দাবদাহের কষাঘাতে অলস দ্বি-প্রহর,
ঝলসে গেছে গাছের পাতা, খড়ের চালা ঘর,
আঙিনাতে তপ্ত হাওয়ায়,
কাতর চড়ুই উড়ে বেড়ায়,
পিপাসাতে ধুঁকতে থাকা 'ফটিক জল' এর স্বর,
ডিম পাড়তে কোকিলা যায় শালিক পাখির ঘর।
হঠাৎ যেন ঈশান কোণে ধূম্র জটাজাল,
স্তব্ধ হলো বাতাস, বুঝি জাগে মহাকাল,
ধীরে ধীরে বাড়ে বহর,
যতদূর তায় চলে ঠাহর,
মহোল্লাসে জমছে নিকষ বজ্রমেঘের পাল,
ঈশান কোনে কালবোশেখী বোনে ইন্দ্রজাল।
আকাশ জুড়ে ঘনিয়ে এলো অমিত জলধর,
অমানিশার অকাল বোধন সন্ধ্যা ঘনঘোর,
দধীচির ওই অস্থিবাণে,
দিগ্বিদিকে বজ্র হানে,
মহারুদ্রের ঘোর নির্ঘোষে কাঁপে থরোথর,
জগৎ জুড়ে নেমে এলো প্রলয় ভয়ঙ্কর।
বিষম রোষে তান্ডব নাচে জটাধারী নটরাজ,
কাঁপে সন্ত্রাসে তার অঙ্কুশে, হেরি তার রণ-সাজ,
জগৎ জুড়ে যত প্রাণ আছে,
করজোড়ে শুধু প্রার্থনা যাঁচে,
গাছ সারি সারি নতমস্তকে,আবেদন করে আজ,
প্রলয় রোষে ডম্বরু হাতে কালভৈরব নটরাজ।
গুরু গর্জনে ঝরে পড়ে শেষে অবিরাম বারিধারা,
দগ্ধ পৃথিবী সরস প্লাবনে মুক্ত পাগলপারা,
ছিঁড়ে ক্রমশ মেঘের জটা,
প্রবেশ করে আলোর ছটা,
ধীরে ধীরে নীল হল অম্বর, জীবন বাঁধনহারা,
রুক্ষ জগৎ সজীব, সতেজ, থমকেছে জলধারা।
কালবৈশাখী এত যে ভয়াল, তবু সে অভিপ্রেত,
তার পদভারে থাকে বরাভয়, সবুজের সংকেত,
যদিও বা দেখি প্রবল প্রতাপ,
চারিদিকে রাখে ধ্বংসের ছাপ,
সে বিষাদ মোরা ভুলে যাই দেখে, ঘন সবুজের ক্ষেত,
কালবৈশাখী দিয়ে যায় বর, সে চির অভিপ্রেত।