পথ চলার ধরন ভিন্ন, প্রকৃত পথ ভিন্ন নয়:—
ঈসা নবীর যে এক রঙ ছিল উজির জানে না তাই
ঈসা নবীর সে বাতেনী জালায় প্রভাবিত হয় নাই ।
এ পরিষ্কার জালার প্রভাবে রঙিন কাপড় শত
পরিচ্ছন্ন, এক রং হয়ে যাইতো আলোর মতো ।
ওই এক রঙে বিতৃষ্ণা কভু লাগে না মনের কাছ
বরং উহার উপমা— যেমন মিষ্টি পানির মাছ ।
এই স্থলভাগ যদিও হাজার রঙে পুরো লালে লাল
শুষ্ক ভূমির সহিত মাছের বিরোধ যে চিরকাল ।
মৎস্যই বা কি আর সুবিশাল সাগর বা কোন্ ছার
তাহাদের সাথে তুলনা হইতে পারে না কি আল্লা'র ।
শতসহস্র মৎস্য এবং সমুদ্র আছে যত
মহান দাতার সামনে সবার সেজদায় শির নত ।
তার রহমের কিঞ্চিৎ বারি বর্ষে সাগর তরে
যাহার দরুন সাগরের বুকে মুক্তা ছড়িয়ে পড়ে ।
তাহার দানের কয়েক সূর্য উদয় হইতে দেখে
মেঘ আর ওই সাগর তখন দানশীল হওয়া শেখে ।
তার করুণার কয়েক সূর্য হইলে দীপ্তিমান
তার কল্যাণে আকাশে সূর্য হলো ঘূর্ণায়মান ।
তাহার জ্ঞানের দীপ্তি পানি ও মাটির উপর পড়ে
তাতে এই ভূমি বীজ গ্রহণের শিক্ষাটা লাভ করে ।
আত্মসাৎ যে করে না এ ভূমি কত আমানতদার
উহাতে যাহাই বপন করিবে হুবহু পাইবে তার ।
জমিনের এই আমানতদারী তাহারই অনুগ্রহে
ইনসাফেরই সূর্য তাহার মাথার উপর রহে ।
নব বসন্ত আল্লাহ পাকের হুকুমের অনুগত
আদেশ না পেলে জমিনে বৃক্ষ করে না বহির্গত ।
পরম দয়ালু জড় জমিনকে নির্দেশ করে দেন
আর তার মাঝে বীজ আমানত সোপর্দ করিলেন ।
ওই জড় ভূমি মেহেরবানীতে জীবন্ত হলে হায়
কহরে খোদার প্রকাশস্থল শীতকাল চলে যায় ।
ভূমি আল্লাহর মেহেরবানীতে নমনীয় হয়ে গেলো
অনিন্দ্য হতে সৃষ্ট বস্তু অনিন্দ্য সোভা পেলো ।
মেহেরবানীর দরিয়া যখন ওঠে তার উথলিয়া
নিষ্প্রাণ ওই পাথরকে দেয় জ্ঞানবান বানাইয়া ।
অন্তরে ওই আবেগ সহ্য করার ক্ষমতা নাই
কাহাকে বলবো, নাই সে কর্ণ, চুপ করে থাকি তাই ।
একিন পূর্ণ কানের সুবাদে চক্ষু খুলিয়া যায়
কঠিন পাথর পরিনত হয় মুল্যবান হীরায় ।
‘স্পর্শমণির’ আল্লাহর কাছে কোন দাম আছে নাকি
মুজিযা প্রদান কারীর সামনে জাদুবল সব ফাঁকি ।
প্রশংসা কালে স্বীয় সত্তার সব ফানা করে দিও
স্বীয় সত্তাকে হাজির রাখিয়া প্রশংসা দূষণীয় ।
সেই সত্তার সামনে নিজেকে করিও নিষ্পেষিত
নিজের সত্তা অন্ধ ও কালো আবরণে বেষ্টিত ।
অন্ধ না হলে ওই সত্তার তাপে হতো বিগলিত
সূর্যের তাপ অনুভব করে মন হতো শিহরিত ।
যদি সে শোকের কালো আবরণে বেষ্টিত না-ই হত
তবে দুনিয়ায় জমাট হইলো কেন বরফের মতো ?
(মাওলানা জালালুদ্দিন রুমি রহ.-এর অমর গ্রন্থ মসনবী শরীফ থেকে অনুদিত)