কমলদিঘির জল

নিজেকে লুকিয়ে রাখতে ইচ্ছে করে খুব -
ধূপছায়া সন্ধ্যার মেঘকে তাই ডেকে বলি- তোমার অমল ধবল দরজাখানি খুলে দাও,
মিশে যাব তোমার অন্তরগৃহে- বৃষ্টি হয়ে ঝরে ফিরে আসব আবার পৃথিবীর 'পরে।
মেঘ নিঃশঙ্কচিত্তে দ্বিধাহীন বলে ওঠে -
আমার ভুবন এমনিতেই জলে জলে ভরা,
এখানে তোমার স্থান হবে না।

পূর্ণিমার রাত্রির নক্ষত্রমণ্ডলীদের ডেকে বলি-
তোমাদের পাশে আমি নাহয় আর একটি তারা হয়ে মিটিমিটি জ্বলে থাকব, নেবে আমাকে?
রাতের সব তারা সমস্বরে বলে ওঠে -
আমরা এমনিতেই লক্ষ লক্ষ উজ্জ্বল তারা,
তোমার মতো নিষ্প্রভ কাউকে নিয়ে আমাদেরকে অনুজ্জ্বল করব না।

হেমন্ত ভোরে শিশির ঝরে পড়ে দূর্বাঘাসের উপর
সন্তর্পণে শিশিরের কাছে হেঁটে গিয়ে বলি -
আমার কিছু অশ্রু বিন্দু তোমাতে মিশাতে দেবে? পাশে থেকে দুর্বা ঘাস ধমকে বলে ওঠে --
আমার আছে অজস্র শিশির কণা, তোমার আঁখি জলের প্রয়োজন নেই।

নিঝুম রাত্রি প্রহরে চলে যাই চৌধুরীদের কমলদিঘির পাড়ে, রূপালি জোছনা পড়ে ঝিলমিল করছে জল, রাতের নিবিড়ে পদ্মফুলগুলো সুবাস ছড়াচ্ছে চারদিক, আমি জলের কাছে গিয়ে মিনতি করে বলি- তোমার অতলে আমাকে একটু ঠাঁই দেবে?
নিস্তব্ধ দিঘির টলটলে জল অস্ফুট বলে ওঠে-
নেমে এসো, ঠাঁই হবে, তুমিও পদ্মফুল হয়ে
ফুটে থাকবে।

***