উজির কতৃক ইঞ্জিলের বিধান পরিবর্তন:—

সে প্রতি নেতার নামে একেকটি গ্রন্থ রচনা করে
প্রতি গ্রন্থের বিধানাবলীতে ভিন্নতা দেয় ভরে ।
ধরন ভিন্ন প্রতি গ্রন্থের আদেশাবলীর মাঝে
এক গ্রন্থের সাথে আরেকটা গ্রন্থ মিলছে না যে ।

এক পুস্তকে, অনশনব্রত, রিয়াজত পদ্ধতি
ক্ষমা পাওয়া আর আল্লাহ্ পাওয়ার ইহা ছাড়া নাই গতি ।
এক পুস্তকে, কোন উপকার নাই রিয়াজত দ্বারা
এই পথে কভু মুক্তি পাবে না দান-খয়রাত ছাড়া ।
এক পুস্তকে, অনশনব্রত, দান-খয়রাতে অতি
তোমার এবং মাবুদের মাঝে শিরকের মতো ক্ষতি ।
এক পুস্তকে, আল্লাহ্ ভরসা, আল্লাহ'তে থেকো রাজি
ভরসা বিহীন দান-খয়রাত সবই ফেরেববাজি ।
এক পুস্তকে, করো ইবাদত বন্দেগী নিশ্চয়
শুধু ভরসায় নবীদের পরে দোষারোপ করা হয় ।

এক পুস্তকে, শরিয়ত সে-তো  আমলের লাগি নহে
শুধু আমাদের অক্ষমতার বর্ণনা তাতে রহে ।
যেন হই মোরা স্বীয় ব্যর্থতা অনুমানে সক্ষম
সবকিছু চলে আল্লাহ্ পাকের কুদরতে হরদম ।
এক পুস্তকে, দৃষ্টি দিও না অক্ষমতায় কভু
কাজ করে যাও, না হয় নারাজ হবেন মহান প্রভু ।
নিজ সামর্থ্য এ দেহে শক্তি দেখো যা তাহার দান
এই শক্তির দাতা তো আমার, আল্লাহ্ শক্তিমান ।
এক পুস্তকে, যবর কদর উভয় পথই ভুল
এদুটোর প্রতি খেয়াল করা প্রতিমার সমতুল ।

এক পুস্তকে, শক্তি এবং অপারগতার ভুল
খেয়ালে আসবে, আবার নিজেই হয়ে যাবে নির্মুল ।
উহা বর্জন করার চেষ্টা নফসানী বিবেচিত
মনের ইচ্ছে অনুযায়ী কাজে হইবে অপমানিত ।
এক পুস্তকে, চিন্তাভাবনা লাগাও উহাকে কাজে
চিন্তাভাবনা ত্যাগ করে ফল পাবে না সাধন মাঝে ।
তুমি যখনই বুদ্ধি জ্ঞানকে মন হতে ঝরে নিলে
যেন মাঝরাতে মধু মিলনের প্রদীপ নিভিয়ে দিলে ।
এক পুস্তকে, প্রদীপ নিভাও, কোন ভয় নাই তবে
একটি জ্ঞানের বিনিময়ে শত জ্ঞানের প্রাপ্তি হবে ।

জ্ঞানের প্রদীপ নিভিয়েই হবে আত্মার উন্নতি
তোমার ধৈর্য বাড়াবে তোমার প্রেমের পথের গতি ।
যে ব্যক্তি করে নিজ ইচ্ছায় দুনিয়াকে বর্জন
সম্মুখে এই দুনিয়াকে আরো বেশি পাবে সেই জন ।
এক পুস্তকে, আল্লাহ তা'য়ালা তোমাকে যাহাই দেন
তোমার জন্য আল্লাহ্ যে-সব হালাল করিয়াছেন ।
সহজ যা পাও গ্রহণ করিও, করে অন্তর খোশ
বর্জন করে বিপদে পড়ো না, নিও না মাথায় দোষ ।
আবার বলেছে, স্বীয় প্রবৃত্তি করো হে অতিক্রম
তোমার মেজাজে গৃহীত বস্তু, কল্যাণ তাতে কম ।

কোন এক পথ সহজ হলেই, হালাল হবার নয়
প্রত্যেকেরই একেক ধর্ম প্রাণাধিক প্রিয় হয় ।
যদি কোন কিছু সহজ হওয়াই, দলিল হয় তা ঠিক
আল্লাহর অলি হতো প্রত্যেক ইহুদী ও মুশরিক ।
আবার বলেছে, সত্যকে সদা সহজই অনুভবে
তবে হৃদয়ের জীবনীশক্তি, রুহের খোরাক হবে ।
মনঃপূত কিছু উপভোগ করা সাময়িক সুখ অতি
তবে নিঃশেষ হওয়ার পরে না থাকে কোন পরিনতি ।
অনুতাপ ছাড়া আর কোন ফল প্রাপ্ত হবে না ভাই
এই ব্যবসায় লোকসান ছাড়া আর কোন লাভ নাই ।

পরিণামে উহা সহজপ্রাপ্য প্রমান কি আর রয়
সহজ বস্তু পরিশেষে নাম দুষ্প্রাপ্যই হয় ।
বোঝা দরকার কঠিন এবং সহজের পরিনতি
দৃষ্টি মেলিয়া দেখিও ওদের ভবিষ্যতের প্রতি ।
আবার বলেছে, করো হে বন্ধু, পীরের অন্বেষণ
স্বীয় গুণে কভু করা যায় না রে পরিণাম দর্শন ।
যে সম্প্রদায় পরিণাম দেখে নিজের বুদ্ধিবলে
অবশেষে তারা আবদ্ধ হয় লাঞ্ছনা— শৃঙ্খলে ।
শেষ পরিনতি দর্শন করা সহজ বিষয় নয়
নতুবা দ্বীনের ব্যাপারে কিরূপে এতো মতভেদ হয় । (১২শ)

আবার বলেছে, তুমি তো নিজেই উস্তাদ নিশ্চয়
তুমিই করিবে জীবনে সকল উস্তাদ পরিচয় ।
অভিজ্ঞতায় কাজ করে যাও যতটুকু আছে জ্ঞান
অন্যের খোঁজে শুধু শুধু তুমি হবে কেন হয়রান ।
যেটা ভালো বোঝো নিজ অন্তরে, জ্ঞানের দৃষ্টিতে
সেটার উপর আমল না করে যেওনা গো বিপরীতে ।
আবার বলেছে, জগতের সব বস্তুই তুমি, তাই
আমাদের মাঝে ভিন্ন হওয়ার কোন অবকাশ নাই ।
প্রথম এবং শেষ অবস্থা কারোরই ভিন্ন না
যে ব্যক্তি দুই গণ্য করিবে তার তরে লাঞ্ছনা ।

আবার বলেছে, একশো বস্তু এক হওয়া সম্ভব
এটাতো হইবে শুধু উন্মাদ রোগীদের অনুভব !
তার প্রত্যেক বাক্যই দেখো, বিরোধী পরস্পর
এই বাক্যটি ভুল প্রমাণিত ওই বাক্যের পর ।
আচ্ছা বলোতো, বিষ আর চিনি কি করিয়া এক হবে
উভয়ের ক্রিয়া, আকার সেটাও ভিন্ন ভিন্ন যবে ।
এমনি প্রতিটি বস্তুর মাঝে ভিন্নতা দেখে নাও
দিন ও রাত্রি, কাটা ও ফুল এ-সবে দৃষ্টি দাও ।
যাবৎ বিষ ও চিনির জগত না হতে পারবে পার
তাবৎ তুমিও তৌহিদ ঘ্রাণ পারবে না শুঁকিবার ।

তৌহিদ নূরে পূর্ণ করেছি এই মসনবী আমি
তোমার খেয়াল করো হে সালেক এবার ঊর্ধ্বগামী ।
এভাবেই এই বারটি গ্রন্থ ইহুদি ভন্ড এসে
খৃষ্টানদের ওই দুশমন রচনা করলো শেষে ।


(মাওলানা জালালুদ্দিন রুমি রহ.-এর অমর গ্রন্থ মসনবী শরীফ থেকে অনুদিত)