মিষ্টি মেয়ে,
কি দেবো তোমায়?
এই নিঃস্বতা, রিক্ততা, আর না পাওয়ার ব্যথা আছে হৃদয়ে।
আমার এই পড়ন্ত বেলায় তুমি চাইলে প্রেম;
মনে পড়ে গেল আমার প্রথম ফাল্গুনের কথা__
তোমার লাগি যথা : প্রেমের মালিকা আমি গেঁথেছিলাম।
হৃদয়ে দক্ষিণ হাওয়া লেগেছিলো;
মরমে বিষ-কাটা বিঁধেছিল যখন
__কোথায় ছিলে তুমি তখন!
সেই বসন্তে আমার যে বিথীকা সেজেছিল ফুলে-ফুলে,
সেই সব ফুল শুকিয়ে গেছে অসম্ভব ভুলে-ভুলে।
এখন সেখানে আছে মৃত গাছ গুলি।
মিষ্টি মেয়ে,
তোমার প্রেমে সঞ্জীবনি আছে নাকি?
তোমাকে'ই খুঁজে শুধু অন্ধ হয়েছে নয়ন;
আমি কত দেশে ঘুরেছি না জানি পেতে তোমার দর্শন।
কি যে করুন দুঃখে কেটেছে সেই বৈরাগ্য জীবন : পর্বতে, বনে, পথে অনাহারে
জ্বটা চুলে, কত লোক কত ভাবে দেখেছে আমায়।
কেউ কেউ সাধু ভেবে লুটিয়ে পরেছে পায় __গড়েছে মাঝার।
তার পর দুঃখ-সুখের হাজারো কথা শুনিয়ে সান্তনা নিয়েছে সবাই;
কপাল ঠেকিয়ে পায় পাপের ছাপ দিয়েছে লিপে আমার ললাটে
__আমার সাধনায়।
তোমাকে খুঁজে শুধু তোমাকেই খুঁজে কত কী যে ঘটে গেল অঘটন!
আজ তুমি কী সহজে বলো,"দেখতো চিনতে পার কি না__
আমার পানে একবার চাও দেখি সুজন"।
মিষ্টি মেয়ে,
তুমি দেবতার অভিশাপ খণ্ডাতে জানো নাকি?
আমার রাত্রি গেছে কত
নির্ঘুম চোখে চেয়ে শুধু।
তোমার পায়ের শব্দে কত রাত হয়ে গেছে ভোর!
দন্তাঘাতে অধর, ক্ষতয় ভরেছে অধর,
__ দাগ লেগেছে স্বপ্নের কপলে;
নখরাঘতে ছিরে গেছে বালিশ, তোশক, কাঁথা।
আমার সেই বসন্ত-রোগের ক্ষত স্পষ্ট ফুটে উঠেছে চন্দ্রমার মুখে
__তা দেখেছে সবাই।
শুধু তুমি'ই দেখ নাই : কি নির্দয় ভাবে রাহু পূর্ণচন্দ্রকে গ্রাস করে;
ভয়াবহ অনিশ্চয়তায় ভেঙ্গেছে বীর্য, শুক্রের হুংকারে
__শুকিয়েছে খরস্রোতা নদী।
আমাকে রেখে সেই সব কাল-রাতের হাতে একা সুখে এত কাল কাটালে কি ভাবে?
মায়া চোখে আজ তুমি যে ভাবে তাকাও
এর চেয়ে আমায় মরে যেতে দাও।
মিষ্টি মেয়ে,
তোমার ভরা যৌবন আমার এ মরা নদী জাগাতে পারবে?
মধুর চুম্বনে দ্রাক্ষার রস ঝরবে নাকি?
এই সমস্ত আবেগ,
আর আমি'তো এই সব'ই চেয়েছিলাম।
অথবা কোন কালে হারিয়েছি যা কিছু সেই সব তুমি এনেদিলে।
তুমি আমার হৃদয় সমস্ত দখল করে নাও;
এই পাথরে যেখানে খুশি ফুল ফোটাও
__বসন্ত শুরু হয়ে যাবে।
এখানে মরুভূমিতে চরণ রাখ যদি
বয়ে যাবে অমৃতের নদি।
যেখানে সবুজ রোমশ বনভূমিকে অগ্নি-ধ্বংসলীল প্রাণহিন করেছে
সেইখানে ধ্যানে বস,
__জাগ্রত কর প্রেম।
আমি জানি তুমি পারবে,
তোমার সে ক্ষমতা আছে : তোমারি অগমনে আমার যা ছিল আগে
__তাই হয়ে গেছে।
আমি নেশা-খোর পাগল, মাতাল, বিবাগি- ভবঘুরে,
আমায় তুমি টেনে নাও সংসারে;
উদ্ভ্রান্তির গহিনে, বন-জঙ্গল, পথে, পাহাড়ে মরীচিকা
__কিছু নাই।
মিষ্টি মেয়ে,
তোমার যাদুর স্পর্শে পাথরও গলে?
সে অমৃতে মরুভূমির ফুল-ফুটে নাকি?
মিষ্টি মেয়ে,
এসেছিলে আগুন ঝরা রাতে।
নয়নে নেশা, অধরে পিপাষা, অনন্ত__ আমানীশা ছিল তব কালকবরীতে;
আমার হৃদয় ছুয়ে ছিলে তব কোমল তর হাতে,
এসেছিলে মাধবী রাতে।
কপল চুমে জাগালে আমায় কুসুম তোলা প্রাতে।
সারা রাত্র ঘুমিয়ে ছিলে বুকে
__সে কী নিবির সুখে;
ভোরের আলো বললো আমায় ডেকে,
আমি তোমায় সাজিয়েছিলাম নাকি?
সারা অঙ্গে জোৎস্নার মাখা-মাখি!
তুমি আমায় ছুয়েছিলে বলে
রং লেগেছে ভোরের ফোটা ফুলে;
চমকে উঠে দেখি আমি এ'কী : অমন ঘনকালচুলে আটকে ভুলে জ্বলছে জোনাকি;
দেখি দেখি কানের কাছে তারার দুলের চিহ্ন আছে,
কন্ঠে তব রাতের পাখি করছে কেবল ডাকা-ডাকি।
মিষ্টি মেয়ে,
এই ভোরে যে ফুল ফোটে
সব গুলো তা বেটে-বেটে,
দিব তোমার মিঠা ঠোটে
__রাঙ্গা ফুলের রসে ঢাকি!
চিরকালের তুমি আমি ভালবাসায় মাখামাখি।