আজকের কবিতা

আমি কথা রেখেছি
- তপন দাস

কেমন আছো তুমি?
নিশ্চয় অপ্রত্যাশিত লাগছে?
ভাবছো এতদিন পর আবার উটকো ঝঞ্ঝাট!
জানি, ভাবলেও মুখে বলবেনা।
ক্ষণিকের জন্য হলেও ভালোবেসেছিলে
যে!
তোমার সেই ময়নাকে দেখছিনা কেন?
আমাকে দেখলেই যে বলতো-
"বালো আচো, বালো আচো"
আমি আধো আধো গলায়
ওকে নকল করে বলতাম-
বালো আচি,বালো আচি,
তুমি ক্যামোন আচো,ক্যামোন আচো?
আমার মতো তাকেও কি তুমি...?
না না সেটা তুমি পারবে না,
ময়না যে তোমার প্রাণ!
প্রেমের খেলায় আমি হারলেও
ময়না তোমাকে ভীষণ ভালোবাসতো।
তোমার মনে আছে সেই যে,
যেবার তুমি জ্বরে পড়েছিলে,
সাত সাত দিন তোমার মাথার কাছ থেকে নড়েনি।
আমাকে দেখলেই,উড়ে আসতো,
আমার কাঁধে বসে কি যেন বলতো-
আমি তখন বুঝিনি তার ভাষা,
এখন বুঝি,
ময়নাকে বোলো,
আমি এসেছিলাম, তার কথা শুনতে।
তাকে বোলো-
আমি আমার কথা রেখেছি।

----#----

★যদিও চিঠি নয়; তবুও এ কবিতার মধ্যে একটা "চিঠি চিঠি" ব্যাপার আছে। তাই কবিতাটা পড়ে পাঠক একজন আহত প্রেমিকের লেখা করুণ চিঠির স্বাদ পাবে। অন্তত আমি পেয়েছি।

★ অনেক দিন পর দেখা করতে  গিয়ে কবিতার কথক বুঝতে পারেন যে "পুরনো প্রেমিকা" তাকে দেখে "উটকো ঝঞ্ঝাট" মনে করলেও মুখে কিছু বলতে পারবে না। কেননা সে " ক্ষণিকের জন্য হলেও ভালোবেসেছিল যে!"


★একসময় কথক খেয়াল করেন (এবং পাঠকও খেয়াল করতে বাধ্য হন!) তার প্রেমিকার পোষা ময়নাটা আর নেই! একটু সন্দেহপ্রবণ হয়ে কথক বললেন "আমার মতো তাকেও কি তুমি...?"

ওয়েট!

কবি কিন্তু এখানে কিছু না বলে অনেক কিছুই বোঝানোর সুন্দর একটা টেকনিক অবলম্বন করেছেন। কখনো কখনো মৌনতার চেয়ে বড় কোন বক্তব্য থাকেনা। তাই যারা নিজের লেখা উন্নত করতে চান, তারা এই কৌশল প্রয়োগ করতে পারেন ; অবশ্যই সঠিক জায়গায়!! খেয়াল করুন এই   ময়না এবং কথক এদুটো ব্যাপারকে মিলিয়ে পাঠকই কল্পনা করে নেয়, কি ঘটে গিয়েছিল কথকের জীবনে!

★ নানা কথা বিনিময় হওয়ার পর কথক আমাদের জানালেন  যে ওই ময়নাটা " কাঁধে বসে কি যেন বলতো" যার ভাষা তিনি সঠিক সময়ে বুঝেন নাই।

মানুষ চিরকালই নৌকা চলে যাওয়ার পর ঘাটে দাঁড়ায়! এই ট্রাজেডি থেকে বোধহয় আমাদের মুক্তি নেই।

যা হোক এখন তিনি বুঝেন.... তবে কি সেই ব্যাপার পাঠক হয়তো তা একটু অনুভব করতে পারেন, কিন্তু বুঝতে পারেন না মোটেই। কেননা কথক তা আমাদের জানাতে চান নাই। রহস্য রেখেছেন!

★"আমি আমার কথা রেখেছি"
আমি মনে করি এই ছোট বাক্যটাই পুরো কবিতার প্রাণ। এই "মেসেজ" দেয়ার জন্যই কবি নানান বিষয়ের অবতারণা করেছেন। এবং ঠিক এই পংক্তিতে এসে পাঠক শিহরিত না হয়ে পারে না। কোন কিছু স্পষ্ট না জেনেও পাঠক তার অজান্তেই কথকের জীবনে ঘটে যাওয়া একটা গল্পের ছবি আঁকতে শুরু করে! এর আগে যা একটু অগোছালো লাগছিল, এ পংক্তিতে এসে সেটা কেটে গিয়ে সবকিছুই একটা "ফ্রেমের" মধ্যে চলে আসল।

★কবিতার বিন্যাস আলাদা আলাদা স্তবকে হলে, পাঠে বোধহয় আর একটু বেশী "কমফোর্ট" "ফীল" হতো।

★কবি তপন দাসের হাতে লেখার নানান কৌশল রপ্ত আছে,এবং তিনি তা প্রয়োগ করেন বলেই আমি মনে করি। এর সাথে সঠিক শব্দ চয়ন ও বাক্য বিন্যাসের শক্তি যদি যোগ হয় ....!!

হ্যাপি রাইটিং :)