উজির কতৃক স্বীয় ভক্তদের নিবৃত্তিকরণ:—
উজির বললো, খবরদার হে, ভক্ত ও শ্রোতাগন
আমার মুখের উপদেশ যারা কানে শোনো সারাক্ষণ ।
তোমরা তুচ্ছ যাহেরী কর্ণে তুলা লাগাইয়া নাও
বাতেনী চোখের সম্মুখ হতে পর্দা সরিয়ে দাও ।
যাহেরী কর্ণ তুলা দিয়ে রাখে বাতেনী কর্ণটাকে
যাহেরী বধির না হলে বাতেনী কর্ণ বধির থাকে ।
কর্ণবিহীন, চিন্তাশক্তি বিহীন হইয়া যাবে
তবে ‘ইরজিঈ’ আহবান তুমি কর্ণে শুনতে পাবে ।
যতক্ষণ থাকো জাগ্রত হালে কথাবার্তায় রত
স্বপ্নে বলার তত্ত্ব কিরূপে হবে তুমি অবগত ।
আমাদের কথা কাজকাম সব এ জড়জগত ভরে
কিন্তু বাতেনী সফর হইলো আসমানের উপরে ।
মাটির তৈরি এই অনুভূতি শুধু স্থল জুড়ে থাকে
মুসা রূপী রুহ জন্ম হতেই সাগরে কদম রাখে ।
এ দেহ ভ্রমণ জড়জগতের উপরেই শুধু জানে
এবং রুহের বাতেনী ভ্রমণ সাগরের মাঝখানে ।
যেহেতু সারাটা জীবন বাহিত হয়েছে শুষ্ক পথে
কখনো পাহাড়ে, কখনো বা মাঠে কখনো মরুর রথে ।
তাহলে বাতেনী ভ্রমণের আবে-হায়াত কোথায় পাবে
বাতেনী সাগরে তরঙ্গ ভেদ করিয়া কিরূপে যাবে ?
মাটির লহরী বুদ্ধি, ধারণা, চিন্তা ও চাওয়া-পাওয়া
পানির লহরী বিলুপ্তি আর মারেফাতে ডুবে যাওয়া ।
যতদিন রবে জড়জগতের চিন্তা হৃদয়পুরে
ততদিন তুমি বাতেনী জগত হইতে থাকবে দূরে ।
যতদিন এই দুনিয়ার মদে মত্ত থাকবে ধ্যান
সেই পেয়ালার থেকে বহু দূরে করবে অবস্থান ।(১৪শ)
এই বাহ্যিক কথাবার্তা তো ধুলোবালি জেনে রাখো
হৃদয়ের প্রতি সতর্ক হয়ে কদিন নিরব থাকো ।
(মাওলানা জালালুদ্দিন রুমি রহ.-এর অমর গ্রন্থ মসনবী শরীফ থেকে অনুদিত)