আমার বাইরের দেয়ালে চুনকাম দেখে তোমার ঈর্ষা হয়
তুমি জ্বলে পুড়ে যাও ?
ভাবো আমার বোধহয় সুখের কোনো অভাব নাই।
আর দু পা বাড়িয়ে দরোজার ভিতরে আসো
চেয়ে দেখো ভিতরকার আস্তরণ কেমন করে খসে খসে পড়ছে
কত আর্তনাদ কত চিৎকার আছড়ে পড়েছে এই দেয়ালে
কত নির্ঘুম বিরহী রাতের চিহ্ন আছে আঁকা
কত হতাশার ধুলো জমেছে আসবাব পত্রে
কত বিচ্ছেদের ঝুল ঝুলছে জানালার পর্দায়
চোখের জলে ভেজা সেঁতসেঁতে মেঝে।
বাইরে ঝকঝকে আলোকিত দিন আসে, বসন্ত আসে
ফুল ফোটে, ভোমরা উড়ে এ ফুলে ও ফুলে
প্রজাপতিরা রঙিন পাখায় দ্যুতি ছড়ায়
আমি স্বেচ্ছায় বন্দি থাকি এই চার দেয়ালের ভিতর।
আমি যুদ্ধ করি
হাড়ি পাতিল আর বাসন কোসন এর সাথে
ময়লা জামা কাপড়ের সাথে
ছিঁড়ে যাওয়া শার্টের বোতামের সাথে
বাঁকানো লোহার বটির সাথে
রুটি বানানোর বেলুন পিঁড়ির সাথে
মেঝেতে পরে থাকা ধুলোবালির সাথে
একসাথে জ্বলি আগুনের নীল শিখার সাথে।
কেউ খোঁজ রাখে না,
কেউ জানতে চায় না- "তুমি কেমন আছো?“
আমার কোনো ছুটি নেই অবসর নেই
নেই বিনোদন অবকাশ যাপন
অবসন্ন দেহ প্রতিদিন এগিয়ে যায় একঘেয়ে এ সংসার যুদ্ধে
যুদ্ধ করি নিজের অতীত বর্তমানের সাথে
আর যুদ্ধ, সংসার বাঁচাতে জীবন সাজাতে।
দু দণ্ড বিরতি হলে এক কাপ কফিতে খুঁজি
আমার হারানো স্মৃতি, শান্তনা, প্রশান্তি
ভুলে থাকি আপনজন ছেড়ে বেঁচে থাকার বেদনা
বুনি স্বপনের নতুন কিছু বীজ, আগামী দিনের যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে
আমার এতো যুদ্ধ দেখে তোমার কি একটুও মায়া হয় না?
তুমি কি এখনো ঈর্ষা করো যুদ্ধাহত এই আমাকে?
চরিত্র: গৃহিনী