কবিতা - ছুটি
একদিন দেখব, আমি আর সংসারে নেই
স্ত্রী, পুত্র, কন্যা ছুটি দিয়েছে আমাকে,
অফিসে যেয়ে দেখব, ওখানেও কাজ নেই,
ওখানেও ছুটি।
যে পথ দিয়ে হেঁটে বাজারে যেতাম প্রতিদিন ,
সে পথে আর হাঁটব না, পথও দিয়েছে ছুটি ,
ছুটি দিয়েছে মুদির দোকানের টিটু...
সব্জির দোকানদার রাসেল..
মসজিদে ইমামের পিছনে দ্বিতীয় সারিতে
আমাকে আর দেখা যাবে না,
ওখানে অন্য কেউ থাকবে সিজদারত-
ফার্মেসিতে অসুস্থ স্ত্রীর ঔষধ কিনতে যেতে হবেনা আর, প্রেসক্রিপশন নিয়ে আমার স্ত্রী নিজেই যাবে তখন, অথবা আমার পুত্র কন্যাগণ।
আমি আর দেখব না নদী, দেখব না নিবিড় সবুজ অরণ্য,
শরতের মেঘ, হাস্নাহেনার ঝাড়, রোদ্দুরের নিঝুম দুপুর, সূর্যাস্তকালীন লাল আভা, সন্ধ্যারাতের ধ্রুবতারা -
সবাই দেবে আমাকে ছুটি।
শোনা হবেনা রবীন্দ্র সংগীত, গীত হবেনা রামপ্রসাদী, আবদুল আলীমের পল্লীগীতি, নজরুলের গজল ও হাছন রাজার গান।
পড়া হবেনা হুমায়ুন আহমেদের 'আমার আছে জল' ও 'একজন মায়াবতী',
ফুটপাতে বইয়ের দোকানে তন্ন তন্ন করে খুঁজব না বিভুতিভূষণের 'চাঁদের পাহাড়' , মানিকের 'চতুষ্কোণ',
তারাশঙ্করের 'কবি' পড়ে মন খারাপ হবেনা আর - 'জীবন এত ছোট ক্যানে'।
কৈশোরের খেলার সাথীদের মনে পড়বে না,
শুনব না আষাঢ়ের ঝুমবৃষ্টি, শ্রাবণের বন্যার জল কলরল ধ্বনি ,
মসজিদে কামাল মুন্সির আযান--
ছোনের চালের কোঠরে খুঁজব না চড়ুই পাখির বাসা।
ছুটি দেবে আমাকে ধনিদহ বিলের ঝিনুক,
আকন্দ ঝোপের টুনটুনি, স্কুল পথের রাঙা ধূলো,
ছুটি দেবে গোল্লাছুট খেলার মাঠ, সবুজ ঘাস, ধানক্ষেত, খড়োকুটো --
ছুটি দেবে সমীর আলীর পাতার বাঁশি।
ছুটি দেবে নবমী চাঁদের রূপালি আলো,
চৈত্রের খরতাপ, হেমন্ত আকাশে রাতের নক্ষত্রবীথি-
কোথাও পাবো না আর ভাঁটফুলের ঘ্রাণ,
যমুনার জল ছুঁয়ে আসবে না শীতল বাতাস,
ভাসব না রাতভর অথৈ জোছনার জলে।
লিখতে হবে না তোমাদের জন্য কবিতা,
শোনাতে হবে না গল্পকথা..
তখন শোনাবে গল্প অন্য কোনো গল্পকার,
তখন আমার ছুটি।
তখন তোমাকেও আমি ছুটি দেব হে পৃথিবী ,
ছুটি দেব মহাকালের বেদনা মর্মর, গ্লানি ও শ্লেষকে-
ছুটি নিয়ে চলে যাব আমিও...
যেখানে যাব সেখানে কেউ নেই..
কিছু নেই..
সেখানে বিরাজিত নীরব হাহাকার আর স্তব্ধ নৈঃশব্দ..
সেখানে কেবল অনন্ত আঁধার।
~ কোয়েল তালুকদার