আজকের কবিতাঃ
কোথাও নেই তুমি
- রাবেয়া
নিকষ অন্ধকারে স্বপ্নচারিণী শয্যা আমার
শিয়রে তোমার স্পর্শে শিহরিত হই--হঠাৎ ভেঙে
যায় ঘুম,
শূন্যতায় ডুবে চোখ মেলে দেখি--কোথাও
নেই তুমি ।
আমার আজন্ম হাহাকার হয়ে, বুঝেও নাবোঝার ভান
করো,
দূর থেকে শুধুই তীব্র কটাক্ষে হাতছানি দিয়ে
ডাকো,
না হয় মিথ্যে করে বলো একবার, ভীষণ
ভালোবাস !
ছিলনা দমকা বাতাস শুধু নীরব বৃষ্টি।
বৃষ্টিভেজা একটি দিন অথবা রাতে
স্বপনে দেখেছিলা্ম--
আলতো স্পর্শে ছুঁয়েছি তোমার হাত, চমকে
ফিরে চাইলে বুঝি,
ডাকলাম মৃদু স্বরে "বাঁদর"
চিলতে হাসি দিয়ে হাত বাড়িয়ে বললে "বাঁদরী "
সেই অনুভবে আমার ঘুম ভেঙে যায়
মনে পড়লো তুমি--আমি মাঝখানে সাত সমুদ্দুর
দূরত্ব
তুষার ঝরছে অঝরে জানলার বাইরে।
----#----
★প্রিয়তমর কাঙ্খিত স্পর্শে ঘুম ভেঙে গেলে, কথক বুঝতে পারেন, এ কেবল স্বপ্ন! এ স্পর্শ বাস্তব নয়। গভীর শূন্যতায় ডুবে যায় চরাচর। আর সমস্ত হৃদয় জুড়ে হাহাকার করে উঠে শুধুই একটি সুরঃ "কোথাও নেই তুমি।"
★প্রিয়তম হচ্ছে কথকের "আজন্ম হাহাকার" না পাওয়ার বেদনার যে অনুভুতি তা অত্যন্ত স্পষ্ট হয়ে উঠছে এ দুটো মাত্র শব্দে।
প্রিয়তম কথকের মনের অবস্থা জানে, তবে না জানার অভিনয় করে আর দূর থেকে হাতছানি দিয়ে ডাকে কিন্তু কাছে আসে না।
★ভালবাসার তীব্র আকাঙ্খা মানুষকে নির্লজ্জ করে দেয়, কখনো কখনো এমন অবস্থাও হয় যে দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর মতো নকল ভালবাসাতে হলেও খুঁজে পেতে চায় কাঙ্খিত প্রেম! আর তাই কথক বলেন "মিথ্যে করে বলো একবার, ভীষণ
ভালোবাস !
★কবি সেদিনের একটা স্বপ্ন দৃশ্য বর্ণনা করেন যেদিন " ছিলনা দমকা বাতাস শুধু নীরব বৃষ্টি।"
স্বপ্নে কথক একটা মধুর দৃশ্য অবতারণা করেন। দৃশ্যে দুজন দুজনকে বাঁদর আর বাঁদরী বলে সম্বোধন করেন। দৃশ্যটা মধুর সন্দেহ নেই, কিন্তু আমি মনে করি এটা সঠিক জায়গায় প্রয়োগ হয় নাই। কেননা এ কবিতার মূল সুর বিষণ্ণতা ও না পাওয়ার হাহাকার এবং এ পংক্তির আগ পর্যন্ত সেই সুর অব্যাহত ছিল। কিন্তু এ পংক্তিতে বেসুরো হয়ে কবিতার "টোন" হালকা হয়ে গেল। কবি একেবারে প্রথমে এ দৃশ্য নিয়ে আসতে পারতেন। তাহলে পাঠক হয়তো অনেক বেশী শিহরিত হতো।
★স্বপ্ন ভাঙার পর কথকের মনে পড়ে তাদের "মাঝখানে সাত সমুদ্দুর দূরত্ব"। এর পর কথক তার মনের অবস্থা আর সমস্ত জীবন জুড়ে যে সীমাহীন শূন্যতা তার সুদৃশ্য বর্ণনা দেন এ সুন্দর পংক্তির মাধ্যমেঃ
"তুষার ঝরছে অঝরে জানলার বাইরে।"
★স্থান কাল পাত্র এবং কবিতার "টোন" বিবেচনা করে শব্দ চয়ন ও বাক্য বিন্যাস করলে কবিতা আরো বেশি উপভোগ্য হতো বলেই আমি মনে করি।
★কবি রাবেয়ার সবচেয়ে বড় শক্তি তিনি শব্দ দিয়ে নিখুঁত দৃশ্য আঁকতে পারেন। এ কবিতা পড়তে পড়তে পাঠকের সত্যিই মনে হবে "কবিতা এমন এক চিত্রকর্ম, যা কথা বলে।"
শুভ কামনা কবির জন্য।
হ্যাপি রাইটিং :)