চব্বিশে গণ-অভ্যুত্থান ঘটে গেছে। পক্ষ-বিপক্ষের আন্দোলন-প্রতিরোধ মিলিয়ে পরিণতিতে শাসক পরাজিত ও পালিয়ে যায়। রূপকথা নয়, বাস্তব রক্তাক্ত বিপ্লব। সংগ্রামী বাংলায় বাংলা সাহিত্যে রূপকথার কদর কেনো কম, সেটা এবার রক্তের উপলব্ধিতে বুঝে ফেলি।
নির্মোহ বোধ- কবির শক্তি। উদ্দেশ্য, নিজের বোধ বিবেচনায় এ সময়ে কবিদের ভাবনা, কাব্য নিয়ে কিছু লেখা, হতে পারে তা এক তুচ্ছ স্মারক। তুচ্ছ বলি এ কারণে যে, এ আসরের অনেক বোদ্ধা আলোচকের এ বিষয়ে কোনো আলোচনা এখনও চোখে পড়েনি। ভবিষ্যতে আলোচনা প্রকাশ পেলে আন্তরিক আগাম অভিনন্দন রইলো।
সময়কাল বিবেচনায় শেষটা অভ্যুত্থান দিবস ধরা গেলেও শুরুটা কোথায়? কারণ, অভ্যুত্থানের শক্তিগুলো হঠাৎ সঞ্চিত হয়না। অভ্যুত্থানের পেছনে কোনো এক মূল পরিকল্পনাকারী রয়েছেন- তীব্র প্রতিবাদে এ ধরনের আলাপীদের অর্বাচীন বলতে চাই। পরিষ্কার ভাবে মনে হয়েছে, শত নালায় উদ্ভূত স্রোতস্বিনী একক নদীর স্রোতে মিলে শক্তিশালী শাসকের বাঁধ ভেঙে গেছে।
২৫শে জুন ২০২২ হতে প্রায় ২ বছর ৩ মাস মোটামুটি নিয়মিত আসরে মোটামুটি সক্রিয়, আমার পরিচয়ে বলা। দু'একটা আলোচনায় অংশ নিলেও জনপ্রিয় বা পেশাদার আলোচক- কোনটাই নই।
এই আসর, বাংলা ভাষায় কবিদের বৃহত্তম অনলাইন সম্মিলন। সেদিক বিবেচনায় এ জাতির জাতীয় চরিত্র গঠনে অবদান রেখেছে বা রাখছে এমন দাবী অতিরিক্ত শোনালেও আসরটি যে কবিদের অনুভব ও অনুভূতির বিরাট আধার, এ ব্যাপারে শক্ত উপলব্ধি জন্মে। এই সুযোগে ও সুবাদে আসরটির সকল বিষয়ের দায়িত্বপালনকারী কবিদের অশেষ অভিনন্দন প্রাপ্য।
বৈশ্বিক প্রেক্ষিতে বাঙালী এখনও দরিদ্র, তবে উদীয়মান বলে অনুভব হয়। অর্থনৈতিক দারিদ্র্যের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সামাজিক, সাংস্কৃতিক দারিদ্র্য বাস্তবতা হলেও এ জাতির শ্বাশত সংগ্রামী প্রাণসত্তা নি:শেষিত হয়নি - সাম্প্রতিক সফল আন্দোলন-বিপ্লবই তার জ্বলজ্বলে প্রমাণ।
বেশ ভালো মানের জ্যেষ্ঠ কবি ছাড়াও অনেক তরুণ কবিদের কাঙ্ক্ষিত প্রেমকাব্যের পাশাপাশি জাতীয় সমকালীন বিষয়ে ভাবনাগুলো দেখেছি। বটেই, এ দেখা নিজস্ব।
আমার কবিতা পঠন পারিবারিক ঐতিহ্য হলেও নিয়মিত কবিতা লেখার চর্চা ও অভিজ্ঞতা অল্পদিনের।
ক্রান্তিকালীন এ কঠিন, অস্পষ্ট, অনিশ্চিত সময়ে কিছু আলোচনা করাটাও মুশকিলের। তবুও কিছু বলা বা আলোচনা এ সময়ের বোধের দাবী- অপবাদ যাই থাকুক কপালে।
আলোচনার ভিত্তি কবির প্রয়োজন। ভিত্তি কবি হিসেবে প্রিয় কবি, বাংলাদেশের কবি মার্শাল ইফতেখার আহমেদ কে বেছে নিলাম। সংকট উত্তরণের বিষয়ে যেহেতু আলোচনা- বিভিন্ন জাতীয় সংকটে তাঁকে সবচেয়ে সংবেদনশীল, নির্মোহ কবিকন্ঠ মনে হয়েছে। এই বাছাই পক্ষপাতিত্বপূর্ণ এমন সমালোচনায় বলবো, এক শহরে বাস করলেও দেখা হওয়ার বা সামাজিক যোগাযোগের সুযোগ হয়ে ওঠেনি। তাঁর লেখায় বর্তমানের অনেক লেখক, বুদ্ধিজীবীদের মতো তিনি ধর্মীয় বা সংখ্যা লঘু কার্ড তিনি ব্যবহার করেন না; নির্মোহ দেশপ্রেম যার লেখার প্রেরণা বলে মনে হয়েছে। যাঁরা বিশেষ চেতনায় খুব ভালো লেখেন, গণতান্ত্রিক পরিবেশে তাঁরাও গুরুত্বপূর্ণ ও উল্লেখযোগ্য এমন কথা বললেও দোষের নয়।
আলোচনার গল্প- ঘটনা প্রবাহের সাথে সংশ্লিষ্টতা না পেলে প্রাণ হারাবে। ঘটনা প্রবাহের ভিত্তি সূত্র হিসেবে দৈনিক পত্রিকা 'মানবজমিন' অনলাইন সংস্করণ বেছে নিলাম। এই অবরুদ্ধ সময়ে কিছুটা বুকের পাটা এ পত্রিকা দেখিয়েছে বলে মনে হয়।
চূড়ান্ত অভ্যুত্থানের আগের দু-তিন সপ্তাহ বাংলাদেশে বসবাসকারী কবিদের কবিতা প্রকাশের জন্য কঠিনতম সময় গেছে। ইন্টারনেট পুরোপুরি বন্ধ, ব্রডব্যান্ড আংশিক চালু এবং মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ, অত্যন্ত ধীর গতির ইন্টারনেট পরিবেশে কবিদের বোধগুলো ভাতের হাড়িতে শুধু টগবগিয়ে ফুটছে- পরিবেশন করতে না পারায় রাধুনির কি যে কষ্ট!
আমার আলোচনা গল্পের এমন সূচনায় অনেকে আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারেন। এমন ভাবনায়, এখানেই প্রথম পর্বের ইতি।
আগ্রহ জানা গেলে, পরের পর্ব লেখার চেষ্টা করবো।