এই যে এইদিকে একটু দেখবেন ?
এই যে আমি- আমি মুক্তিযুদ্ধে একজন লাঞ্ছিতা জননীর সন্তান ।
আমার জন্ম হয়েছিল ঠিক এইদিনে ,
তারিখটি ছিল ১৬ ডিসেম্বর ,১৯৭১ ।
কি চমকে উঠলেন ?
আমিও চমকে উঠেছিলাম এমন করেই
-যেদিন আমার পিতার নাম লিখতে বলা হয়েছিল ।
সেইদিন প্রথম মা আমার মুখের দিকে তাকাতে পারেননি ।
আমার মা –আমার থেকে মাত্র ১৬ বছরের বড় ।
নয় মাসের অমানুষিক অত্যাচার আর অপমানে
জন্ম মাত্রই রাগে দুঃখে ক্ষোভে মেরে ফেলতে চেয়েছিল আমাকে।
কিন্তু জাতির পিতা বলেছিলেন –
সমস্ত যুদ্ধশিশুর পিতার নামের জায়গায় আমার নাম লিখে দিও ।
বলেছিলেন- লিখে দিও শেখ মুজিবুর রহমান ,আজ থেকে আমি ওদের পিতা ।
ভয়াল ১৫ই আগস্টে আমি আবার পিতৃহারা হলাম ।
মা সমাজচ্যুত হলেন নীরবে – এই সমাজ - এই আপনি আমার
মায়ের ভার বইতে পারলেন না ।
ভুলে যেতে চাইলেন , ভুলে গেলেনও ।
রাজাকার আর দেশদ্রোহীর গাড়িতে
জাতীয় পতাকা পতপত করে উড়তে থাকল ।
আর সইতে পারলোনা – মা আমার ।
চলে গেলেন – আমি একা এই পৃথিবীর এক কোনে - টিকে আছি ।
সত্যিকরে বুকে হাত দিয়ে বলুন তো –
আমাকে দেখে কি ঘৃণা হচ্ছে ?
এই সভা কি অপবিত্র হয়ে গেলো?
–ভাবছেন –এ আবার কি জ্বালা এসে জুটলো?
আমি জানি আপনারা তাই ভাবছেন ।
আমি এই সমাজের এই দেশের একজন স্বীকৃত জারজ সন্তান !
যুদ্ধশিশু নামদিয়ে ....
জাতিরজনক আমাদেরকে যে সন্মান দিতে চেয়েছিলেন ,
এই সমাজ, এই দেশ তার যোগ্য নয় ।
কোথায় থাকে সেই যুদ্ধশিশুরা ?
যুদ্ধ শিশু ,নাকি জারজ সন্তান ?
পৃথিবীর কোন গুহায় নিজেকে আড়াল করে বড় হয়েছেন ?
কেউ কি তার খবর আর রাখে ?
-\রাখে না , রাখতে চায় না ।
তবুও এই বাংলাদেশকে যারা ভালবাসেন,
ভাল থাকুন আপনারা –
ভাল থাকুক আপনাদের রেখে যাওয়া প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ।
শুধু একটা অনুরোধ – ওদেরকে বলবেন এই দেশটি অর্জনে
দুই লক্ষ মা বোনের সম্ভ্রম আর ৩০ লক্ষ মানুষ জীবন দিয়েছিল,
বলবেন মৃত বা জীবিত মুক্তিযোদ্ধারা এদেশের সুর্যসন্তান , শ্রেষ্ঠ সন্তান ।
বুলবুল আহমেদ
১৪ ডিসেম্বর ২০১৭
সিউল ,দঃ কোরিয়া ।