বিজ্ঞ খৃষ্টানগন উজিরের ধোঁকা বুঝতে পারা:—
বেদ্বীন উজির সাজে ধর্মের নসীহা প্রদানকারী
সত্যের সাথে গোমরাহী কথা মিশ্রিত করে ভারি ।
কিন্তু যাহারা বিচারশক্তি প্রাপ্ত হইয়াছেন
মিষ্টি কথার সাথে তিক্ততা অনুভব করিতেন ।
ধর্মের সব সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম কথা বলে আলবত
কিন্তু তা ছিল, বিষ মিশ্রিত মিশ্রির শরবত ।
সাবধান এই রকম কথার ধোঁকায় পড়িও না যে
হাজারো খারাবি গুপ্ত রয়েছে কেননা ইহার মাঝে ।
অসৎ লোকের কথাবার্তাও অসৎ নিন্দনীয়
মৃত লোক যাহা বলবে তাহাও নিষ্প্রাণ, নিস্ক্রিয় ।
মানুষের কথা মানুষের এক অংশ হইয়া থাকে
নিঃসন্দেহে রুটিই বলবো রুটির টুকরোটাকে ।
ওহে শ্রোতা শোন, হজরত আলী আমাদের ফরমান
‘মূর্খের কথা, ময়লার স্তূপে শ্যামল ফুলবাগান ।’
এই ধরনের ঘাসের উপর যদি কেহ বসে, তবে
তাহার বসা যে, নাপাকী এবং ময়লা জায়গা হবে ।
নাপাকী ধুইয়া পাক করা চাই এমন অবস্থায়
যাহাতে তাহার ফরজ নামাজ বাতিল না হয়ে যায় । (১১শ)
উজির বলতো, আল্লাহর পথে তৎপর থাকা চাই
কিন্তু তাহার কথার মধ্যে দৃঢ়তার লেশ নাই ।
উজিরের কথা বাহ্যিকভাবে মনে হয় খুব ভালো
উহার ঘষাতে হাত, জামা যেন আলকাতরায় কালো ।
প্রকাশ্যে দেখো, আগুনকে লাল কালো হয় তার ক্রিয়া
সবকিছুকেই ছাই করে দেয় এ আগুন জ্বালাইয়া ।
বিদ্যুৎ-ও এই রকম দেখতে আলো চমকায় অতি
স্বভাব তাহার হরন করিয়া নেয় চক্ষের জ্যোতি ।
উজিরের কথা মূর্খ লোকের ছিল যে গলার হার
বিজ্ঞ লোকেরা ধোঁকাবাজটারে পেরেছিল চিনিবার ।
এভাবেই ছয় বছর থাকলো বাদশা হইতে দূরে
খৃষ্টানদের আশ্রয়স্থল হইয়া এখন ঘুরে ।
খৃষ্টানগন সবকিছু তাকে ন্যস্ত করিয়া দিলো
তার আদেশের সামনে জীবন দিতেও তৈরি ছিল ।
(মাওলানা জালালুদ্দিন রুমি রহ.-এর অমর গ্রন্থ মসনবী শরীফ থেকে অনুদিত)