আজ সত্তরের ঘরে এসে মার ডাক মনে পড়ে
মা আমায় ডাকছে সাঁঝে “ খোকা আয় রে ঘরে “
সন্ধ্যা হয়ে গেছে ঘরে আয়
দেখ সন্ধ্যা তারা ঐ দেখা যায়
ঝিঙে ফুল ফুটে হলুদে হলুদ করছে সারা বেড়া
এবার তোকে করতে হবে স্কুলের অনেক পড়া”
মায়ের ডাক শুনেই ছুটে ঘরে আসতাম চলে
এসে দেখি মা বসে আছে সন্ধ্যা প্রদীপ জ্বেলে
মা করতো প্রার্থনা রোজ সন্ধ্যাতে
বসতাম মার কাছেই আসন পেতে
এখনো প্রার্থনা সংগীত গুঞ্জরিত হয় মোর মনে
“তোমার চরণে আছি বসে প্রভূ, অশ্রু বহে নয়নে”
করোসিনের কুপি বাতি জ্বেলে সন্ধ্যারতি শেষ হতে
মাদুর পাতিয়ে দালানে মা বসতো আমায় পড়াতে
দুলে দুলে নামতা পড়া শেষ হলে
দ্বিতীয় ভাগের বানান পড়া চলে
ছেলেবেলা এক প্রহরে শিয়াল ডাকলে ঘুমের পালা
মা যে কত না রকম গল্প জানতো সে না যায় বলা
রামায়ণ মহাভারত ঠাকুরমার ঝুলি ইতিহাসের কথা
রাক্ষস দৈত্যিদানা ব্রহ্মদৈত্যি কবন্ধ, নেই যার মাথা
ভয়ে ভয়ে জড়িয়ে নিয়ে মাকে
কখন ঘুমাতাম জানতো বা কে?
ঘুটে ঘুটে অন্ধকার চারিদিক থমথমে নিস্তব্ধ নিঝুম
মায়ের যত্নে বেশ ভাল ছিলাম চিন্তা ছিল না বেমালুম
সেই মমতাময়ি মা আমার গেল স্বর্গের পথে চলে
এই ভয়াল নিষ্টুর পৃথিবীতে একলা আমায় ফেলে
মার অভাব বোঝে যার মা নেই
চোখের সামনে দেখিনা কিছুই
এরপর শুরু হয় কঠীন জীবন যুদ্ধ বাঁচে থাকার জন্যে
প্রকৃতির নির্বাচনে নির্বাচিত হয়ে সফল হয়েছি জীবনে।।