মনে পড়ে একাত্তর,
মশার কামড়ে গা জ্বালা করা কতো যে বিভৎস রাতজাগার কথা,
হ্যারিকেন না জ্বালিয়ে
অন্ধকারে বসে বসে অজানা ভয়ে-জড়োসড়ো পরিবার বসে থাকা।
উড়োজাহাস উড়লেই-
বোমাতঙ্কে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকা,- যেন মূর্তি, পাথরের মত নিশ্চল
নিথর; হতবাক পিতামাতা-
উড়োজাহাস উড়ে চলে গেলে ঘরে ঢুকে তড়িঘড়ি দুয়ার বন্ধ করা।
খাওয়া-নাওয়া ছিলো না
সবাই ভয়ে ভয়ে ছিল কখন কি হয়ে যায়,- বোমা-কামান, আগুন
গুলি, মর্টার-শেল রাইফেল
এসবের নাম শুনতাম আতঙ্কিত বড়দের মুখে; চিনতাম না একটিও।
এমনি এক রাত ভোর
হতে না হতেই নদীপাড়ে লঞ্চ বোঝাই পাকিস্তানী মিলিটারী এসে হাজির,
হিংস্র হায়েনার থাবায়
ক্ষত-বিক্ষত কতো অসহায় মানুষ; মানুষের সুখের স্বপ্ন। পরিবার পরিজন।
মোছড়ার সদাহাস্য সতীশ দা’,
ব্রাশ ফায়ারে মাথার খুলি খুলে ছিটকে পড়েছিল ঘিলু-রক্ত ডোবা পুকুরের
পাড়ে সবুজ ঘাসে ডগায়;
কচুড়ির পাতায়। ঠুস ঠাস গুলির শব্দ কুণ্ডলী পাকানো আগুন-ধোঁয়া চারদিকে।
এমন কতোমানুষ মরেছিল,
সে হিসাব এখন মিলে না। সঠিক গননা কে করে রেখেছে তাদের!
কতো নারী সম্ভ্রম হারালেন,
তা-ই বা কে রেখেছে গুনে! রাঙ্গাভাবী গত হলেন গত বছর অসুখে।
যুদ্ধ-যুদ্ধ খেলা খেলে এখন
ছোট ছোট শিশুদের দল। চোর ডাকাত খেলা করে তারা দল বেঁধে।
সেই বয়সে আমি যুদ্ধ দেখি
একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধ। বঙ্গবন্ধুর পাকিস্তানে আটকে থাকার কথা।
বিজয়ের মিছিল, জয়ের আনন্দ
দেখেছি একাত্তরে; নয় মাসে দেশ স্বাধীনের গৌরবে উদ্বেলিত মুক্তিযোদ্ধা।
আর বেঈমান রাজকারদের ঘর-
ছেড়ে পালিয়ে বেড়ানো দেখেছি সেই শিশু বয়সে। দেখেছি মৃত্যু,- আগুন।
দেখেছি অনূঢ়া-গর্ভভবতীদের
শোকে-দুঃখে লজ্জায়-ঘৃণায় অনোন্যপায় হয়ে গাছের ডালে ঝুলে আত্মহত্যা;
শেষরাতে কুকুরের কান্না প্যাঁচার
ডাক, নদীতে ভেসে আসা নারী-পুরুষের লাশ। লুটপাট দখলদারিত্বের মহড়া।
একান্ন বছর পর আজও
ধর্ষিতা নারীর চাপাকান্না, স্বজন হারানো হাহাকার, ভিটেমাটি দখলের পায়তারা
শুনি। চুরি-ডাকাতির দৌরাত্ম
দেখতে হচ্ছে; অনহারীর আর্ততনাদ পথে-ঘাটে। যেন আজও সেই একাত্তর!
------------------ ০ ----------------
১১ সেপ্টেম্বর ২০২২, ২৭ ভাদ্র ১৪২৯, ১৪ সফর ১৪৪৩, রবিবার, সকাল: ০৪:০৮, কাব্যকুঞ্জ, (স্বত্ত্ব সংরক্ষিত)