ফাঁকা ক্যানভাস।
একমুঠো রঙ ছুঁড়ে মারলাম; মিলিয়ে গেল...
ব্যথা বুঝি মানুষকে শূন্য, রিক্ত, নিঃস্ব করে দেয়?
যে যাই বলুক, বেদনার কোনও রঙ নেই।
রঙভুক নিষ্ঠুরতার ডালি সাজিয়ে রাখে সে।
জঠরে তার থরে থরে সাজানো
জমে বরফ হয়ে যাওয়া সব রঙের আল্পনা।
তার মাঝখানেই বাঁধা পড়ে আছে আমার অর্ধ-বৈরাগ্য।
আমার আর বৈরাগী হওয়া হয়ে উঠলোনা।
কিছু লতাপাতা পায়ে জড়িয়ে থাকে।
নিষ্পাপ নিষ্কলঙ্ক পবিত্র ভালোবাসার লতাপাতা।
ছিন্ন করা যায়না।
কেউ তো ভালোবেসেছিল।
কেউ তো এখনও বাসে!
সেইসব রঙিন লতাপাতা
আমার পূর্ণ-বৈরাগ্যের অন্তরায় হতে চায়।
সারাদিন মাঠে খেটেখুটে বাড়ি ফিরে হারিকেনের আলোয় বসে
কে সি নাগ-এর অংকের বই থেকে জটিল জটিল সব অংকের
সমাধান বোঝাতে বোঝাতে
রামানুজনের গল্প শোনাত যে গরীব বাবা।
টিউশনি শেষে রান্নাঘরে তিন ভাইবোন হানা দিলে,
উনুনে ঘুঁটে ঠেলে দিতে দিতে
রবিঠাকুরের 'বনবাস' কবিতা আবৃত্তি করে শোনাতো যে মা।
নিজের হাতখরচের বেশির ভাগটাই হাসতে হাসতে
ছোট ভাইয়ের পকেটে ঢুকিয়ে দিত
কলেজ পড়ুয়া যে দাদা।
পাতে রাখা নিজের ভাগের মাছের টুকরোটার
অর্ধেকটা ভেঙে ছোট ভাইয়ের পাতে
নির্দ্বিধায় তুলে দিত 'জননীর প্রতিনিধি' যে দিদি।
বৃষ্টির রাতে টিনের চালে টুপটাপ আওয়াজ
শুনতে শুনতে কাঁথা মুড়ি দিয়ে বসে
পঞ্চাশের মন্বন্তরের ভয়াবহ কাহিনী শোনাতে থাকত
একমাথা সাদা চুলের যে ঠাকুমা।
ছেলেবেলায়, কুটুমবাড়ি থেকে আসা
মিষ্টির হাঁড়ি থেকে একটা বড় রাজভোগ
এক ছুট্টে আমাকে দিয়ে যেত যে প্রাণের বন্ধু।
ছাত্রাবাসের ওই ছেলেটা, যে আমাকে বলেছিল,
"তোকে খুব ভালোবাসি রে সাত্যকী...
জানিস, তোর গায়ের গন্ধ আমাকে পাগল করে দেয়!"...
আগুন-দিনের আমার প্রাণাধিক প্রিয় সেই প্রেয়সী,
যে রাত জেগে লুকিয়ে চুরিয়ে
আমার জন্মদিনের 'যোগ্য' উপহার বানাত;
যাকে হারিয়ে বৈরাগ্যের রাস্তায় আমার প্রথম পদক্ষেপ।
কিংবা এই যে...
থাক।
এসব না ভাবাই ভালো।
পিছুটান বাড়িয়ে লাভ কি!
তার চেয়ে বরং, সেই কবে অন্ধকার কোণে নির্বাসিত
এস্রাজ আজ হাতে তুলে নেওয়া যায়।
তারগুলো কেঁপে কেঁপে কেঁদে উঠুক আমার সাথে....
নিষ্ঠুর ক্যানভাস আরও নিষ্ঠুর হোক।
টলমল করে না বেঁচে,
ভিত আরও মজবুত করুক আমার অর্ধ-বৈরাগ্য।
**********************************