পাহাড়তলীর পাহাড়ী পথ
এঁকেবেঁকে যায় দূরে-
কোন রুপসী রূপ মেলে দেয়
সবুজ বনের শ্যামলে!
আলুটিলা পার হয়ে যাই
দীঘিনালার দিকে-
বন্দুক হাতে সৈনিক তখন
কাজ করি পার্বত্যাঞ্চলে।
বাবুছড়া পানছড়ি ন্যাংখাইছড়ি
লেবুছড়ি মাসে মাসে ঘুরতে হয়,
চাকমা মগ মুরং সাঁওতাল
সবার সাথে ভাবও হয়।
পাড়াহী সব মানুষগুলো
বিশ্বাসী অর পরিশ্রমী-
কথা দিয়ে কথা রাখে
করে না জবান খেলাপী।
চালচলনে অনেক রকম
লক্ষ্য করি ব্যবধান
কিন্তু তারা সৎ ও সত্যবাদী
কালের চাকায় হয়তো এখন ভিন্ন রকম।
১৯৮৫ সালে বদলী হয়ে
দীঘিনালায়, টিলার উপর সেনানিবাস
মাইনি নদীর মিঠা মাছের
স্বাদ ভুলিনি আজও তার।
বনে বনে কাঁঠাল কলা
দাম ছিলো খুব সস্তা,
শুটকি ছিল প্রিয় খাবার
পাওয়া যেতো হরেক প্রকার।
হাঁস-মুরগী খাসি গরু
সবই ছিল সহজলভ্য।
আনারস কমলা পেঁপে
বাড়ী বাড়ী থাকতো জমা।
গাছের থেকে ছিঁড়ে খেতাম
তরতাজা সব ফলমূল
শাকসব্জি ক্ষেতখামারে
ফলতো বারো মাস।
হাটবাজারে নারী-পুরুষ
সবাই যেত পণ্য নিয়ে
বেঁচা-কেনায় ছিল সরগম
বাজার কিম্বা হাটবারে।
উর্ধু-নাগা, দুধ মরিচ
ডালায় ডালায় থাকতো ভরা,
পান-সুপারি নারকেল নিয়ে
আসতো গায়ের বাসিন্দারা।
বিকেল হলে পাড়ায় পাড়ায়
দলবলে সব বের হতাম,
রাতেও হঠাৎ যেতে হতো
গোপন অপারেশন থাকলে।
মং থ্রু চাকমা হেসে বলতো
বন্ধু কোথায় যাস
দীঘিনালা কলেজে পড়ত মেয়ে
খুব মেধাবী ছাত্রী ছিলো।
ওদের ভাষায় বলত প্রায়ই
‘তোরা বাঙালী বাবু ভালো ন আছিস’
দুঃখ ছিলো বুকভরা তার
প্রেমের ব্যর্থতায়।
মাষ্টারপাড়া জামতলীতে
আড্ডা হতো বাঙ্গালীদের
খাঁটি দুধের মিষ্টি মিলত
খেতাম গিয়ে সখ করে।
পানছড়িতে শান্তিবাহিনীর
আক্রমনে বেশ বিপদে পড়েছিলাম
মুখোমুখী সংঘর্ষে মেশিনগানের ব্রাশফায়ারে
সেনাসদস্য নিহত হন।
প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সৈনিক হয়েও
জীবন নিয়ে সংশয় থাকতো।
চেম্বার লোডেড রাইফেল নিয়ে
চলাফেরা করতে হতো।
টিনের ঘরে মুলিবাঁশের বেড়াঘেরা
সেই ঘরেই থাকতে হতো,
দিনের বেলা যেমন তেমন
রাত হলে ঘুম হারাম হতো।
কখন কি হয় কখন কি হয়
এমন ভাবনা সবার মনে,
তার ভিতরেই কর্তব্য পালন
দায়-দায়িত্ব সারতে হতো।
তিনটি বছর কেটে গেল
পাহাড়ী এই প্রত্যন্ত অঞ্চলে
সে সব স্মৃতি আজও কেমন
মন উতালা করে।
কতো মুখের হাসি-কান্না
স্মৃতির পাতায় আজও ভাসে
কতো কথা কতো ব্যথা বুকের ভিতর
আজও কেমন নড়েচড়ে।
------------------ ০ ----------------
২১ সেপ্টেম্বর ২০২২, ৬ আশ্বিন ১৪২৯, ২৪ সফর ১৪৪৩, বুধবার, সকাল: ০৪:০৩, কাব্যকুঞ্জ, (স্বত্ত্ব সংরক্ষিত)