রাজশাহীর পদ্মার পাড়ে, বটবৃক্ষের তলে দীর্ঘ সময় ধরে বসে আছি - - -
সুনশান নীরবতা, নদীর তীরে ভেসে থাকা প্রমোদ তরী শূন্যতায় দীর্ঘশ্বাস ফেলছে।
নদী বয়ে যাচ্ছে আপন সুরে...
বেদনার টনটনে ছোঁয়া কেউ বোঝে, না বোঝে না, জানেও না ;শাশ্বত সত্য!
এই যে জনশূন্য পথ-প্রান্তর, এখানে যেমন ঠিক সেই বিনোদপুর- কাজলা- তালাইমারী হয়ে কুমারপাড়া, বড়কুঠি, দরগাপাড়া, সীমান্ত নোঙর হয়ে পাড় ঘেঁষা কত শত দোকান, কফিশপ, বিনোদন কেন্দ্র - সব এখন শশ্মানের মাঠ!!
ঝোঁপ - ঝাড় জঙ্গলে এই তো কিছুদিন আগেও গিজগিজ করতো বাবুই-শালিকের ঝাঁক!
এদের বিচরণে ভয়ার্ত আবাসীরা আশ্রয় গেড়েছিল লোকালয়ে!
কিন্তু সময়ের ফের বড়োই কঠিন!!
তাই নিজ নিজ আবাস ফিরে পেয়ে বড়োই খুশি তারা ,তাই তো দিনেও মুখ ভেংচি করে ডাকছে হুককি হুয়া... !!
চৈত্র কি আর ভাদ্র কী,বর্ষা ; কার্তিক মাস সারা বছর ধরে লেগে থাকতো এই বাঁধ ঘেঁষা প্রান্তরে!
আর এসবকে ঘিরে চটপটি, ফুসকা, বাদাম, নানা ধরণের ফলসহ কতোই না খাবারের পসরা বসতো।
শত শত মানুষের দোকান ছিল , বেচাকেনা চলতো সেই কাক ডাকা ভোর থেকে গভীর রাত অবধি!
হোটেল ছিলো, ছিলো কফি শপ!
নগরীর আয়েসি হোটেলে এখন মাছি উড়ে!
এই যে পদ্মার পাড়, এখন কিন্তু ঠিকঠাক নেই!! ভূতুড়ে পরিবেশ, সাঁঝ নামলেই!
শত শত প্রমোদ তরীও শূন্যতায় ভাসছে নদীতে। নদীর ওপারে চরেও নেই উৎপাত-উপদ্রুব!
ঘন কাশবন কেঁপে কেঁপে ওঠে না আজ!!
নেই গৃহবধূ সখিনার নরম হাতের গরম গরম পেঁয়াজু, পঙ্গু আতিকের গরম গরম বাদাম ভাজা!
এই যে পদ্মার পাড় ঘেঁষে এত শত আয়োজন, তাতে শত শত পরিবারের জীবন - জীবিকা ছিল নিত্যদিনের!
আজ সব বন্ধ, এ মানুষগুলো কেমন আছেন এখন? সংসার-ই বা চলছে কীভাবে তাদের? কেউ কি খোঁজ নিয়েছি!!
ওখানে খোলা মঞ্চ আছে।আছে বসার গ্যালারি। পাশাপাশি - কাছাকাছি বসে উষ্ণ সানিগ্ধ্যে অনুভূতির নির্যাস নিতে নিতে গান শোনার
ক্ষণ ছিলো , হতো কত আয়োজন!
রাত অবধি...
এসবকে ঘিরে উন্মত্ত ক্ষণ এখন নেই!!
কেউ কী ভেবেছিলো, এমন দশা হবে কখনো?
অবাধে আবাদ, পরের জমিতে চাষাবাদ - সবই বন্ধ!! বন্ধ হয়েছে 'কতিপয় ফার্মেসি', তে নানা নামের উত্তেজক ' আবাল ', তা পাড়া-মহল্লায়, বিক্রি হতো লাখো টাকায় নিত্যদিন!
হয়ত, এমনই হয়!
জীবনের কোন কিছুই তো নয় অক্ষয়!!
সীমান্ত দেখা যায় নদীর ওপারে! সীমা রেখায় কাঁটাতারের বেড়া!
সীমা অতিক্রম না করে যেনো কেউ, তাই তো বেড়া!!
কতকাল আর বৃক্ষ স্মৃতির শহর নিস্তব্ধ রবে, জানা নেই!
জানি শুধু, অবাধ অনাচার কখনোই ভালো ফল বয়ে আনে না!
বিনা তারে সুর তোলে না,
অতীত হাঁটে, বসে থাকে না,
অন্ধ-বধির বিনা স্বার্থে কেউ সাজে না!
নৈসর্গিক প্রকৃতি আজ বড়োই শান্ত!!সূখানুভূতির আস্বাদন পেতে এখনই সময়!
কোলহল নেই, নেই মাতম!
নেই শিউলি ঝরে পড়ার নিত্যদিনের খবর!!!!