আজ থেকে বছর পাঁচেক আগের কথা।
আমি একটা টিউশনি করাতাম। বেতন খুব বেশি নয়,তবে আমার জন্য যথেষ্ট । এমন নয় যে টিউশনি না করালে আমার চলছে না । তবুও শুধুমাত্র প্রসাধনী আর অন্য সব আনুষঙ্গিক খরচের জন্য বাড়ি থেকে টাকা নিতে ইচ্ছে করে না জন্যই টিউশনিটা করানো ।
আমার আম্মুকে আমি সর্বদা স্বদেশ মাতার উপাধিখানা দেই। আম্মুকে আমি অনেক ভালোবাসি।
এবার আব্বুর কথায় আসি । আমার আব্বু এমন একজন মানুষ যিনি নিজের জন্য কখনো ভাবেন না । হয়তো বগল রিপু করা শার্টটা পরেই বাইরে বের হচ্ছেন তবুও নতুন একটা শার্ট কিনবেন না। এমনটা কিন্তু নয় যে তার সামর্থ্য নেই। ঐ যে বললাম "নিজের জন্য কখনো ভাবেন না" । অথচ আমাদের ব্যবহৃত জিনিসগুলো ঠিক আছে কিনা ,আরো নতুন কিছু লাগবে কিনা এসব ব্যাপারে তার সবসময়ই নজরদারী থাকে। তো যাই হোক, সকালে খেয়াল করলাম আব্বুর পরার স্যান্ডেলটা ছিঁড়ে গেছে । আব্বু বাইরে বের হলে অবশ্য জুতো পরে বের হন। তবে বাসার আশেপাশে কোন কাজ থাকলে ঐ প্রায় ছেঁড়া স্যান্ডেলটাই পরেন। স্যান্ডেলটা ছেঁড়া দেখে খারাপ লাগল। ঐ মাসে আমার টিউশন থেকে পাওয়া টাকা টা খরচ করেছিলাম না।আর আব্বু-আম্মুকে কখনো নিজে থেকে কিছু দেয়াও হয়ে ওঠেনি। তাই ভাবলাম বেতনের টাকা দিয়ে আব্বুকে একজোড়া স্যান্ডেল কিনে দিই। ভার্সিটি থেকে ফেরার পথে বাজার থেকে আব্বুর পায়ের মাপের স্যান্ডেল কিনলাম। বাসায় ফিরে ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলাম না আব্বুকে কিভাবে সেটা দিবো। আব্বুকে বললাম,"আব্বু দেখো তো স্যান্ডেল জোড়া তোমার পায়ে লাগে কিনা।" আব্বু মনে হয় প্রথমে বুঝতে পারেননি। পরে যখন বুঝলেন তখন একটু হেসে দিলেন। আব্বুর চোখে ছিল পরম খুশির একটা ঝিলিক আব্বু যখন আমার দাদা দাদিকে কিছু দেন তখন তাদের চোখে মুখেও একইরকম আনন্দ দেখেছি। যদিও এটা তাঁদের জন্য প্রত্যাশিত কারন তারা বৃদ্ধ হয়েছেন তাদের সন্তান তো তাদেরকে দেবেই। কিন্তু আমার কাছ থেকে কিছু পেলে সেটা অবশ্যই আমার বাবার জন্য অপ্রত্যাশিত হবে। সেটা যত ছোট জিনিসই হোক না কেন। আর অপ্রত্যাশিত সুখের আনন্দ একটু বেশিই। আব্বুর মুখে সেদিন যে হাসিটা দেখেছিলাম তা দেখে খুব খুব ভালো লেগেছিলো। প্রিয়জনদের মুখের এই অকৃত্রিম অমলিন হাসিটার জন্য পৃথিবীর সবকিছু ত্যাগ করা যায় ।
আজ আমি আল্লাহর অশেষ কৃপায় খুব ভালো আছি। আমার আব্বু-আম্মুও উপর ওয়ালার রহমতে ভালো আছেন। আমি আমার আব্বু-আম্মুর দীর্ঘায়ু কামনা করছি। এবং আপনাদের সকলের কাছে আমার আব্বু-আম্মুর জন্য দোয়া চাইছি।