আবর্জনাজীবি ছত্রাকের মতই ভাগাড়নিবাসি আমি
জন্মের পর চোখ খুলে দেখেছি রাশি রাশি খাবার।
তবুও রোজ ভরপেট ক্ষুধা নিয়েই ঘুমিয়ে পড়ি,
আবার সকালে ডেকে দেয় জঠরের অ্যলার্ম ঘড়ি
বোধহয় বেঁচেও আছি এই ক্ষুধা আছে বলেই
জীবনের যান চলছে ক্ষুধার জ্বালানিতেই।
ভোরের ক্ষুধা জাগার সঙ্গে সঙ্গেই
স্তুপিকৃত রাশি রাশি খাবারের ওপর ঝাপিয়ে পড়ি রোজ;
চৈত্রে যেমন গরু-বাছুরেরা হামলে পড়ে
বহুচর্বিত মাঠের ঘাসের ওপর।
কার্তিকে যেভাবে কামলারা গোগ্রাসে গেলে
ফেন মেশানো কাউনের জাউ, ঠিক তেমনি।
তবে ওদের মত অত কষ্ট আমার নেই।
চারপাশে রাশি রাশি খাবারের সর্বসত্ব আমার।
টিস্যু পেপারে লেগে থাকা কেকের টুকরো,
বুয়ার ফাকিবাজিতে ছালে লেগে থাকা রসালো ফল,
আধপঁচা দুয়েকটা ফলও আসে মাঝে মধ্যে
আমি ক্রমাগত খেয়ে চলি দুপুর অব্দি।
তারপর আমার মায়ের সৎভাই সুর্যিমামা
পিঠের চামরায় যখন চাবুক পেটাতে থাকেন,
তখন পলিথিন স্তুপের আড়ালে একটু আত্মগোপনে যাই।
এর মধ্যেই আসতে থাকে আরো অনেক খাবার;
হাড্ডিতে লেগে থাকা মাংসকণা, আধখাওয়া মাছের টুকরো,
সামান্য ময়লামাখা ডাল ভাত, প্যাকেটের অর্ধেক ভরা বিরিয়ানি
লিপস্টিক লেগে থাকা স্যান্ডউইচের আধখানা, কিংবা
আধখাওয়া চিকেন ফ্রাইও মেলে মাঝে মধ্যে।
পোলাও কোর্মা বিরিয়নি এসব আমার রোজকার আহার্য।
এই সামান্য একটু বাসি গন্ধ লাগে হয়তো
যাকগে ওটা এখন আমার সয়ে গেছে,
আমার তো ওগুলোকই আসন স্বাদ মনে হয়।
হয়তো বাসি হওয়ার আগে কখনো খাইনি বলেই।
আমার বিকেলের নাস্তাটাও বেশ ভারিক্কি চালে হয়
কলার খোসা, বাসি পাউরুটি
কিংবা একটু শক্ত হয়ে যাওয়া ডালপুরি
খেতে খেতেই কখন সুর্য ডুবে যায় টের পাইনা।
আকাশে যখন আবীরের রঙ লাগে
আর রাস্তায় গাড়ি থেকে নেমে লাল-নীল আলোয়
ফুচকা খায় জোড়া জোড়া মানুষ।
তখন আমি আমার নগ্ন দেহ নিয়ে একবার
বিদ্রুপ করে আসি ওদের সভ্যতার বেশবিন্যাসকে
ওরা অবশ্য আমায় দেখে নাকে রুমাল চাপে।
তাতে বয়েই গেল আমার!
আমি তো বেঁচেই আছি নাক সিটকানো ময়লার ভাগাড়ে,
পৃথিবীর সমস্ত স্বাস্থ্যকলাকে আমার শীর্ন বুড়ো আঙুল দেখিয়ে
বেঁচে আছি একটি বিষাক্ত ময়লাজীবি ছত্রাক।