লায়লার সহিত খলিফার সাক্ষাতের কাহিনী:—

যুগের খলিফা লায়লার কাছে জিজ্ঞাসা করে বলে
তুমিই কি সেই লায়লা যাহার প্রেমেতে মজনু জ্বলে ।
তুমি তো অন্য নারীদের চেয়ে বেশি সুন্দরী নও
লায়লা বলিলো, চুপ করো ওহে, তুমি কি মজনু হও ? (১হা)

মজনুর চোখ যদি আপনার চক্ষু হইয়া যেত
উভয় জগত আপনার চোখে, তুচ্ছ দেখতে পেত ।
আপনি তো স্বীয় অনুভূতিশীল, মজনু যে নিস্ক্রিয়
প্রেমের এ পথে সক্রিয়ভাব জাগরণ দূষণীয় ।
দুনিয়ার কাজে জাগ্রত আর আল্লা'তে নিদ্রিত
তার জাগরণ, নিদ্রার চেয়ে অধিক কলঙ্কিত ।
যদি অন্তর আল্লাহর প্রেমে নাই পারে জাগিবার
তবে হবে এই জাগ্রত হাল আমাদের কারাগার ।
যদি অন্তর বাজে খেয়ালের পদাঘাতে পিষে যায়
এই দুনিয়ার লাভ-লোকসান, ক্ষয়ক্ষতি চিন্তায় ।

এত ব্যস্ততা ঘেরা অন্তরে পবিত্র নূর নাই
উর্ধ্ব জগতে উড়াল দেওয়ার পথও পেলো না তাই ।
নিদ্রিত লোক প্রতি খেয়ালেই আল্লাহর পথ ধরে
চিন্তাধারাও তাহার সহিত কথোপকথন করে ।
ওই নিদ্রা না যাহাতে খারাপ চিন্তাভাবনা থাকে
চেতনা প্রাপ্ত হলে যে চিন্তা আযাবে ফালায় তাকে ।
কারোর স্বপ্নে শয়তান এলো, সুশ্রী রূপের সাথ
কাম তাড়নায় তাহার সঙ্গে ঘটালো বীর্যপাত ।
বংশের বীজ অনুপযুক্ত জায়গায় ফেলে হায়
চেতনা ফিরলে স্বপ্ন মূর্তি অদৃশ্য হয়ে যায় ।

তখন দেখলো, স্নায়ু দুর্বল, শরীর নাপাক তার
আফসোস, সেই সুশ্রী রূপের দেখা মিললো না আর ।
একটি পাখি যে পাখনা মেলিয়া আকাশে উড়িয়া যায়
আর তার ছায়া পাখির মতই মাটিতেই দৌড়ায় ।
কোন আহমক শিকারী যদিও ছায়ার পিছনে ছোটে
যত দৌড়াক শূন্যতা ছাড়া কিছুই না হাতে জোটে ।
খবর নাই যে, লক্ষ্য কেবল পাখির ছায়ার পরে
ছায়ার আসল বস্তু কোথায়, দেখে না নজর করে ।
সে ছায়ার দিকে তীর ছুড়িয়াই, আশায় ছটফটায়
এই সন্ধানে তূণীরটি তীর শুন্য হইয়া যায় ।

হায়াতের তূণী খালি হয়ে গেলে জীবনটা শেষ ভাই
ছায়া শিকারের লক্ষ্যে ছুটিয়া কপাল পুড়িয়া ছাই ।


(মাওলানা জালালুদ্দিন রুমি রহ.-এর অমর গ্রন্থ মসনবী শরীফ থেকে অনুদিত)
মাত্রাবৃত্ত ছন্দ: ৬+৬+৬+২