একটা সময় ছিল, যখন এমন কেউ ছিল না যে জীবনে একবার কাব্য চর্চা করে নি। প্রত্যেকেই ছোট্টবেলায় স্বপ্ন দেখত কবি হওয়ার। যখন প্রেমের বয়স আসে তখন সবাই চেষ্টা করে কাব্যিকারে তা প্রকাশ করতে। এক সময় ছোট্ট ছোট্ট ছড়া, কবিতা লিখে ফেলে। আজ সেই সব দিন মনে শুধুই স্মৃতি! ইন্টারনেটের এই যুগে ছেলে-মেয়েরা লেখাপড়া কিংবা খেলাধূলার সময়ই পায় না গেমস, কার্টুন, সামাজিক যোগাযোগের সাইটে সময় দিয়ে। আজ আলোচনা করবো কবিতা বা কাব্য প্রকাশের বিচিত্র সব মাধ্যম নিয়ে।
(০১) পত্রের কাব্যতা
এই সময়ে এসে হয়তো চিঠির কী যে গুরুত্ব ছিল তা বলে বুঝানো যাবে না। জরূরী খবরে বা নিজের অবস্থা লেন-দেনে চিঠির ছিল রমরমা অবস্থা। তখন প্রেম প্রকাশের সুন্দর মাধ্যম ছিল চিঠি-পত্র! তাতে লেখক বা প্রেরক সুন্দর সুন্দর ছন্দকথা, মনের কথা কবিতা আকারে লিখত। এমন কোনো প্রেমপত্র ছিল না যাতে কোনো কবিতাংশ বা ছন্দকথা থাকত না। যেমন কেউ লিখত- হাতের লেখা ভালো না, কলমে নাই কালি। তোমায় ছাড়া বন্ধু আমার মনটা কেমন খালি। আমার এক পরিচিত কলমবন্ধু ছিল যে ভালোভাবে গুছিয়ে কথা বলতে পারত না, কিন্তু চিঠি লিখত এত সুন্দর আর কাব্যিকতায় যে মনে হতো কারো কাছ থেকে চুরি করে লিখেছে। অথচ সে নিজেই তা লিখেছে।
(০২) হাত-পাখায় কাব্যচর্চা
গ্রাম-বাংলায় তালগাছের পাতা, খেজুরের পাতা বা অন্যান্য সকল হাতপাখা বিশেষ করে কাপড়ের পাখাগুলোতে দুই বা চার লাইনের ছড়া লিখা থাকত। বিশেষ কোনো বাণী বা মনের আকুতি মিশানো ছন্দকথা।
(০৩) রুমালে কাব্যচর্চা
সৌখিনতার এক নাম ছিল রুমালের ব্যবহার (এখন তো এটা মদন মদন টাইপ)। সেই বিশেষ রকম রুমালে ছিল কবিতার ব্যবহার। কখনো বিখ্যাত কোনো কবির, কখনো নিজেই লিখে তা ফুটিয়ে তুলত রুমালে।
(০৪) দেয়াল বাঁধাই বা পোস্টারে কাব্যচর্চা
কোনো জন্মদিবসের তারিখ লিখনে, মুত্যুদিবসের তারিখ লিখনে, বিবাহের তারিখ লিখনে এবং যে কোনো ওয়ালমেটে চারদিকে সুন্দর ফুলের ডিজাইন করে মাঝখানে কবিতা লেখা থাকত। এখনো হয়তো কারো কারো বাড়িতে থাকতে পারে। আমার এক খালার বিয়ের তারিখ বাঁধাইয়ে খালুজীর সুন্দর কবিতা লেখা আছে।
কখনো বালিশের কভারে, কখনো নক্শীকাথায়, কখনো চেয়ারের কভারেও কবিতাংশ লেখা থাকত। তবে এ ক্ষেত্রে ছড়া বা কাব্য চর্চার চেয়ে দুই একটি শব্দের ব্যবহার বেশি হতো। যেমন- ভূল না আমায়, মনে রেখো চিরদিন ..... ইত্যাদি।