দৃষ্টান্তসহ আরেফদের (অলি-আউলিয়ার) অবস্থার বর্ণনা:—

জাগিয়া থেকেও আরেফের হাল এরকম হয়ে যায়
বিশ্বাস করো, ‘তারা ঘুমন্ত’ বলেছেন আল্লা'য় ।
তারা লেখকের কলমের ন্যায়, নাই কোন পিছুটান
মহান রবের আনুগত্যেই সদা ঘূর্ণায়মান ।
লেখার সময় হস্তের প্রতি যাদের চোখ না পড়ে
তাহারা লেখার কাজটা নিছক কলমের মনে করে ।
আরেফগন যে, আল্লা'তে কত বিভোর ও তন্ময়
নিদ্রা চাপিলে মানুষ যেমনি সব বিস্মৃত হয় ।

এক অনুপম প্রান্তরে গিয়ে রুহ'রা উচ্ছসিত
সেখানে তাদের রুহ আর দেহ শান্ত, আনন্দিত ।
থাকে না ব্যস্ত লোভ আর মোহে দুনিয়ার কামনায়
যেমনি পাখিরা মুক্ত হইলে উড়ে পালাইয়া যায় ।
আবার যখন দেহ-পিঞ্জরে রুহ আটকিয়া যায়
জরিয়ে পড়ে সে নানা অভিযোগে হাকিমের মামলায় ।
হে প্রভু, পাখির বুলি শুনাইয়া রুহ ফাঁদে আটকাও ।
কাউকে বিচারে, কাউকে রাজ্যে কাজে লাগাইয়া দাও ।
প্রভাতের আলো পূব দিগন্তে প্রকাশ হওয়ার পরে
সোনালী রঙের শকুন তখন ডানা বিস্তার করে ।

অবশেষে এই দিবা-সিপাহির সোনালী ঢালের জেদ
করিয়া ফেলে সে রজনী দেবীর মাথামুণ্ডুই ছেদ ।
তখন প্রতিটি রুহ আসক্ত এ-দেহের আঙিনায়
প্রত্যেক দেহ রুহ দ্বারা ফের পূর্ণ হইয়া যায় ।
প্রভাত স্রষ্টা সকল জীবকে ইসরাফিলের ন্যায়
অনুপম সেই জগত হইতে, জাগায় রে পুনরায় ।
মুক্তিপ্রাপ্ত রুহ'কে আবার পিঞ্জরে ভরা সারা
প্রত্যেক দেহ পূর্ণ হইলো পুনরায় রুহ দ্বারা ।
রুহের ঘোড়াকে লাগাম মুক্ত করা হলো যেন তাই
‘নিদ্রা হইলো মরন তুল্য’ ভাবার্থ এইটাই ।

কিন্তু আবার দিনের বেলায় ফিরাইতে হবে তাকে
তাইতো পায়ের মধ্যে লম্বা রশি বান্ধিয়া রাখে ।
দিনের বেলায় উহাকে যেন গো উদ্যান হতে সোজা
টানিয়া তাহার উপরে চাপানো যায় পার্থিব বোঝা ।
উত্তম হত যদি আসহাবে কাহফের ন্যায় করে
হেফাজত করা হতো এই রুহ অনুপম প্রান্তরে ।
কিংবা নুহের কিশতীর ন্যায় উঠাইয়া অন্তত ।
এটুকু সময় যদি গো সেখানে হেফাজতে রাখা হতো ।
তাহলে হৃদয়, চক্ষু, কর্ণ, ইন্দিয় সংসার
হুঁশ থাকতেই এ তুফান হতে পেয়ে যেতো নিস্তার ।

বহু আসহাবে কাহাফ পাইবে করো প্রিয় সন্ধান
তোমার সামনে এ যুগেও আছে ধরায় বর্তমান ।
প্রাণের বন্ধু গানের আসরে জমায় দারুণ ভাব
চক্ষু কর্ণে মোহর লাগানো, কাছে থাকায় কি লাভ?
আচ্ছা বলো তো, চোখের উপর পর্দা পড়েছে কেন
চক্ষু কর্ণে পড়িয়াছে আহা রবের মোহর যেন ।


(মাওলানা জালালুদ্দিন রুমি রহ.-এর অমর গ্রন্থ মসনবী শরীফ থেকে অনুদিত)
মাত্রাবৃত্ত ছন্দ: ৬+৬+৬+২