সম্পূর্ণ তলিয়ে যাবার পূর্বে একবার উঠে দাঁড়াতে চাই।
৪৩ টি বছর আমার চোখ লাল কাপড়ে বেঁধে রেখেছেন যারা;
আপনারা শুনুন প্রিয় সমাবেশবৃন্দ-
আমার কথা খুব সংক্ষিপ্ত এবং ভাষা অপেক্ষাকৃত সহজ,
আমি যা বলতে এখানে এসেছি, আগেও আপনারা শুনে থাকবেন;
বেশ জনপ্রিয় এবং বিশ্বাসযোগ্য সেসব।
আমি জানি; মনে প্রাণে বিশ্বাস করি এই
পবিত্র জনসভায় কোন পুঁজিবাদী নেই
অসৎ নাস্তিক কিংবা মুখস্ত ধার্মিক নেই।
এখানে কোন মুখোশ নেই
চারপাশে সত্য মুখ দেখতে পাচ্ছি শুধু,
এখানে শোষক নেই, সন্ত্রাস নেই।
একটু থামুন। ধিরে কথা বলুন। না বলাই শ্রেয়।
আমি জানি আপনারা শান্তিপ্রিয়
বাঙালিরা স্বভাবত শান্তিকামী জাতি।
আপনারা ভালবাসেন স্বপ্ন দেখতে,
উত্তরাধিকার সুত্রে পাওয়া অনেক ঐতিহ্যের মধ্যে এটি অন্যতম;
হ্যা, এটা ঠিক যে, অনেকেই আছে যারা স্বপ্ন দেখিয়ে
ঘুম কেড়ে নেয় ঘুমপ্রিয় মধ্যবিত্ত ও নিন্মবিত্ত ছোটলোকদের।
ছোটলোক কারা? আমরা জানি।
আমাদের সম্মানিত শ্রোতাবৃন্দের সাথে অইসব
তথাকথিত উচ্চাবিলাসী নিন্মবিত্ত, ভিক্ষুক, বস্তির নোংরা শিশুদের
কোন সম্পর্ক নেই।
সম্মানিত নারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি,
আপনারা পৃথক সাড়িতে বসবেন
এটা রাত নয়, এখানে আলো।
যারা অন্ধকারের গান গায়,
যাদের ভাঙ্গা কণ্ঠে বাজে বিদ্রোহের সুর;
সেইসব সুকান্ত, নচিকেতা প্রিয় শিল্পী কবিদের
এখানে প্রবেশ নিষেধ,
যেহেতু এখানে দেশের উন্নয়ন নিয়ে কথা বলা হবে
বলতে পারেন যে কেউ
বলবার অধিকার আমাদের আছে
আমরা স্বাধীনতায় বিশ্বাসী।
তবে-
সরকার, বিরোধীদল, সুশীল সমাজপতি, মৌলবাদ,
তরুণ নেতা, প্রাচীন ধর্ম, আধুনিক আইনের বিপক্ষে
আমরা কিছু বলব না।
এটা বাংলাদেশ
আমরা স্বাধীনতায় বিশ্বাসী আগেই বলেছি,
গনতন্ত্র আমাদের যথার্থ শিরস্ত্রাণ।
আমরা বরং স্রোতের দিকে নৌকা ভাসাই
দু-চারটি মিথ্যেয় যদি দেশ বাঁচে—
গীতায় আছে,... “যে মিথ্যে..."
“প্রকৃতপক্ষে দুর্নীতি শব্দটা তারাই উচ্চারণ করে যারা কিছু পায় না”
যদি বলি, আপনারা কেউ খেপে উঠবেন না আশা করি।
"বালিশের চেয়ে ইট বেশ ভাল, স্বাস্থ্যকর
খোলা আকাশের নিচে ঘুম;
নক্ষত্রের বাতাসে বঞ্চিতরা হেঁটে যায়
কবিদেরও এখানে থাকবার কথা ছিল?"-
হ্যা, যা বলছিলাম- আমাকে ভুল বুঝবেন না,
আমিও কবি তবে তা স্ববিরোধী নয়।
লেখক বুদ্ধিজীবীর কলম চুরি হল গত হেমন্তে...
নাকি মুল্যের চেয়ে কম দামে বিক্রি হয়েছে?
"লেখক ও মানুষের মধ্যে স্পষ্ট পার্থক্য বিদ্যমান"
এটা প্রাচীন শিরোনাম।
অতিত নয় ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলাই শ্রেয়।
আপনি বসুন, সাংবাদিক ! কোনো সাংবাদিক তো এখানে
আমন্ত্রিত নয়। আপনারাও মিথ্যে বলেন এমনকি
সত্য রূপান্তরিত করেন মিথ্যে।
সেটা অকল্যাণকর।
আমাদের এই সভা শুধুমাত্র মানুষের কল্যাণের লক্ষ্যে,
যারা মনে করেন দুটি হাত, দুটি চোখ থাকলেই মানুষের সংজ্ঞা,
তাদের প্রতি করুণা ছাড়া কিছুই অবশিষ্ট নেই আমার।
হাত নামান। চিৎকার করবেন না। কী বলতে চান,
আমি জানি।
কমলাপুর বস্তি, রংপুরের শীতার্ত, রামুর সংখ্যালঘু,
গার্মেন্টস কর্মী, কুষ্ঠ রোগীদের আপনারা কেউ কেউ
সমান অধিকার দিতে চান!
বিষয়টা কেবল হাস্যকরই নয়
বরং আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।
"যীশু আমাদের রক্ষা করুন"
হ্যা, এটা ঠিক যে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ সংসদ ও অন্যান্য
নির্মাণে শ্রমিকের অবদান অনস্বীকার্য কিন্তু
বিনিময়ে তারা পেয়েছে উপযুক্ত মজুরী।
উপযুক্তই বটে।
সবার জন্য তিন বেলা খাওয়া জরুরী নয়।
দেশের জন্য ত্যাগ সকলকেই করতে হয়
দেশটা সবার।
শুধু রাজনৈতিক আর অনৈতিক ব্যক্তিদের নয়।
কেউ হাসবেন না,
হাত তালি দিন। সেটাই নিয়ম।
অনিয়ম হলে সেটা দেখার জন্য ভগবান আছেন।
পাপ নিয়ে ভাববেন না,
প্রায় প্রতিটি ধর্মেই অর্থের বিনিময়ে
পুন্য কেনার সুবিধা আছে;
আসুন প্রার্থনা করি, এবার যারা হজ্বে গেলেন
তারা যেন আগামি বছর গুলোতেও যেতে পারেন।
তীর্থ যাত্রীরা হতাশ হবেন না
এখানে সাম্প্রদায়িকতার কোন স্থান নেই;
গত বছর যে সম্প্রদায় না খেয়ে ছিল
এবারও তারা অনাহারী থাকবে। সংখ্যাটা বাড়বে।
বংশানুক্রমিকভাবে দারিদ্র, রাজপথ-ঘুম, চিকিৎসাহীন মৃত্যু,
অবহেলা, পতিতা; শব্দগুলো তারা মেনে নেবে এটা স্বাভাবিক নিয়ম।
অনিয়ম হলে বুদ্ধের ধ্যান ভেঙে যাবে। সেটা পাপ।
প্রয়োজন একাগ্র চিত্তে নিস্পাপ শুদ্ধ হাওয়া সঞ্চালন,
না পেলে আপনাদের সাহায্যে যথার্থ ব্যবস্থা নেয়া হবে। কথা দিচ্ছি।
প্রতিটি ধর্মালয়ে দোয়া, পূজা, ধ্যান, কীর্তন আয়োজন করা হবে,
জানেন নিশ্চয়ই ঢাকা মসজিদের শহর
বাংলাদেশ পীরের দেশ
মাজারে মাজারে উৎসব হবে রাতদিন
মৃত খাজা বাবারা আপনাদের কল্যাণ সাধনা করবেন।
মাটি, কাঠ, রঙ দিয়ে ঈশ্বরী তৈরিতে
এবং অন্যান্য পাপমোচন উৎসবে এবারও হিন্দুরা
উদার অর্থনীতি গ্রহণ করবেন আশা করি।
শিব লিঙ্গের জন্য খাঁটি দুধের ব্যবস্থা আছে যথেষ্ট,
সেখানে ভিক্ষের জন্য কোন মূর্খ যেন নিষিদ্ধ প্রবেশ না করে,
সেনা মোতায়ন করা হবে প্রয়োজনে।
সাম্প্রতিক মন্দির-মসজিদ-প্যাগোডার দুরাবস্থা; আমরা সমব্যথী।
পোপ, পুরোহিত, ইমামের বিরুদ্ধেও কুৎসা তোলে কতিপয় মূর্খের দল!
জাহান্নাম, নরক সুনিশ্চিত।
পাপ বেড়ে যাচ্ছে পৃথিবীতে জ্যামিতিক হারে,
ধর্মীয় ঘরের সংখ্যা বৃদ্ধিতে চাই সচেতন পৃষ্ঠপোষকতা।
স্থানের অভাব হবে না নিশ্চয়ই
নিরীহ আমজনতা ঘরের চেয়ে পথে থাকতেই বেশি
ভালবাসে। ধর্মকেও নিশ্চয়ই। তারা ধর্মপ্রাণ।
রাজপথে ঘুমের সংখ্যা বৃদ্ধিতে দেশের ক্ষতি নেই
ধর্মীয় কাজে শ্রমিকেরা তুলনামূলক কম পারিশ্রমিক নেবে বলেই আমার বিশ্বাস।
দেশের অবস্থা ভাল নয়।
দেশটা আমাদের সকলের আগেই বলেছি।
শুনেছি কিছু ঘরও পুড়েছে; কিছু মানুষও;
ভাববার বিষয়। পরে ভাবা যাবে।
আগে দেশকে নিয়ে ভাবুন।
শুনলাম; আজ এক পাষাণী তার নিস্পাপ
শিশু সন্তান নিয়ে আত্মহত্যা করেছে !
নারীটির কঠিন বিচার প্রয়োজন আপনারা
একবাক্যে স্বীকার করবেন
এবং নারীটিকে উত্তোলন করে পুনরায় ধর্ষণের পক্ষেও
রায় দেবেন কেউ কেউ খাঁটি দেশ প্রেমিক।
নয়াদিল্লীর ঘটনাটা আপনারা শুনে থাকবেন,
বাংলাদেশেও এসব হচ্ছে নাকি আজকাল-
নারী কল্যাণ সংগঠনগুলো খবর রাখেন আশা করি।
ধর্ষণ এবং পর্দাবিষয়ক কিছু কলাম আমিও পড়েছি
আপনাদের দৃষ্টিভঙ্গি ও শারীরিক প্রবৃত্তিকে বিনম্র শ্রদ্ধা
জানিয়েই বলছি, "আর একটু সভ্য হতে আপনারা পারেন"।
ককুর মানুষে এইটুকু ব্যবধান থাকা কাম্য
নইলে মানুষ খুঁজতে একদিন যাদুঘরে যেতে হবে।
আপনাদের প্রতি আমার অগাধ বিশ্বাস
"ঈশ্বর আপনাদের মঙ্গল করুক"
আজ যাচ্ছি।
আকাশ চুরি, মাঠ চুরি, মূল্যবোধ চুরি এবং
অন্যান্য নিয়ে আর একদিন বলব।
যাচ্ছি। -
মিটিং আছে মানবাধিকার কমিশনে।
দেখা হবে।