খৃষ্টানদেরকে গোমরাহ করার জন্য আরেক ষড়যন্ত্র:—

যখন উজির ফেতনা-ফাসাদ সৃষ্টি করার তরে
ঈসা নবীর সে ধর্ম বিধান দেয় বিকৃত করে ।
আরম্ভ করে তখন সে এক অভিনব প্রতারণা
ওয়াজ-নাসীহা পরিত্যাগ করে ধরলো নির্জনতা ।
বিরহ আগুন জ্বলিয়া উঠলো অনুসারীদের মনে
দেড় দুই মাস এ অবস্থায় কাটাইলো নির্জনে ।
তাহার বিরহী হাল জানিবার জন্য ব্যাকুল তারা
রুচিসম্মত কথা শুনিবার জন্য পাগলপারা ।
সকলে তাহাকে খোশামোদ আর মিনতি করতে এলো
সে-তো নির্জনে রিয়াজত করে যেন কুঁজো হয়ে গেলো ।

লোকেরা বলল, আলোহীন মোরা আপনার আলো ছাড়া
আমরা অন্ধ লাঠি ছাড়া আজ তেমনি সর্বহারা ।
খোদার কসম, বলি আপনার বুজুর্গির দোহাই
আপনার ওই সান্নিধ্যের আঁচলে দেন গো ঠাঁই ।
যেন মোরা শিশু, আপনি ধাইমা চেয়েছি একটু মায়া
মাথার উপর বিস্তৃত থাক অনুগ্রহের ছায়া ।
উজির বললো, প্রিয়রা আমি তো দূরে নয় একরতি
কিন্তু আমার বাহিরে আসার নাই কোন অনুমতি ।
পরিশেষে সেই বারো নেতা এলো উজিরের কাছে চলে
তাহারা সবাই কাকুতি-মিনতি করিয়া তখন বলে ।

ওহে বুজুর্গ, দূর্ভাগা মোরা আপনার যাতনায়
আপনাকে ছাড়া অশান্ত মনে প্রশান্তি নাহি পায় ।
আপনি বাহানা করছেন নাকি আমরা সব হতাশ
মনের জ্বালায় শীতল হইয়া আসতেছে নিঃশ্বাস ।
আপনার ওই মিষ্টি কথায় মন বড় পেরেশান
পান করিয়াছি জ্ঞানের দুগ্ধ কিঞ্চিৎ পরিমাণ ।
আমাদের পর এমন জুলুম অন্তরে নাহি সয়
দয়া করে আর, আজ নয় কাল এমন বাহানা নয় ।
আপনি কি চান, এই লোকগুলো হৃদয়ের যাতনায়
আপনার আলো ছাড়া একেবারে বঞ্চিত থেকে যায়?

সকলের প্রাণ এমন করিয়া করতেছে ছটফট
তৃষিত মৎস্য— নহরের বাধ খুলে দেন ঝটপট ।
আপনার মতো এ যুগে আর তো কেউ নাই এই ভবে
করুণা করিয়া বান্দাগনের আরজি শুনুন তবে ।


(মাওলানা জালালুদ্দিন রুমি রহ.-এর অমর গ্রন্থ মসনবী শরীফ থেকে অনুদিত)