জন্মেই চোখ মেলে দেখা অপার বিষ্ময়ের দুনিয়ায়
আজো আমি চলেছি পর্যটকের বেশে, দেশে-দেশে
কোথাও নেই তিলমাত্র ঠাই মোর তাই বিশ্বজোড়া
খোলা প্রান্তর, খেয়াঘাট কিংবা রাস্তার কংকরই বাসা
শুধু অপার বিষ্ময় নিয়ে পথচলাই একমাত্র কাজ
জীবনও তাই বৈচিত্রসুখে মজেছে
গৃহবাস মোর অদৃষ্টে লেখেননি বিধাতা।
মাতাল ডিওনিসাস শুধু চোখে মাখিয়েছেন
বিষ্ময়ের দৃষ্টিসুধার পানপিপাসা। কিন্তু
আতিথ্যদেব জিউস হননি সদয় তাই
কারো গৃহে হয় নাই আদরের ঠাই।
শুধু চোখের দেখা, মনকে ছুঁয়ে যাওয়াই সব
পেয়ে হারিয়ে তৃপ্তি  হবার কিছুই মেলেনি।
তবু সুখি পরিব্রাজক আমি জীবনের দেশে
আর সব অধিবাসীদের দেখে, নিজের বাড়িঘর
সংসার-বন্ধন, হাসি-কান্না নিয়ে তারা আছে বেশ।
আমি পরিব্রাজক দেখি ঘুওে ঘুরে জীবনের ঘাটে।

আমি দেখেছি, আমাদেও ফজর আলির ছোট মেয়েটাকে
প্রতিদিন বাবা হাট থেকে ফিরে ঝোলা খুলে
বের করে দেবে তার সাধের পুতল, এই অপেক্ষায়
একটি সপ্তাহ কত তৃষিত নয়নে পথের দিকে চেয়ে থেকেছে।
অথচ মহাজনের ধার শুধতে গিয়ে ফজর আলি
ফজর থেকে এশা অব্দি খেটেও পারেনি
ছোট্ট মেয়েটার সামান্য আবদার রাখতে।
খড়ে ছাওয়া মাটির ঘরটার পাশে মেয়েটিকে দেখেছি রোজ
কিন্তু পারিনি তার তৃষিত অপেক্ষার অবসানে
একটি পুতল কিনে এনে দিতে।
আমি যে ছিলাম পথচারি মাত্র।
শুধু দেখবার চোখ দিয়েছেন বিধাতা।
আর দিয়েছেন বিধে যাওয়ার মত কোমল হৃদয়।
মেয়েটির তৃষিত দৃষ্টি তীওে বিধতে বিধতে
আমার সেই রাস্তার পর্যটন ফুরিয়েছে।
ঘয়তো ফজর আলি এখনো ফজর থেকে এশা
মহাজনের জমিতে কাজ করে।
হয়তো পুতল কেনা হয়ছে, অথবা এতদিনে
সেই ছোট্ট্ মেয়েটিই পুতুলের মত বউ সেজে
অন্য কোনো জমিরের জন্য
অপেক্ষার দৃষ্টি মেলে প্রতি হাটবারে।
                                          
                                             (চলবে)