মহানবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোনো কবি ছিলেন না এবং তিনি কোনো কবিতার গ্রন্থ নিয়ে পৃথিবীতে আগমন করেন নি। তার কথাবার্তা ছিলো সহজ, সরল, ব্যাপক অর্থবোধক ও সংক্ষিপ্ত।

কুরআন ও হাদীসে অনর্থক, অপ্রয়োজনীয়, মিথ্যা ও অশ্লীল কবিতা সম্পর্কে যেমন নিন্দা করা হয়েছে তেমনি ভালো ও মানবতার উৎকর্ষতায় উৎকৃষ্ট কবিতার প্রশংসা করা হয়েছে। বিশেষ করে একত্ববাদ, ভালো কাজের উৎসাহ, মন্দকাজের পরিণতি সম্পর্কিত কবিতা। কবিতা সম্পর্কে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোনো কোনো কবিতা প্রাজ্ঞতা স্বরূপ। (বুখারী)[1]
হাদীসটির মর্মার্থ হলো- কবিতায় যদি হিকমাহপূর্ণ (প্রজ্ঞাময়) কথা থাকে তাহলে তা কবির জ্ঞানের বহিঃপ্রকাশ ঘটে এবং মানুষ উপকৃত হয়। যেমন : উপদেশ সম্বলিত কবিতাসমূহ। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; ফাতহুল বারী:১০ম খন্ড, হাঃ ৬১৪৫)

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার সহচরদের কাছ থেকে কবিতা আবৃত্তি  শুনতেন এবং মাঝে মাঝে নিজেও কবিতা পাঠ করতেন।[2] তাছাড়া রাসূলুল্লাহ (স.) অনেক সময় এমনভাবে কথা বলতেন যা ছিলো ছন্দোবদ্ধ ও অন্ত্যমিল সম্পন্ন। নিচে আমরা রাসূলুল্লাহর (স.) কথায় কাব্যের প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা করবো। পাঠকদের সুবিধার্থে এখানে মূল আরবীর পরিবর্তে বাংলা উচ্চারণ দেয়া হলো।

১. এক যুদ্ধে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একটি আঙ্গুল রক্তাক্ত হয়েছিল। তখন তিনি সে অঙ্গুলকে লক্ষ্য করে বললেন:
হাল আনতি ইল্লা উসবুয়ু দামিত (দামিতি)
অফী সাবিলিল্লাহি মা লাক্বিত (লাকিতি)
অর্থাৎ- হে অঙ্গুল! তুমি একটি রক্তাক্ত অঙ্গুল ছাড়া আর কিছুই নও, তবে যা কিছু হয়েছে আল্লাহর পথে হয়েছে। (বুখারী ও মুসলিম)[3]

২. নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম খন্দক যুদ্ধের দিন মাটি বহন করেছিলেন। এমনকি তাঁর পেট ধূলায় আচ্ছন্ন হয়ে গিয়েছিল। এ সময় তিনি বলছিলেনঃ

ওয়াল্লাহি লাওলাল্লাহু মাহতাদাইনা/ ওয়ালা তাছদ্দাক্কনা ওয়ালা সল্লাইনা
ফাআনযিলান সাকীনাতান আলাইনা/ ওয়া সাব্বিতিল আক্বদামা ইন লাক্বইনা
ইন্নাল উলা ক্বদ বাগাউ আলাইনা/ ইযা আরাদু ফিতনাতান আবাইনা
অর্থ:
আল্লাহর কসম, যদি আল্লাহ তা‘আলা পথপ্রদর্শন না করতেন, তবে আমরা নিশ্চয়ই হিদায়াত পেতাম না, আমরা সাদাকা দিতাম না এবং সালাতও আদায় করতাম না। সুতরাং হে আল্লাহ! তুমি আমাদের ওপর প্রশান্তি অবতীর্ণ করো। আমরা যখন শত্রুর মুখোমুখি হই, আমাদের অবস্থানে আমাদেরকে সুদৃঢ় রাখো। নিশ্চয়ই প্রথমদল (মক্কা্বাসীরা) আমাদের প্রতি বিদ্রোহ করেছে। যখনই তারা ফিতনার প্রয়াস পেয়েছে তখনই আমরা এড়িয়ে গেছি। (বুখারী)[4]

৩. আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) খন্দকের দিকে বের হলেন, হিম শীতল সকালে আনসার ও মুহাজিররা পরিখা খনন করছেন, আর তাদের এ কাজ করার জন্য তাদের কোন গোলাম ছিল না। যখন তিনি তাদের দেখতে পেলেন যে, তারা কষ্ট এবং ক্ষুধায় আক্রান্ত, তখন বললেন-

আল্লাহুম্মা লা আইশা ইল্লা আইশুল আ-খিরাহ
ফাগফির লিল আনসারি ওয়াল মুহাজিরাহ
অর্থ:‘‘হে আল্লাহ! পরকালের জীবন ছাড়া আর কোন জীবন নেই। তুমি আনসার ও মুহাজিরদেরকে ক্ষমা করো।’’

এটা শোনে সাহাবীরা বলতে লাগলেন-

নাহনুল্লাযিনা বাইয়ায়ু' মুহাম্মাদা (মুহাম্মাদান)
আলাল যিহাদি মা বাক্বিনা আবাদা (আবাদান)
অর্থ: "আমরা ঐ লোক, যারা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাতে জিহাদের জন্য বায়‘আত করেছি, যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা জীবিত থাকি।’’  (বুখারী ও মুসলিম)[5]

৪. আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-এর বৈপিত্রেয় এক ছোট ভাই ছিলো, যাকে আবু উমাইর নামে ডাকা হতো। তার একটি চড়ুই পাখির মতো ছোট পাখি ছিলো যার ঠোঁট ছোট আর মাথা লাল। বলা হয়েছে যে, মাদীনাবাসী একে বুলবুল নামে ডাকে। সে এটা নিয়ে খেলা করতো। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে দেখে ছন্দ মিলিয়ে বলতেন-

ইয়া আবা উমাইর
মা ফা'আলা নুগাইর?
অর্থ: হে আবু উমাইর, তোমার নুগাইর(বুলবুল) কী করছে? (বুখারী) [6]

৫. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফযরের সালাতকে শুভ্র সময়ে (সুবহে সাদিকের সময় অন্ধকার দূরভিত হয়ে পুরোপুরি ফর্সা হওয়া) পড়ার মর্যাদা বলতে গিয়ে বলেন-
আসফিরু বিল ফাজর (ফাজরি)
ফাইন্নাহু আ'জামু লিল আজর (আজরি)
অর্থ: তোমরা ফযরের নামায (ভোরের অন্ধকার) ফর্সা করে আদায় করো। কেননা তাতে অনেক সাওয়াব রয়েছে। (তিরমিযী) [7]

টিকা:
1. বুখারী, শিষ্টাচার অধ্যায়, হা:৫৭৯৩, আবূ দাঊদ: ৫০১০, সহীহুল জামি‘: ২২১৯, তিরমিযী:২৮৪৪,মুসনাদে আহমাদ:২০৬৫১
2.সহীহ মুসলিম:২২৫৫, মিশকাত:৪৭৮৭
3. বুখারী:২৬৪৮, মুসলিম:১৭৯৬, মিশকাত:৪৭৮৮
4.বুখারী ৪১০৪, মুসলিম:১৮০৩, মিশকাত: ৪৭৯২
5.বুখারী: ২৮৩৪, ২৯৬১; মুসলিম:১৮০৫
6. বুখারী:৬১২৯, মিশকাত: ৪৮৮৪
7. তিরমিযী: ১৫৪, নাসাঈ:৫৪৮, আহমাদ: ১৭৩১৮

#Udashkobi