খুব ছোটবেলার স্মৃতিচারণ মোটেও স্বল্পআয়াসসাধ্য নয় ।বিক্ষিপ্ত স্মৃতির খন্ড সাজাতে গিয়ে প্রায়শই ব্যর্থ হই ।যে ঘটনা বেশ ভালভাবেই মনে আছে বলে ধারণা হয় ‚ঘরোয়া আলাপে সেটা বলে ফেলে দেখি ওই ঘটনার সময় পৃথিবীতে আসিনি ।গল্প শুনেশুনে মস্তিষ্ক তাতে কখন বাস্তবতার রঙ দিয়েছে আমারি অজান্তে l
ছেলেবেলায় পরিচিত ভূবন ছিল বাড়ির উঠান;বাগান তারপর ছোট্ট একটি বাজার ।বাজারের পাশে বড়ো বড়ো কয়েকটি পুকুর ।লোকে বলে গুপীধরের পুকুর ।বিকেলে জেদ করতাম গুপীধারে যাব ।ছোট্ট ঠোঁট ফুলিয়ে ছলছলছলনেত্র জেদ ।আমি যাবই যাব ওই দুর গুপীধরপারে ।কোনকোন দিন চাচাতো ভাই বোনদের সাথে গুপীধার ভ্রমণ হতো সার্থক-সম্ভব ।পুকুর পারের থেকে দূরে তখনকার রহস্যময় সন্ধ্যালোকে দেখতাম আরও দূরের ছমছমে আমবাগান ।একেবারে তরুছায়ামসীমাখা বলা যায় ।কী আছে সেই বাগানে ;তারপর আরও দূরে !অনেক অনেক দুরে ।জিজ্ঞেস করলে নাঈমা আপা বলতো ওইদিকে শুধু জঙ্গল ভরা ভূত ।এই একটি কথা ভূত!দুই তিন বত্সরের শিশুর অর্থহীন কত কী কেন কীভাবে সব বিলীন হয় ভূতে ।
বড় বড় চোখ জিজ্ঞাসা ‚কৌতুহল নিয়ে তিন বছরের জীবন দিয়ে দ্যাখে সে তাই ওই ওপারের ভূতের জঙ্গল ।ওদিকে এখন যেতে মানা ।বড় হলে একদিন যেতেই হবে!
এতো গেল তিন বছরের আমি'র পশ্চিমপারের অবাধ সীমানার কথা ।
পুবপার আরও অনেক ছোট ।কয়েকশ গজ গেলে ছোট্ট গ্রাম শেষে আমের ঘন জঙ্গল ।সোনাহারের বাগান ।পরিচারিকা জোসনা আপার কোলে আমার ভ্রমণ সেই বাগানের অনেক আগেই শেষ হয়ে যেত ।আরও এগুলো আবার সেই ভূত! উত্তর দিকে গৌড়ের সোনামসজিদ ঘুরে এসেছি ।দুই পাশে ঘন আমের বনের পাশে রাস্তা; মাঝেমধ্যে ছোটছোট বাজার ।ওইসব ঘন আমবনে আর কৌতুহল নয় ।জানি তো ভূত ।
দক্ষিণে ঢাকা যাওয়া হল কিছুদিন পর ।এত দূর? পৃথিবীর বিশালতায় মুগ্ধ হয়েছিলাম কিনা জানিনা তবে অসংখ্য ভূতের সাথে সাথে অজস্র মানুষ আছে বুঝেছিলাম ।
বুঝে খুবই ভরসা পেয়েছিলাম সন্দেহ নেই ।
তবে পশ্চিম ও পূর্ব দিকে সন্দেহ অনন্ত ।
উত্তর দক্ষিণে সরু একটি জগৎ মানুষদের; শিশুমনের আবিষ্কৃত এই জগৎ তখন রহস্যহীন ‚সহজগম্য আর এর বাইরে সমস্ত জগৎময় রহস্য ।
ছেলেবেলার ভৌগলিক ধারণা ঘুচে গেছে; ভুতগুলোসব কোথায় চলে গেছে কবে
কিন্ত এখন পুরো জগৎ টাই একটি রহস্য ।
জানি একজীবনে সমস্তটাই প্রায় অগম্য হবে ।সোনালী মেঘের পর মেঘ আমার!বাগানের পর অন্তহীণ বাগান ....