কবিতা প্রসঙ্গ
কবিতা হাঁটছে ভোরের পান্তার থালা,
ধানস্তূপের কোল, নাড়ার আগুন
উঠানে ছড়ানো জাল, মাছের খলুই
কাদাগন্ধ মেখে ডুব-সাঁতার শেষে
হাড়ের কাঁপুনিতে উনুনের আঁচ..
বৈশাখ আম বাগান. ভাদ্রে তালতলা
কবিতা নরম হাত
নাড়ার ফাঁকে ফাঁকে খেসারি শাক
হাটু-পানি ভেঙে-ভেঙে শামুকের খোঁজ
পাটক্ষেতে শৈশবের লুকোচুরি।
কবিতা তালের ডিঙা ঝপাৎ-ঝপাৎ
সরু খাল পেরিয়ে বড়ো রাস্তায়
হাটের ঝুনঝুন-টুনটুন বোল বিকিকিনি এড়িয়ে
দূর শহরের পিচঢালা পথ--
মিছিল-শ্লোগান গর্জে
জীবন বদলাবার অভিপ্রায়ে নিরলস সংগ্রামী জীবন।
পোশাকের সাথে অদল-বদল ভাষার ব্যঞ্জন
দেয়ালঘেরা বৃক্ষবিতান হয়ে
খাঁচাবন্দি প্রাণীদের সাথে ঘোরাঘুরি, ভাব বিনিময়--
গার্মেন্ট শ্রমিকের জামার হাতায় মোছে ঘাম।
ইটভাঙা হাতুড়ির শানে তেজিয়ে মনের ধার
জল-মাটির সেতু বুড়িগঙ্গা পাড়
রমনার বটমূল, শহীদ মিনার,
নিরিবিলি স্মৃতিসৌধ, নূর হোসেন চত্বর;
কবিতা জীবন-সৌধ গড়ে
জাতির ঐতিহ্যে উজ্জীবিত পঙক্তিমালায়।
একদিন কবিতা সীমানা পেরিয়ে মুক্তাঞ্চলে
ভিন্ন ভাষা, সংস্কৃতি আবহ--
কঠোর শ্রমের জীবনে মানুষ
বিরোধের ঘাট পেরিয়ে আপন আয়নায় দেখে
পরস্পর চাওয়া-পাওয়া, ঘাত-প্রতিঘাত;
সংকীর্ণতা ভেঙে মুগ্ধতার করতলে চুপচাপ হাত রাখে।
কবিতা তালুবন্দি করে ফড়িংয়ের অভিসার,
সভ্যতার হরি ভাটফুল।
গ্রাম-শহর-মহাশহর ছুঁয়ে-ছুঁয়ে
অভিবাসী হৃদয়ের স্তরে করে বন্ধুত্বের মলম মালিশ।
চষে বোধের জমিন--
কৃষকের ঘর্মাক্ত জীবন, গ্রহকর্মীর ক্ষত
নাইওরির জমানো বেদনা মোড়ক খুলে দেখে;
কবিতা জীবন-পাড়ে জীবনের পাঠ শুরু করে।