অবশেষে সমর্পিত তুমি
--
একই আকাশের নিচে বসবাস আমাদের,
তুমি নও ভিন গ্রহের কোন প্রাণী।
বৃষ্টির জল আমাদের ধুয়ে দেয় একসাথে,
আমরা বাতাস থেকেই নিই
জীবনের সবটুকু শ্বাস।
ফুলগুলো আমাদের একই সৌন্দর্য বিলায়,
আমরা কাশবন দেখে উদ্বেলিত হই একই রকম।
খিদে পেলে আমার মত তোমাকেও উদর জানান দেয়
আর আমরা ছুটি প্রয়োজন মেটাবার জন্য।
শূলের আঘাতে আমার মত তুমিও বিদীর্ণ হও,
অসুখে হও ত্রস্ত,পীড়িত আমারই মত।
কোথাও বিপন্নতার আঘাতে আমার মত তুমিও শংকিত,
আমাদের জন্ম,মৃত্যু, দেহে প্রবহমান রক্তের ধারা,রঙ
অবয়বে লুকোনো অঙ্গসমূহ হুবহু এক।
যা কিছু প্রাকৃতিক সবকিছুই একই রকম
একই ছাঁচে গড়া আমরা মানুষ।
আরোপিত কৃত্রিমতা আমাদের মাঝে বিভেদ আনে,
ভেবে দেখো সভ্যতা মানে কী!
সভ্যতা হলো বিভেদ,সভ্যতা হলো মেকি আবরণ,
সভ্যতাই গড়ে দেয় দ্বন্দ্বের প্রাচীর।
তারপর আমরা চলি বিপরীতমুখী স্রোতে,
কৃত্রিম হাসিতে তুমি লুকোও তোমার চোখের জল।
কোথায় যাবে তুমি? জানা আছে কি?
সবটুকু বায়ু রেখেছ নিজের দখলে,আকাশও;
দখলে নিয়েছ স্বার্থপরের মত সব সুখ,সব পাওয়া,
বিবেক দিয়েছ নির্বাসনে স্বেচ্ছায়।
যত পাও,তত চাও,আর কি চাই তোমার?
খাই মেটেনা,খেই হারিয়ে বিসর্জন দাও সভ্যতাকেই
অতঃপর তুমি আবর্জনা ঘাটাঘাটি করে খুঁজে ফিরো
অন্তহীন সুখ আর তোমার অস্তিত্ব।
ম্লাণ হয়ে আসে সম্পর্কের গাঢ় রঙ,
ক্ষীণ হয়ে যায় যত ছিল বাঁধনের সূতো,
আলগা হয়ে ঝরে পড়ে জীবনের রূপ-রস-গন্ধ।
সুউচ্চ শিখরে শিউরে উঠে আসন তোমার ভয়ে,
কখন কি জানি হাতছাড়া হয় প্রাপ্তি যত।
হয়,হয়তো! শূন্য সব হারিয়ে,শূন্য তুমি প্রকৃতির বিধানে,
নেমে আসো অবশেষে আমার কাছাকাছি,প্রকৃতির কাছাকাছি।
আমিতো চিরকাল শূন্য, পড়ে থাকি এককোণে,
সাথে থাকে বকুলের গন্ধ জড়ানো মমতার ডালি।
তুমি অচল সিংহাসন ছেড়ে এখন আমার কাছাকাছি,
আমাতে সমর্পিত তোমার যাবতীয়,
অতঃপর আমরা একসাথে আবার হাঁটতে থাকি।
এখন অফুরন্ত অবসরে দেখ মায়াবী জোছনা রঙ
দেখো ঘাসফুল,আর আমার চোখে খুঁজে নাও নিজেকে তুমি।
১২/৭/১৯