মনে এলে ছেলেবেলার কথা
প্রানের পরে লাগে বড়ই ব্যথা
আনন্দে কাটে যেত কাল আরাম ছিল না মোটে
সারাদিন ধরে ছোটা ছুটি হৈ চৈ
দশটায় খালিগায়েই স্কুলে যাই
ফিরে এসে বন্ধুদের সঙ্গে মার্বেল ডাঙ্গুলি মাঠে
মায়ের ডাকে বাড়িতে আসি
চার ভাই বোনরা পড়তে বসি
রাত এক পহরে শিয়াল ডাকলে আমাদের ছুটি
একসাথে খাওয়া দেওয়া করে
চারজনেই এক বিছানা পরে
ঠামীর আসা অব্দি খুনশুটি হাসি চলত লুটোপুটি
ভুত পেত্নি দৈত্যিদানাও রাক্ষস
শাকচুন্নি ভুতের রাজা খোক্ষস
গল্প শুনতে শুনতে ঘুম আসতোু ছিল বড় মজা
প্রতি ঋতুতে ভিন্ন ভিন্ন অনুভুতি
নিত্য নুতন অভিজ্ঞতা অগুনতি
ছোট মাটি ও খড়ের ঘরে ছিলাম আমরাই রাজা
সাধারন জীবন ঐশ্বর্য নাই মোটে
প্রকৃতির ঐশ্বর্যেই জীবনটা কাটে
মায়ের স্নেহ, দিদির আদর, বন্ধুদের ভালোবাসা
বর্ষশেষে কালবৈশাখী হঠাৎ ঝাপট
ঝড় নিয়েই আম কুড়ানো চটপট
প্রানে নেই ভয়ডর ভয়াল পরিবেশে করি লড়াই
সাপের সঙ্গে মোদের লাফালাফি
বজ্র বিদ্যুতের নাচনের সঙ্গে নাচি
সাহসের জন্য আমাদের ছিল না কোনো বড়াই
গ্রীষ্মে নিজ গাছের কাঁঠাল ও আম
আর ছিল খেজুর বৈচিকুল ও জাম
ঘরের গরুর দুধ ও ঠামির হাতে পাতা দই স্বর্গসূধা
বৃষ্টিজলে পুকুর মাঠ ভরে গেলে
হরেক রকম মাছের দেখা মেলে
রকমারী পাতুরী, গরম মাছভাজা গন্ধে মিটে ক্ষুধা
ভাদ্র মাসের রোদে কড়া ঝাঁজে
আমরা যেতাম মাছের খোঁজে
এক বালতি পাঁকাল টেংরা কই নিয়ে ফিরতাম ঘরে
শীতকালে খেজুর রসের গন্ধে
মন ভরে ওঠতো স্বাদআনন্দে
খুব ভোরে উঠে মাঠে যেতাম ছুটে শাপলা ডাটা ধরে
খেঁজুর গাছে উঠে রস হাঁড়িতে
ডাটা ফেলে চুষে নাও মুখেতে
নবান্ন পরে সারা শীতকাল পিঠে পুলির উৎসব চলে
নলেন গুড়ের ভাপা ও চন্দ্রপুলি
নকশি ও পোড়া পিঠা ক্ষীরমুরলী
এখন চারদেওয়ালে বন্দি হয়ে কাঁদে আধুনিকতার গোলে।।