নাম সুনয়না হলেও
কেবল চোখ দু'টিই সুন্দর ছিলনা মেয়েটির,
পহেলা বৈশাখে মনে রঙ মাখিয়ে
বেরিয়ে ছিলাম কবিতার খোঁজে;
চশমাটার মোটা কাচে দেখেছিলাম
অনেকগুলো দেশী পুতুলের বিদেশী সাজ
আর সাদাসিধে এক পুতুল- সুনয়না!
হাওয়াকে ফাঁকি দিয়ে সে বেণী গেঁথেছিল চুলে,
নিখুঁত চিত্রকর চোখের পাতার কেশব প্রান্তে
এঁকে দিয়েছিল গাঢ় কালো রং
দু'হাত ভরেছিল মৃদু ঘুঙুর ধ্বনিত খয়েরি রেশমি চুড়ি,
উদয় প্রহরে উদিত সূর্যের প্রভাবে ধরণীর রং
তার গায়ের রঙে মিলেমিশে একাকার।
পলক পড়ছিলনা, দেখছিলাম নয়ন ভরে দেখছিলাম
মোটা কাচ ভেদ করে মনে গেঁথে গিয়েছিল সে রূপ।
হঠাৎ বিনা অনুমতিতে সে অঙ্গনে বৃষ্টির প্রবেশ
ভিজে গায়ে লেপটে গিয়েছিল সাদা পাঞ্জাবিটা,
ভেজা চশমার কাচ ডেকে এনেছিল ঘন কুয়াশা।
সেদিন আর দেখা হয়নি
আরও প্রজ্বলিত হবার ইচ্ছা ছিল সে রূপে
কিন্তু সহসা বৃষ্টি তা নিভিয়ে দিয়েছিল সে দিন
সে দিন আর দেখা হয়নি।
তারপরও বহুবার দেখা হয়েছে পথে প্রান্তরে,
দেখে দেখে আলো-অন্ধকারে ভেবেছি
সুনয়না'রা জন্মায় যুগে যুগে কালে কালে;
তার বাঁকা ঠোটের মৃদু হাসির মায়ায় বাধা পরে
লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চিরা আঁকে মোনালিসা,
রবীন্দ্র নজরুলেরা গাঁথে পাতার পর পাতা সুসজ্জিত শব্দ,
ফরহাদ, মজনু, চণ্ডীদাসরা যুগে যুগে হয় প্রেমিক-
আর দেবদাসদের ঘটে অকাল মৃত্যু।
তার চোখের চাহনিতে বসত করে এক দুর্যোগ
সে দুর্যোগের শুরু আছে, ফলাফল আছে, শেষ নেই!
এ দুর্যোগ কারো উঠন ভরিয়ে দেয় অমূল্য ধনরত্নে,
কারো উঠনে সৃষ্টি করে আগ্নেয়গিরি ও
ক্ষণে ক্ষণে প্রবাহিত লার্ভার চিরস্থায়ী দু'টি ঝরনা
যাক সে সব.........
বৈশাখী সে স্মৃতির বয়স এখন প্রায় চার ছুঁই ছুঁই
বয়স বাড়ছে আমার, বয়স বাড়ছে সুনয়নার
ধীরে ধীরে মোটাতাজা হচ্ছে চশমার কাচ
ক্ষীণদৃষ্টির চোখে যত অস্পষ্ট হচ্ছে সুনয়না
তৃতীয় নয়নে স্পষ্ট হচ্ছে ততো।