লাল কাকতোয়া ,
সেই কথা বইছে আকাশ প্রাণে । মাসুদ তার আজ মন ভালো নেই, তবুও লাটাই হাতে সবুজ মাঠে নীল আকাশে ঘুডি উড়িয়ে বেড়াচ্ছে আন মনে ।
সেই সকাল থেকে দুপুর হয়ে, কখন যে বেলা চলে গেল খেয়াল নেই তার ।
রহমত . বরকত. মাগফিরাতের. বারাত নিয়ে আবার এলো মাহের রমজান । আবার তার মন ভাঙ্গা দিন শুরু । শুধু সবার দিকে ঈদের দিন চেয়ে থাকাতে হবে ।
মাসুদের ভাবনায় শুধু এ-ই ঈদে একটা কাকতোয়া পড়তে পারবে তো।
এই নিয়ে চিন্তা ভাবনার কোল কিনারা পাচ্ছে না।
হঠাৎ তার ডাক , মাসুদ এই. মাসুদ বাড়িতে আয়. তুই ভাত খাবি না দুপুর বেলা হয়ে বিকাল হতে চলো । আয়ই খেয়ে যায় বাবা সাতরাজার ধন, আমার মানিক ।
মা আমার খিদে নেই, আমার খাইতে মন চাইতেছে না। তুমি বাড়ি চলে যাও ভাত পরে খাবো
। এই যে সকালবেলা বের হলি লাটাই হাতে নিয়ে।
তোর জন্য শাক তুলে সুন্দর করে ভর্তা করে, রেখেছি । সখিনারে দুই কুলে কেউ নেই।
স্বামী ছিল পঙ্গু, সে অনেক কথা, অটো রিক্সা চালাতে গিয়ে হঠাৎ একসিডেন্ট করে হাত পা মেরুদন্ডের হাড় ভেঙ্গে গেলো।
অভাব অনটনের সংসারে এক রকম বিনা চিকিৎসায় এই জগতের মায়া ত্যাগ করেছেন । এদিকে হঠাৎ মাসুদের শরীরে প্রচন্ড জ্বর চলে আসলো ।
মা ওমা, মরে গেলাম শরীরে প্রচন্ড ব্যথা । ঘুমাতে পারতেছি না ঠিক ভাবে ।
মা মাথায় পানি দিয়ে দাও হাত বুলিয়ে দাও।
মা মাথায় পানি ঢেলে দিচ্ছে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে বাবা তুই একটু শুয়ে থাক। আমি যাব আর আসবো। আমি তোর জন্য ওষুধ নিয়ে আসি ।
তার মাও দোকানে গেল মাসুদের লাইগা রফিকের দোকানে । রফিক আমার ছেলের জন্য ওষুধ দাও । ছেলেটা ৩-৪ দিন জ্বর ভুগতেছে । তার জন্য কিছু ওষুধ পত্র দাও বাবা। তুমি আগের টাকাটা দিলে না । আমি তোমারে কিভাবে বাকি দিবো আবার। রফিক এবার আর মিস হবে না ঈদ আসছে মানুষের কাছে চাইয়া টাকা পাই আমি তোমার টাকা অবশ্যই এবার দিয়ে দেবো । এবারের মত ঔষধ দিয়ে দাও বাবা ।
ওষুধ নিয়ে বাসায় আসলো । তাকে ওষুধ খাওয়ানো শুরু হলো। এভাবে দুই দিন হতে চললো কিন্তু তারা জ্বর থামে না। তার দিন দিন যায় যাই অবস্থা। মাসুদের একটাই স্বপ্ন এবার ঈদে মনের মত কাকাতোয়া পড়তে পারব কি ।
এই তো আর ঈদের তিন দিন বাকি আছে মাত্রা । সবাই কাপড় কিনেছে মাসুদের কাপড় নেই ।
তার খেলার সাথী সারোয়ার আলমগীর মারুফ ঈদের নতুন জামা কিনেছে।
এই বার ঘুরে ঘুরে যে টাকা পেয়েছে এটা তো ওষুধের টাকা দিয়ে চলে যাবে ।
এবার বুঝি ঈদের কাপড় আর কি না হলোনা তার। একদিকে অসুখ অন্য দিকে ঈদের জামা ঐই নিয়ে সারাক্ষণ ভাবনা তার মার ।
এদিকে মাসুদের শরীরে অবস্থা দিন দিন খুবই খারাপের পথে ।
হঠাৎ মাসুদের মা চিৎকার বাবা রে তুই আমারে ফাঁকি দিয়ে চলে গেলি।
আমার যে আর কেউ রইলো না।
আমি কি নিয়ে বাঁচব । হে আল্লাহ তায়ালা আমাকে ধৈর্য ধরার তৌফিক দান করুন ।
মাসুদেরে আর কাকতোয়া পড়া হলো না ।
সাদা কাপড় তার সাথী হয়ে চিরদিনের জন্য তিনি চলে গেলেন । এ-ই নশ্বর পৃথিবী ছেড়ে