্মকাণ্ডের একটা চূড়ান্ত রূপ রেখা পাবো। সেই রূপরেখা অনুযায়ী এবারের সম্মেলন সার্থক করে, এর দুর্বল দিকগুলি পর্যালোচনা করে ভবিষ্যতে আমরা আরও নিখুঁত সম্মেলনের প্রতিজ্ঞা ও উদ্দীপনা নিয়ে ঘরে ফিরবো।
অনেকগুলি শ্রদ্ধেয় মুখ, প্রিয় মুখ, হাস্যোজ্জ্বল মুখ আর একবার দেখার জন্যে দিন গুনছি, রাত গুনছি।