মা ! পারলে একবার এখানে ঘুরে যেও ,
আমার ছুটি নেই ।
গতকাল তোমার চিঠি পেলাম-
দাদারা নাকি আলাদা হয়েছে ?
বড় ব্যবসায়ী !
তা হবে নাই বা কেন ?
দাদাকে কত আগলে মানুষ করতে চেয়েছিলে ,
সর্বস্ব ঢেলে দিয়েছো ওর পিছনে ।
ও তো মানুষই হয়েছে মা , এই তো তোমার পরম প্রাপ্তি ,
তুমি সৌভাগ্যবতী যে দাদার মতো একটা ছেলে
গর্ভে ধারণ করেছিলে ।
তুমি জানিয়েছো -
পুরনো সেই বেড়ার বাড়ীতে এখনো খড়ের ফুটো ছাউনি দিয়ে জল পড়ে ।
দাদার দালান বাড়ীতে ঠাঁই হয়নি ।
শরীরটা এখন আর দাঁড়াতে পারে না ,
লাঠি ভর দিয়ে চলতে হয় ।
দুবেলা দুটো ফুটিয়ে খাওয়ার জন্য
এখনো কি গ্রাম ঘুরে চাল কুড়োও মা !
লোকের নানা কটুকথা সহ্য করো এখনো ?
ভেবেছিলাম তোমাকে আমার এখানে নিয়ে আসবো ,
এই শেষ সময়ে অন্তত মায়ের শুশ্রুষা করি ,
তা যে আর হল না মা ,
এখানে বিপর্যায়ের 'পরে বিপর্যায় আসে ।
তুমি তবু ঐ কুঁড়ে ঘরেই ভালো আছো
ইচ্ছেমতো দুটো খেতে পারছো , বেড়াতে পারছো ,
মা ! তোমার মেয়ের শরীরের সেই জৌলুস আর নেই ,
একমুঠো ভাতও যে আজ আর মুখে ওঠে না ।
দুধ-ভাতের কোল হারিয়ে ফেলেছি সেই কোন ছোটবেলায় ...
সেদিন তোমার কথা খুউব মনে পড়ছিল-
মনে আছে , তুমি আমাকে বলতে তুই বড় ডাক্তার হবি !
জানি তোমার খুব ইচ্ছে ছিল আমাকে মানুষ করে গড়ে তোলার ।
পড়াশুনায়ও ভালো ছিলাম ,
যেবার ক্লাসে ফার্স্ট হয়েছিলাম
তুমি যে কি খুশি হয়েছিলে...
তখন আমার ক্লাস নাইন
সবে শাড়ি পড়তে শিখেছি ,
তখন বাইরের জগত আমার কাছে অচেনা ,
ভবিষ্যৎ বুঝিনি , বর্তমান বুঝিনি
তিনজনের সংসারে অভাব নিত্যসঙ্গী
তাই চলে এসেছিলাম অন্ধকারে ,
একটু আলো খুঁজতে ।
এখন রোগী হয়েই পড়ে রইলাম যে মা ,
কেউ আমাকে ছুঁয়েই দেখে না ।
ডাক্তার বলেছে যতদিন বাঁচবে ওষুধ খেয়ে যেতে হবে ।
এখন মনে হয় এর থেকে একটু বিষ খেয়ে নিলে -
চিরমুক্তি
সমস্ত পৃথিবীটাকে একবার লাথি মারতে ইচ্ছে করে ।
আমার ঘরে বাবার একটা ছবি টাঙিয়ে রেখেছিলাম ,
দীর্ঘদিনের অযত্নে এখন ছবিটা অস্পষ্ট ,
আমার শরীরে মতোই ।
প্রতিটা রাত কি যে অসহ্য যন্ত্রনায় কাটে -
আমাদের দিন-রাত-স্বপ্ন-ইচ্ছে বলে কিছুই নেই গো মা ,
থা ক তে নেই ।
বেঁচে আছি এভাবেই ।
তোমাকে দেখার জন্য আজ মনটা ব্যাকুল হয়ে ওঠে ,
মাঝে মাঝে চিঠি পাঠিও ,
তুমি ওখানেই ভালো আছো মা ,
ওখানেই ভালো থেকো ।