প্রিয়তমেষু,
তোমাকে মনে হয় এই জীবনে আর কবিতা শুনানো হবে না!
কতই না কবিতা লিখি তোমাকে নিয়ে,
গোলমেলে দিনগুলো জলের মতো গড়িয়ে যায় কেমন,
তোমাকে শুনাবার অবসর দেয়না মোটেও।
তারপরও সেদিন দৈবক্রমে তোমাকে পেয়েছিলাম,
কিছু সময়ের জন্য, পড়ন্ত বিকেলে।
সাধ করে খুলে বসেছিলাম সাম্প্রতিক লেখা একটি কবিতা,
এবং অবশ্যই তোমাকে নিয়ে লেখা।
তুমিও চোখে মুখে আগ্রহ নিয়ে শুনতে চেয়েছিলে।
দু’লাইনও পড়তে পারিনি, তোমার ফোন বেজে উঠলো,
মুখে দুঃখিত হাসি দিয়ে, তর্জনি আর বৃদ্ধাংগুলি চেপে
আমার কাছ থেকে সময় চেয়ে নিলে।
আমি কবিতা থামিয়ে তোমার কথোপকথন শুনি।
তোমার কাপড় সেলাইয়ের কারিগর,
তৈরী হতে থাকা নতুন জামার ডিজাইন নিয়ে
টানা আট মিনিট তের সেকেন্ড কথা বললে।
আমি ধৈর্যের প্রতিমূর্তি হয়ে অপেক্ষা করি।
আমি আগ্রহ নিয়ে আবার কবিতা পড়া শুরু করি,
নিবিড় ভালোবাসাময় পংতিগুলো তোমাকে স্পর্শ করার আগেই
হোয়াটস অ্যাপে কি যেন বার্তা আসে তোমার।
হাত দিয়ে আমাকে থামিয়ে তুমি দেখো
তোমার বন্ধুদের সুখী সুখী চেহারার অবকাশ যাপনের ছবি,
তাদের কোলাহল মুখর আড্ডা আর আনন্দের চিত্র।
আমাকেও দেখাও কিছু তার উচ্ছ্বাস নিয়ে।
আমি দম হারাই না, তোমাকে যে শুনাতে হবে
রাত জেগে লেখা গভীর অনুভূতির কবিতা।
আবার বিব্রত বোধকে পাশ কাটিয়ে,
পড়তে শুরু করি একটি জবরদস্ত চরণ,
মনে মনে আশা করি তোমার অপার মুগ্ধতা।
কিন্তু সে আশায় গুড়ে বালি পড়ে,
তোমার বেরসিক মুঠোফোন আবার চিৎকার করে উঠে।
চোখের ইশারায় আমাকে থামিয়ে ফোন ধরো তুমি।
কোনো এক আন্টির কল, পরিবার পরিজন আর
কাছে দূরের আত্মীয়দের নিয়ে কথা বললে তুমি,
উনিশ মিনিট তেত্রিশ সেকেন্ড মাত্র।
আমি ধৈর্যের পরীক্ষা দিয়ে তোমার সব আত্মীয়দের
নাম ধাম শুনতে শুনতে অপেক্ষা করি।
এবার আমি কুশলী, আমার কবিতা বাদ দিয়ে
জীবনানন্দ, আল মাহমুদ আর শামসুর রাহমানে ভরসা করি,
মাঝখানে শহীদ কাদরিকে ধরে রুদ্রে এসে থামি।
তোমার উসখুস ভাব আমাকে বিচলিত করে।
এবার তবে কবিতা বাদ দিয়ে রবীন্দ্রনাথ আর
ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো কে নিয়ে কিছু বলি।
তোমার চেহারা দেখে কুইনান খাওয়া রোগীর মতো লাগে।
আমি আবারও বিব্রত হয়ে থেমে যাই,
আমার কবিতার মলিন খাতাটি আলগোছে লুকাই।
তুমি বললে আমি নাকি খুব ভালো লিখি,
জবাবে আমি বিনীত হই, ধন্যবাদ দেই।
আর মনে মনে ভাবি, সে দিন কি কখনো আসবে,
যেদিন আমার কবিতা তোমার সব কিছু ভুলিয়ে দিবে।
আমি জানি সেই দিন কোনো দিন আসবেনা,
তবু আশায় থাকি,
কারন, প্রেমিকরা বোকা হয়,
আর যে প্রেমিক কবি, সে হয় মহা বোকা।