হে কৃষক, তুমি ভুলে যাও স্বাধীনতার কথা,
মানবাধিকারের কথা, ----
লাঙ্গল আর কাস্তেকে হাতিয়ার করে
মেঠোপথ বেয়ে তোমার গন্তব্য বড়জোর
মাছধরা খাল বিল, বন জঙ্গল,
কিংবা উন্মুক্ত ফসলের মাঠ। -----
মনে রেখো, অনভ্যস্ত পদব্রজে রাজপথ ধরে
দিল্লির যন্তরমন্তর, কিংবা লালকেল্লা কখনোই
তোমার গন্তব্য হতে পারে না!
হে কৃষক, "জয় জোয়ান, জয় কিষান"
শ্লোগানে তুমি আনন্দিত হওয়ার সঙ্গত কোন
কারণ নেই যেহেতু গো মাতার জয়ধ্বনিতেই
আজকাল ভোটের বাক্স অধিক পয়মন্ত হয়।
তবে তুমি ভুলে যেওনা, বস্তুত রাজনীতির
পাশাখেলায় কাউকে না কাউকে দ্রৌপদীর
ভূমিকা পালন করতেই হয়। ------
তোমার যোগানো অন্নজলে পরিপুষ্ট
মহাজনেরা আজ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বিলাস
ভবনে খবর নেয়, সখ করে পোষা
কানাডিয়ান ল্যাব্রাডর কিংবা জার্মান সেফার্ডটা
খাওয়া দাওয়া করছে কি না!
ছাদে ফুল গাছের টবে জল দেয়া হচ্ছে কি না!
এক কথায়, হাজারো দায়বদ্ধতার ঘেরাটোপে
আবদ্ধ ডিজিটাল দেশের রোবটিক মানুষ
তোমার ঘাম ও রক্তের মূল্যায়নে কার্যত অনিচ্ছুক।
তারা জানে, ---- "আশায় বেঁচে থাকে চাষা।"
তাই তোমার উত্তরণের পথ রুদ্ধ করেই প্রসস্ত
হয় সবার সাথে সবার বিকাশ! -------
চৈত্রের কাঠফাটা রোদ, বৈশাখী বজ্রঝড় আর
শ্রাবণের বৃষ্টিধারা বন্ধু-বাৎসল্যে বুকে জড়িয়ে
নিলেও পুত্রসম সিপাহীর উদ্যত লাঠি
তোমার পিঠে মানায় না। -----
অতএব হে কৃষক, দোহাই তোমার!
ধূলিমাখা যুগল চরণে বিকশিত ভারতের পবিত্র
ইন্দ্রপ্রস্থে অনধিকার প্রবেশ করে প্রগতির জয় যাত্রাকে
কলঙ্কিত করো না তুমি! বরং ফিরে যাও
তোমার বংশানুক্রমিক ভূবনে যেথায় মাতৃসম
পাথর কঠিন জমি ভেলভেট-সবুজ আঁচলে
শুষে নেয় তোমার দেহের সমস্ত রক্ত আর ঘাম।
নাড়ির টানে লাঙ্গল আর কাস্তেটা ধরিয়ে
দাও সন্তানের হাতে। --------
মাটির গন্ধমাখা নিত্য ভিজা গামছা আর
চিরন্তনী তমসুকেই স্বাক্ষরিত হোক
তোমার গর্বিত উত্তরাধিকার!
অতঃপর, অনন্তকাল সবার মুখে অন্ন যুগিয়ে
নিরন্ন উপবাসে চির দারিদ্র্যের পথ ধরেই
অব্যাহত থাকুক তোমার বেঁচে থাকার, ----
কেবল বেঁচে থাকার সুদীর্ঘ লং মার্চ!
---- খছরুজ্জামান্।
০৩/১২/২০২০ ইং