পুনরায় উজিরকে নির্জনতা ত্যাগ করার অনুরোধ:—

সবাই বললো, হে বিজ্ঞজন ফাঁক সন্ধানকারী
এই ধোঁকাবাজি আমাদের প্রতি জুলুম হইলো ভারী ।
মহব্বতের কয়েদী আমরা ধোঁকা আর কতদিন  
বিরহে আমরা হৃদয়শূন্য, একদম প্রাণহীন ।
আপনি যখন প্রথম হতেই নিলেন কবুল করে
শেষাবধি স্নেহ দৃষ্টি বহাল রাখুন মোদের পরে ।
নিঃস্বতা আর অক্ষমতার সবকিছু অবগত
আপনি জানেন সেই ঔষধ হৃদয়ে ব্যথার ক্ষত ।

ততটাই বোঝা দিও জন্তুরে যতটা সইতে পারে
নরম লোককে কাজ দিও তার হিম্মত অনুসারে ।
প্রতিটি পাখির খানাদানা তার আন্দাজ মত হয়
প্রতিটি পাখির খোরাক ডুমুর, কভু সম্ভব নয় ।
দুগ্ধপোষ্য শিশুটিকে যদি রুটি খেতে দাও তবে
মনে রেখো ওই শিশুর রুটির কারণে মরণ হবে ।
অবশ্য যাবে যখন শিশুর মুখে দাঁতগুলো উঠি
আপনা-আপনি অনুসন্ধান করিয়া লইবে রুটি ।
যে পাখির আজো ডানা গজায়নি সে যদি উড়তে যায়
তবে নিশ্চয় কোন বিড়ালের গ্রাস হয়ে যাবে হায় ।

কিন্তু যখন তাহার পালক বাহির হইয়া যায়
তখন নিজেই কারো শিস ছাড়া উড়িবে বিনাদ্বিধায় ।
সবাই বললো, আপনার বাণী প্রশান্তি দিয়েছিল
যেন আমাদের কর্ণকুহরে সতেজতা ঢেলে দিল ।
মধুর বাণীতে আমাদের কান সতর্ক হয়ে যায়
শুষ্ক ভূমিই পরিনত হয় সুবিশাল দরিয়ায় ।
আপনার মাটি আসমান হতে উত্তম মম জ্ঞানে
বরকতে যেন আকাশপাতাল আলোকিত সবখানে ।
আপনাকে ছাড়া আমাদের ওই আকাশ অন্ধকার
হে চাঁদ, আলোতে এ ভূমন্ডল আঁধার হবে না আর ।

মর্ত্যে থেকেও আসমান হতে ঊর্ধ্বে উঠিয়া যাই
আপনি ব্যতীত আকাশে গেলেও হতাম তুচ্ছ তাই ।
শুধু বাহ্যিক উচ্চতা রয় ওই আকাশের কাছে
তবে প্রকৃত উচ্চতা সে-তো পবিত্র রুহে আছে ।
এই বাহ্যিক উচ্চতা হয় দেহ সম্পর্কিত
শব্দের কোন মর্যাদা নাই, অর্থই প্রকৃত ।
খোদার কসম, আমাদের প্রতি একটু দৃষ্টি দিয়া
শান্ত করেন, শোকের সাগর উঠেছে যে উথলিয়া ।


(মাওলানা জালালুদ্দিন রুমি রহ.-এর অমর গ্রন্থ মসনবী শরীফ থেকে অনুদিত)