ছোট্টবেলায় বাবা বলতেন, --- ''মানুষ হও'',
          মা বলতেন, ---- "দেখ্ বাবা তুই মানুষ হবি
                   বলে আমাদের এই কষ্ট।"
         দাদু প্রায়ই আক্ষেপ করে বলতেন, ---------
       "আজকাল দেশে ভালো মানুষের বড়ো অভাব।
               স্কুলের মাষ্টার মশাইরা বলতেন, -----
                 "লেখা পড়া করে  আর যাই হও
                     তোমরা অমানুষ হয়ো না।"
              অতঃপর মানুষ হওয়ার সঙ্কল্প নিয়ে আমার
                    এই দূর্গম মনুষ্য যাত্রা ----------
         শৈশব থেকে কৈশোরের স্বপ্নিল সিঁড়ি ভেঙে ভেঙে
       যৌবনের পথে হ্যামিলনের বাঁশির সুরে ভেসে যাই
        নিস্তরঙ্গ জনসমুদ্রে। খোয়া-উঠা রাস্তায় হোচট
         খেতে খেতে অভ্যস্ত আমি এগিয়ে চলি নির্বিকার।
          দ্রব্যমূল্যের আগুনে জনারণ্য পুড়ে যাক্ কিংবা
     রাম রাজ্যের স্বপ্ন দেখে দেখে কৃষকেরা আত্মহত্যা
      করুক! বাবরি মসজিদ ভেঙে রামচন্দ্র উদ্ধার পাক্
         অথবা আসাম থেকে বাঙালীরা বিতাড়িত হোক
        তাতে আমার কিচ্ছু যায় আসে না!                      
           কারণ, ------ কারণ, আমি মানুষ হব।

           চকোলেট খাওয়ার বয়সে যে ছেলেটা
       আইসক্রিম ফেরি করে, তার হাত থেকে মালাই
          বরফ খেতে আমার এতটুকু অস্বস্তি হয় না!
       বিশ্বাস করুন, --- নরখাদকদের হাতে লুণ্ঠিত
      ইজ্জত নিয়ে আমার মেয়ের বয়সী মেয়েটি মৃত্যুর
     মিছিলে যোগ দিক, মনীষার জিব কেটে পড়াতে
         সারা ভারতবর্ষ বাকরুদ্ধ হয়ে যাক,
        তারপরও আমার কিচ্ছু যায় আসে না!
          আমি বরং মরুঝড়ে বউ-বাচ্চার
    নিরাপত্তা নিয়ে উটপাখির মতো মুখ গুঁজে থাকি!
           কারণ, ------- কারণ আমি মানুষ হব।

       ক্লান্ত দুপুরে এক সাগর ক্ষুধা নিয়ে অনাথ শিশু
          ফুটপাতের জঞ্জালে খাবার খুঁজে খুঁজে বেঁচে
     থাকার লড়াই করুক, ছ'মাসের ধ্রুবজ্যোতিকে
       মায়ের কোল থেকে ছিনিয়ে নিয়ে কেউ
   তেলে ভাজার টোঙ্গার মতো  রাস্তার পাশে মোচড়ে
    ফেলে দিক কিংবা গো-মাংস খাওয়ার অপরাধে
          গো-সন্তানেরা কাউকে মেরে ফেলুক,
            তাতে আমার কিচ্ছু যায় আসে না!
           কারণ, ------ কারণ আমি মানুষ হব।

     এভাবেই, মানুষ হওয়ার দীর্ঘ পথে হাঁটতে হাঁটতে        
    দিনের সব আয়োজন স্তব্ধ হলে পেঁচা-ডাকা গহীন
    মধ্যরাতে জেগে ওঠে সেই পুরাতন বিবেক। আমার
    চোখে চোখ রেখে জিজ্ঞাসা করে ---- "বুকে হাত
      রেখে বলতে পারো, ----- ' তুমি কি মানুষ?"
      অন্তর্দর্পনে আলোছায়ার বর্ণালীতে মুখোমুখি ভেসে
     ওঠে এক বহুরূপী অবয়ব, ------- কখনো ভাষায়,
       কখনো ধর্মে, কখনো পেশায়, অথচ লেশমাত্র
     মনুষ্যত্বহীন আপাদমস্তক ভারতীয় এক দ্বিপদ জন্তু।      
    হিমেল রক্তের চোরাস্রোতে কোঁকড়ে যায় শিরদাঁড়া!  
    অপরাধীর মত প্রণত মস্তকে বলতে বাধ্য হই ------
         "বিশ্বাস করো, ----- কথা ছিল মানুষ হবো,          
                              হতে পারিনি এখনও!