পেয়ারার ঘর
খাতুনে জান্নাত

প্রতিদিন কাজ করতে করতে ক্ষয়ে আসে নখ, আঙুল বিতান।
কোমর মচকে যায়,
ব্যথার বাগাড় দেহ পিঞ্জর।
হাঁড়িপাতিল,  প্লেটবাটি, ঘর মোছা, কাপড় কাচন
এক কাজ ঘর হরেক
কেউ কেউ উপরি কাজ মাঙে!

মায়ের আদুরে তনয়া পেয়ারা বেগম,
স্বামীরও
স্বামী কোনোদিন চুমু আঁকেনি কপালে
শুধু এক মাধুর্য মেখে ধরে রেখেছে একটি জীবন
পেয়ারার ভুল দেখে হেসে ফেলে
পেয়ারার ছায়া দেখে কেঁপে উঠে
আহা পঞ্চাশ পেরিয়ে তুই আরও মায়াবী হলি ক্যান?

স্বামীর চোখে চোখ রেখে পান সাজায়
আহ্লাদী জিহ্বে মোছে ঠোঁটে লাগা চুন
এখানে এসেই ক্ষোভ জল হয়ে যায়
এখানেই ব্যথার গলন
এখানে এসেই মনের বাগানে ফোটে জোড়া কাশফুল।
কামিনী সুবাসে সাজা ঘরে
স্বামীর হাতে গোল্ড লিফ
ধনীর তনয় নয় মন যেন ডাহা মহারাজ।

পেয়ারাও হয় আহ্লাদী রাণীর ব্যঞ্জনে
এক মগে আয়েশ করে চা পান
গল্প হয় যেখানে ফেলে এসেছে  কোমল মায়ের মতো গ্রাম,
সরল শিশুর মতো ফসল
ছায়াঢাকা, মায়ামাখা একটি ঘর...

ছেলের বৌয়ের হাতে গুনে দেয় বেতন পেয়ারা
কাক ডাকা শহরের এ ঘর তার নয়
ছেলের বৌ মালিক বুঝি এ ঝরোঝরো বার্ধক্যের!
গাইবান্ধার বন্যা বের করে সেই কতকাল আগে?
সাল, তারিখ মনে নাই
মনে পড়ে শুধু ভেসে যাওয়া মুখ প্রিয় ভাইবোন...
চিহ্নহীন মা-বাবার কবর!

স্বামীও কি ভেসে যাবে ক্যান্সারের করাল কবলে?
লোকে বলাবলি করে আজকাল!

বস্তির গরীব আঁতালে কোনবা কঠিন অসুখ?
স্বামী হাসে, ‘তোক ছাড়ি কনবা যামু প্রাণের কৈতরী
একপ্রাণে বাঁধা যে দুই তনুমন?’