( পাচার দিবস উপলক্ষে)
মা নাম রেখেছিলেন মনোরমা,
ভালোবেসে ডাকতেন ‘মনা’ ৷
বলতেন “তুই আমার বুকের পাঁজর” ৷৷
খুব সাবধানে আমাকে আগলে রাখতেন ৷
মা ছিলেন আমার বন্ধু, পথপ্রদর্শক ৷৷
চলছিল ভালোই,
ভর্ত্তি হলাম কলেজে প্রথম বর্ষে ৷
আমার পাখা গজালো, উড়তে লাগলাম ৷৷
তখনো আঠার বছর হয় নি আমার,
কিন্তু বসন্ত এসেছে দেহ ও মনে ৷
সামাজিক মাধ্যমে হয়েছে নেশা ৷৷
হঠাৎ একদিন দেখলাম,
ফেস্ বুকে বন্ধুত্বের অনুরোধ ৷
কৌতুহলবসত করলাম সমর্থন ৷৷
তখন বুঝি নি প্রফাইলটা মিথ্যায় ভরা ৷
প্রথম দেখি সৌন্দর্য, পরে করি গুণ বিচার ৷৷
মেয়েরা এই ভুলই করি,
পরের দিন থেকে ‘চ্যাট’ হতে লাগল ৷
ছেলেটা এবার ফোনে গল্প করতো ৷৷
উত্তাল প্রথম যৌবনে ভেসে গেলাম,
প্রকৃতিতে বসন্ত আসুক বা না আসুক৷
দেহে বসন্ত আসবেই ৷৷
রোমাঞ্চ আর রোমান্স,
দেহমনে খেলা করবেই ৷
আমি হারিয়ে গেলাম ৷৷
কলেজ ফাঁকি দিয়ে,
কখনো ভিক্টোরিয়ার বেঞ্চে,
বা গঙ্গা ধারে রোমান্টিক হয়ে যেতাম ৷৷
একদিন সে আমাকে প্রপোজ করলো.
বললো আমাকে ছাড়া বাঁচবে না ৷
আমারও তথৈবচ,
এই শহরে তো বিয়ে করা যাবে না ৷৷
পুলিশ ছুঁলে আঠারো ঘা,
ঠিক হলো ষাব অন্য শহরে ৷
মাস চারেক পর আমার আঠার পূর্ণ হবে,
আমরা আসবো ফিরে এখানে ৷৷
দিনক্ষন হলো ঠিক,
রোজ স্বপ্ন দেখতাম,
লাল বেনারসী পরে,
মাথায় বড় সিন্দুরের টিপ ৷
চলেছি শশুর বাড়ী ৷৷
মনে প্রথম ছাপ হতে পারে ভুল,
এ সব অভিজ্ঞতার ফসল ৷
আমাকে দিল্লীতে নিয়ে গেল,
পৌঁচলাম রাত এগারটায়,
একটা সাদামাটা ঘর, ছোট্টো একটি খাট ৷
পথশ্রম ও মানসিক চিন্তায় ক্লান্ত ৷৷
না খেয়ে শুয়ে পড়লাম,
সকালে উঠে দেখলাম আমি একা,
আমার জীবন যৌবন সব হারিয়ে গেছে ৷
আমার গহনা, টাকা, মোবাইল সহ ব্যাগ উধাও ৷৷
এক প্রৌঢ়া এসে যা বল্লে,
আমার হৃৎপিন্ড বন্ধ হয়ে গেল ৷
চোখের সামনে নিকষ কালো অন্ধকার ৷৷
আমাকে ওখানে বিক্রি হয়েছে করা ৷
ওখান থেকে কোনোদিন বেরোতে পারব না ৷৷
যে লোকটার জন্য ঘর ছাড়লাম,
মায়ের কথা ভুলে গেলাম ৷
সে অন্ধকার জগতে ডুবালো ৷৷
টাকা এ জগতে সবচেয়ে দামী ৷
প্রেম বলে কিছু নেই ৷৷
আমার স্বপ্ন পরিবর্ত্তিত হলো দুঃস্বপ্নে ৷
আমি ‘মনা’ থেকে হয়ে গেলাম ‘রমা’ ৷৷
মায়ের বাথা আমার বুকে অহরহ বাজে ৷
মায়ের মুখ কোনোদিন দেখাতে পারবো না ৷
আমি চিরদিনের জন্য অন্ধাকারে হারিয়ে গেলাম ৷৷
নারীরা এই ভাবে কি যন্ত্রনায় চিরদিন বাঁচবে?