বাঙালি জাতি চির দুর্বার, চির দুর্মর। যুগে যুগে তারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার থেকেছে। শক্তিবলে অসম হলেও তারা ব্রিশিদের সামনেও কখনো মাথা নত করেনি। পাকিস্তানী শোষকগোষ্ঠীর দুঃশাসন, অত্যাচারে জর্জরিত বাঙালি দৃঢ়কন্ঠে অন্যায়ের প্রতিবাদ জানিয়েছে। ৫২’র হার না মানা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠা করেছে নিজেদের মাতৃভাষার অধিকার। ধীরে ধীরে দৃপ্ত পদক্ষেপে এগিয়ে গেছে স্বাধিকার আন্দোলনের দিকে। এ সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় বাংলার মাটিকে চিরতরে স্বাধীন করার বীজ বপন করা হয় ১৯৬৬ সালের ছয় দফার দাবীর মধ্যে দিয়ে। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিরোধী দল নেতৃবৃন্দ ১৯৬৬ সালের ফেব্র“য়ারি মাসে লাহারে দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য নিখিল পাকিস্তান জাতীয় কনফারেন্স আহ্বান করেন। শেখ মুজিব প্রথমে এই সম্মেলনে যোগদানে অসম্মতি জানালেও আওয়ামী লীগের অন্যান্য সিনিয়র নেতৃবৃন্দের অনুরোধে ওই সম্মেলনে যোগদান করে ঐতিহাসিক ৬ দফা দাবী পেশ করেন। কিন্তু ওই কনভেনশনে ৬ দফা গৃহিত হয়নি। পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির অনুমোদনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। ওয়ার্কিং কমিটির সভায় বেশ কিছু সদস্য ৬ দফা কর্মসূচী তাদের সাথে কেন আলোচনা করে দেয়া হয়নি সে ব্যাপারে শেখ মুজিবুর রহমানকে দোষারোপ করতে থাকে। ওই সভায় শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে দোষারোপের মাত্রা বৃদ্ধি  পেতে থাকলে বিরক্ত হয়ে চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের সংগ্রামী সাধারণ সম্পাদক এম এ আজিজ (কালা আজিজ) ও জহুর আহমেদ চৌধুরী ওঠে দাঁড়িয়ে টেবিল চাপড়ে হুংকার দিয়ে ঘোষণা দেন যে, মুজিব ভাই, ওয়ার্কিং কমিটি অনুমোদন করুক বা না করুক তাতে কিছু আসে যায়না-আমরা দু’জনও ৬ দফাকে মেনে নিয়ে পূর্ব বাংলার ঘরে ঘরে যাবো। আমরা ৬ দফার পক্ষে আছি।’ আজিজ-জুহুরের এ হুমকিতে ভীত হয়ে রাজশাহীর আওয়ামী লীগ নেতা মুজিবুর রহমান (মুজিবুর রহমান ৬ দফার ব্যাপারে ওয়ার্কিং কমিটির সভায় শেখ মুুজিবকে দোষারোপে খুব প্রগলভ  ছিলেন। একাডেমীক লেখাপড়াও তার দখল ছিল দারুন। বৃটিশ আমলে আইসিএস পাশ করেও আমলা হয়নি। পেশায় আইনজীবী। দীক্ষায় রাজনীতি। দ্রোহে প্রতিশোধের রক্ত। বাঙালির স্বাধীনতা পাওয়ায় তার মূল্য লক্ষ্য। কোন অন্যায় সহজে গ্রহণ করতে পারতেন না। শোষক পাকিস্তান প্রেসিডেন্ট আইয়ুব এর ‘প্রভূ নয়, বন্ধু ’ বইয়ের জবাবে তিনি লিখেন ‘বন্ধু নয়, শত্র“’ নামে একটি বই। রাজনৈতিক জীবনেও অনেক বার জেল খেটেছেন) সহ বিরোধীতাকারী  চুপসে যায়। পরে সর্ব সম্মতক্রমে ওই ওয়ার্কিং কমিটির সভায় ৬ দফার অনুমোদন হয়।১ আওয়ামী লীগের এ কর্মসূচী মুখ্যত পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীকে শংকিত করে তুলে। শেখ মুজিব ৬ দফা কর্মসূচিকে ‘আমাদের (বাঙালির) বাঁচার দাবি’ হিসেবে আখ্যায়িত করে তা নিয়ে পূর্ব বাংলার জনগণের দরবারে হাজির হন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক উত্থাপিত ছয় দফা দাবী বাঙালী জাতির স্বাধীকার আন্দোলনের ভিত্তিস্তম্ভ স্বরূপ। ছয় দফা বাঙালীর “মুক্তির সনদ”। বহুকাল থেকে অন্যায়, অবিচার ও বৈষম্যের শিকার বাঙালী জাতি “ছয় দফা দাবী” প্রস্তাবের মধ্য দিয়ে নতুন দিক নির্দেশনা পেয়েছিল। এর পর ১৮ মার্চ আওয়ামীলীগের ওয়াকিং কমিটির সভায় ছয় দফা (পরিশিষ্ট ১ দ্রষ্টব্য) প্রস্তাব এবং দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলনের কর্মসূচী গৃহীত হয়। বঙ্গবন্ধু ও তাজউদ্দিন আহমেদের বিশ্লেষণ সহ একটি পুস্তিকা প্রকাশ করা হয়। ৬ দফা প্রকাশিত হবার সঙ্গে সঙ্গে সরকার ও দক্ষিণপন্থী প্রতিক্রিয়াশীল রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। সরকার আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নানা দমননীতিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে। দক্ষিণপন্থী দলগুলি ৬ দফার নানা অপব্যাখা প্রদান করে আওয়ামী লীগ কে বিচ্ছিন্নতাবাদী রুপে চিহ্নিত করে।
মস্কোপন্থী বলে পরিচিত কমরেড মণি সিংহ, আবদুস সালাম ওরফে বারীন দত্ত, খোকা রায়, মোহাম্মদ ফরহাদের নেতৃত্বে পরিচালিত আন্ডারগ্রাউন্ডে থাকা কমিউনিস্ট পার্টি এবং অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদের নেতৃত্বে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ন্যাপ (মোজাফ্ফর) ৬ দফা দাবীর প্রতি সমর্থন জানায়। এরপর থেকে ৬ দফা কর্মসূচীর অনুকূলে গণসমর্থন আদায়ের লক্ষ্যে সারাদেশে গণসংযোগ শুরু হয়। তিন মাস ব্যাপী একটানা গণসংযোগ চলে সারাদেশে।২ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ‘৬ দফা কর্মসূচীর’ প্রচারণায় পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন জেলা পরিদর্শন করেন। এই ঐতিহাসিক ৬ দফা সারা বাঙ্গালী জাতির মুক্তির সনদ সারা বাংলার মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছিয়ে দেওয়ার জন্য আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমান চট্টগ্রামে ছুটে আসেন। চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী জে.এম.সেন হলে ৬ দফা উপর শেখ মুজিবুর রহমান ভাষন দান করেন। চট্টগ্রাম বিভাগের আওয়ামী লীগের বিপুল সংখ্যাক নেতাকর্মী ইতিমধ্যে চট্টগ্রামের জনসভায় যোগদান করেছেন। ৬ দফার দাবীর পক্ষ্যে গণজোয়ার সৃষ্টির লক্ষ্যে কক্সবাজার আওয়ামী লীগের সভাপতি আফসার কামাল চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নুর আহমদ, কোষাধ্যক্ষ একেএম মোজাম্মেল হক, প্রচার সম্পাদক জালাল আহমদ, এডভোকেট আনচার চৌধুরী, ছালেহ আহমদ চৌধুরী, শেখ মকবুল আহমেদ সিকদার, এডভোকেট মওদুদ আহমেদ, নুরুল আজিম চৌধুরী, নুরুল আবসার চৌধুলীসহ প্রায় ৫০ জনের মতো আওয়ামী লীগ নেতা ওই সভায় যোগদান করেছিলেন বলে ওই সভায় যোগদানকারী কক্সবাজার মহকুমা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম (বর্তমানে দৈনিক কক্সবাজার সম্পাদক) তার রচিত ‘আমার দেখা শেখ মুজিব ও কক্সবাজারের স্বাধীনতা সংগ্রাম’ নামক প্রবন্ধে উল্লেখ করেন।  মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম ‘ছয় দফা কী ও কেন? ’এবং ‘ইসলামের দৃষ্টিতে ছয় দফা’ নামে দুটি পুস্তিকা লিখে ছয়দফার পক্ষে কাজ করেন।
সারাদেশের ন্যায় কক্সবাজারেও ৬ দফার প্রচার অভিযান চালানো হয়েছে। ১৯৬৬ সালের মার্চ মাসে চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামলী লীগৈর সহ সভাপতি অ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলাম, কক্সবাজার মহকুমা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবসার কামাল চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নুর আহমদ, মহকুমা আওয়ামী লীগ নেতা এডভোকেট মওদুদ আহমদ, জালাল আহমদ, এডভোকেট ফজলুল হক, ফয়েজ আহমদ চৌধুরী, মনিরুল হক চৌধুরী, একে.এম.মোজাম্মেল হক, তৎকালিন ছাত্রলীগ নেতা কামাল হোসেন চৌধুরী, নজরুল ইসলাম চৌধুরী, গোলাম রাব্বান প্রমুখ নেতৃবৃন্দ ৬ দফার প্রচারাভিযানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। মার্চ  মাাসের শুরুতে এডভোকেট জহিরুল ইসলাম, এডভোকেট নুর আহমদ ৬ দফা দাবি ও বাঙালির জাতির মুক্তি সনদ হিসেবে আপামর বাঙালি জাতির কাছে পৌঁছে দেয়ার উদ্দেশ্যে উখিয়ায় এক সভা হয়। উখিয়া স্টেশনে সিরাজুল হক প্রকাশ গুরা মিয়া এবং বিকম আলী আহমদ সিকদারের সহায়তায় ৬ দফা প্রচারের সমর্থনে সভায় এডভোকেট জহিরুল ইসলাম, এডভোকেট নুর আহমদ, ন্যাপ মোজাফ্ফর নেতা ইলিয়াছ মাস্টার, উখিয়া হাই স্কুলের শিক্ষক আবদুল হক চৌধুরী, সিরাজুল হক প্রকাশ গুরা মিয়া, ছাত্র ইউনিয়ন নেতা নুরুল ইসলাম চৌধুরী প্রকাশ ঠান্ডা মিয়া, ছাত্রলীগ নেতা শাহজাহান চৌধুরী, আবদুল করিম, ছাত্র ইউনিয়ন নেতা ইব্রাহিম আজাদ, সুরক্ষিত বড়–য়া, আবুল কাসেম প্রকাশ মামা কাসেম, শাহাবুদ্দিন চৌধুরী, ছাত্র শক্তি নেতা কামাল উদ্দিন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
পরবর্তীতে সময়ে চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি জহিরুল ইসলাম, কক্সবাজার মহকুমা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি অ্যাডভোকেট ফজলুল হক, কক্সবাজার মহকুমা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুর আহমদ প্রমুখ নেতৃত্বের উদ্যোগে ঈদগাও স্টেশনে বৈঠক ও সভা অনষ্ঠিত হয়। শিক্ষা দীক্ষায় ও রাজনীতির অনগ্রসর কক্সবাজারে মূলত মুসলীম লীগ ও নেজাম ইসলামী এবং জামায়াতের রাজনীতি ধারা রাজনীতির সক্রিয় থাকায় এবং মৌলভী ফরিদ আহমদ এর জন্ম স্থান হওয়ায় তাদের প্রভাব ছিল বেশী। যার ফলে আওয়ামী লীগের কোন অনুষ্ঠান কিংবা সভার অনুমোদন পাওয়া যেতনা সরকারের পক্ষ থেকে। যার ফলে ৬ দফা প্রচারের জন্য সে সময় কোন স্কুল, কলেজ, মাঠ কিংবা স্থান না পেয়ে অবশেষে ঈদগাঁও স্টেশনের এক চায়ের দোকানে সারতে হয় প্রোগ্রাম। ওই দিন আলাপচারিতার ঢঙ্গে ৬ দফার ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ এবং পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বৈষম্য তুলে বক্তব্য দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ করতে হয়েছে। পরে ৬ দফার প্রচারাভিযানের তৎকালিন চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগ নেতা গোলাম রব্বানের আহ্বানে চকরিয়ার ভেওলা মানিকচরে এক গণ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। ওই সভায় এডভোকেট জহিরুল ইসলাম, এডভোকেট নুর আহমদ, চকরিয়ার আওয়ামী লীগ নেতা ডা. শামসুদ্দিন আহমদ, শামসুল হুদা বিএসসি, সাজ্জাদ, রহিম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।৩
মহেশখালীতেও ছয় দফার প্রচার অভিযান চালানো হয়েছে। এ উপলক্ষ্যে কক্সবাজার মহকুমা আওয়ামী লীগ নেতা এডভোকেট মওদুদ আহমদ নিজ গ্রাম বড় মহেশখালীতে একটি জনসভার আয়োজন করে। ওই সভায় মহকুমা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নুর আহমদ, এডভোকেট জহিরুল ইসলাম, এডভোকেট রফিক উল্লাহ, অবিনাশ চন্দ্র দে, আবদুস সাত্তার, ছাত্র ইউনিয়ন নেতা আ ফ ম একরামুল হক, দীলিপ দাশ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
শাসক গোষ্ঠী তাকে রুখতে না পেরে বাধ্য হয়ে ছয় দফা প্রচারকালে ১৯৬৬ সালের ৯মে গ্রেফতার করে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর গ্রেফতার বীর বাঙালীকে দামাতে পারেননি। ৬ দফা বাস্তবায়ন ও বঙ্গবন্ধুসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে আওয়ামী লীগ নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের দিকে অগ্রসর হয়। ছাত্ররা এলাকায় এলাকায় সরকারের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামে। ১ জুনকে শিক্ষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে ছাত্র সমাজ। এ উপলক্ষ্যে দেশব্যাপী বিক্ষোভ সমাবেশ করার ঘোষণামতে সারাদেশের ন্যায় কক্সবাজারেও ৬ দফার দাবির সমর্থনে মিছিল সমাবেশ করতে থাকে ছাত্র সমাজ। শুধু কক্সবাজার শহরে নয়- থানায় থানায় শুরু হয় বিক্ষোভ মিছিল। অন্যান্য থানার তথ্য পাওয়া না গেলেও উখিয়া থানায়ও প্রতিবাদের ঝড় ওঠে-মিছিলে ভরপর হয়ে যায় উখিয়া। ৩১ মে ’৬৬ শুক্রবার সন্ধ্যায় উখিয়া স্টেশনে ছাত্রলীগ নেতা আবদুল জাব্বার চৌধুরী, শাহজাহান চৌধুরী, মধুসূদন চন্দ্র দে, সন্তোষ কুমার বড়–য়া, শামসুল আলম প্রকাশ গুরা মিয়া, সুলতান আহমেদ (ওই সময়ের উখিয়া হাই স্কুলের ৯ম শ্রেণীর ফাস্ট বয়) প্রমুখ ছাত্ররা এক বৈঠকের মাধ্যমে উখিয়া হাই স্কুলের এসেম্বলী থেকে সরকারি বিরোধী এবং ৬ দফা দাবির সমর্থনে শ্লোগানসহকারে মিছিল নিয়ে কোটবাজারের পালং হাই স্কুলে মিলিত হয়ে মিছিল সহকারে বিক্ষোভ সমাবেশ করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কথামতে, উখিয়া হাই স্কুলের এসেম্বলী ক্লাসের সময় মধূসূদন দে ছয় দফার দাবীতে সমর্থনে শ্লোগান দেয় এবং সাথে সাথে প্রায় ছাত্ররা মিছিল সহকারে উখিয়া হাই স্কুল থেকে বের হয়ে মিছিল সহকারে কোট বাজার স্টেশনে পৌছে পালং হাই স্কুলের ছাত্রদের মিছিলের সাথে মিলিত হয়ে যৌথ মিছিল সহকারে বিক্ষোভ সমাবেশ করার জন্য। কিন্তু ওই দিন পালং আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে শিক্ষকদের বাঁধার কারণে মিছিল বের করতে পারিনি। ওই দিন উখিয়া হাই স্কুলের ৯ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ছাত্রলীগ নেতা শাহজাহান চৌধুরী (সাবেক সাংসদ ও হুইপ), আবদুল জব্বার চৌধুরী, সন্তোষ কুমার বড়–য়া, মধুসূদন দে প্রমুখের নেতৃত্বে ওই স্কুলের ৯ম শ্রেণীর ছাত্র এবং স্কুলের ফাস্ট বয় সুলতান আহমেদ (মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রাথমিক শিক্ষক, পরবর্তীতে আইন পেশায় জড়িত হন), উখিয়া হাই স্কুল ছাত্র পরিষদের সহ সম্পাদক ছাত্র ইউনিয়ন নেতা কামাল উদ্দিন, ছাত্রলীগ নেতা আবদুল করিম, শামসুল আলম প্রকাশ গুরা মিয়া, ছাত্র ইউনিয়ন নেতা আবুল কাসেম (কাসেম মামা), ইব্রাহিম আজাদ (প্রয়াত প্রধান শিক্ষক, মরিচ্যা পালং উচ্চ বিদ্যালয়), উখিয়া হাই স্কুলের ১০ম শ্রেণীর ছাত্র নুরুল বশর, হ্নীলার জালাল আহমদ, কাজী গিয়াস উদ্দিন, সিরাজুল হক (পরবর্তীতে বিএ সিরাজ নামে পরিচিত)সহ কয়েকজন ছাত্র মিছিল সহকারে ১ জুনের শিক্ষা দিবসের বিক্ষোভ  মিছিল কোটবাজার থেকে রুমখা বাজারের উত্তর প্রান্তের মুরগী ও দইয়ের দোকান পর্যন্ত অগ্রসর হলে (সে সময় গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিও হচ্ছিল) পুলিশ ও এলাকার প্রবীণ মুরব্বী তাদের বাঁধা দিয়ে দোকানের এক কোণায় নিয়ে যায়। ওই সময় উখিয়া থানার দারোগা মিছিল থেকে শাহজাহান চৌধুরী, আবদুল জাব্বার চৌধুরী  ও সন্তোষ কুমার বড়–য়া নামে তিন ছাত্রকে আটক করে। ওই তিন ছাত্রই পাকিস্তান আমলে উখিয়া থানার প্রথম রাজবন্দি বলে ইতিহাস পাঠে জানা যায়। ওই দিন রাত্রে উখিয়ার কেন্দ্রিয় রাজাপালং ইউনিয়ন কাউন্সিল এর চেয়ারম্যান আবুল কাসেম চৌধুরী ও সন্তোষ কুমার বড়–য়ার কাকার জিম্মায় শাহজাহান চৌধুরী, আবদুল জব্বার চৌধুরী ও সন্তোষ কুমার বড়–য়াকে থানা থেকে ছেড়ে দেয় পুলিশ ৪
৬ দফা আন্দোলনের প্রথম তিন মাসেই শেখ মুজিবুর রহমানকে ৮বার গ্রেফতার করা হয়। সাথে কয়েকজন জাতীয় নেতাকেও। ৬ দফা নিয়ে মাঠে নামার পর থেকেই আওয়ামী লীগ বাঙালির স্বাধিকার ইস্যূতে চাম্পিয়নরুপে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে শুরু করে। প্রচন্ড আঘাতে বিধ্বস্ত হয়ে পড়লেও শেখ মুজিবুর রহমান তার দাবির সাথে আপোস করেন নাই। তার সাহসী ভূমিকা দিয়ে তিনি মানুষের জয় শুরু করেন। ১৯৬৬ সালের ৭ই জুন বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে ৬ দফা বাস্তবায়ন গ্রেফতারকৃত অন্য রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মুক্তির দাবীতে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে সমগ্র পূর্ব বাঙলায় সারা দেশে হরতাল পালিত হয়। ওই হরতাল শুধু ৬ দফা নয়, শ্রমিক ও সাধারণ মানুষের দাবী নিয়ে পালিত হয়। ধর্মঘট পালন কালে পুলিশের গুলিতে তেজগাঁর শ্রমিক মনু মিয়াসহ ঢাকা, টঙ্গী ও নারায়নগঞ্জে ১৩ জন নিহন হন। ছাত্র যুব সমাজের পাশাপাশি শ্রমিক শ্রেণীর দৃপ্ত অংশ গ্রহণ আন্দোলনে এক নতুন মেজাজ ও মাত্রাযুক্ত করে। আওয়ামী লীগ ও গণতান্ত্রিক শক্তির পর নেমে আসে প্রচন্ড নির্যাতন। এভাবে আইয়ুব সরকারের জেল জুলুম হত্যা নির্যাতন ৬ দফা আন্দোলনের বৈপ্লবিক রুপান্তর ঘটায়। সভা-সমাবেশ, ধর্মঘট, পোস্টার লিফলেট ইত্যাদির মাধ্যমে ৬ দফা কর্মসূচী পূর্ব বাঙলা তথা পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের মধ্যে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং তাদের বাঁচার দাবিতে পরিণত হয় ।৫
সারা বাংলাদেশে ৬ দফার আন্দোলন জোরদার হতে থাকে। অতঃপর আয়ুব-মোনায়ম চক্র ১৯৬৭ সালের ডিসেম্বর মাসে পূর্ব বাংলার কয়েকজন সামরিক ও বেসামরিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে পাকিস্তান স্বার্থ বিরোধী ষড়যন্ত্র মামলার অভিযোগ আনেন। ৬ দফা আন্দোলকে নস্যাৎ করার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল এই মামলার। সরকার এই মামলাকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা নামে আখ্যায়িত করে। ১৮ জানুয়ারি এক প্রেসনোটে শেখ মুজিবকে এই মামলায় জড়ানো হয়। তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, পরিকল্পনা ও পরিচালনার অভিযোগ আনা হয়। এক নম্বর আসামী শেখ মুজিবুর রহমানসহ মোট ৩৫ জনকে এই মামলার আসামী করা হয়। ১১ জনকে রাজ সাক্ষী হওয়ায় ক্ষমা প্রদর্শন করা হয়। এই মামলা সুস্পষ্টভাবে একটি সাজানো নাটক ছিল। মামলার মুল বিষয়বস্তু অভিযুক্ত ব্যক্তিরা ভারতীয় যোগসাজসে ও ভারতীয় অস্ত্রশস্ত্রের সাহায্যে পূর্ব পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র করার প্রচেষ্টা। এই মামলার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ৬ দফার জনসপক্ষে শেখ মুজিবুর রহমানসহ ওরা ক’জন সৎ সাহসী বাঙালীকে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলিয়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির মাধ্যমে পূর্ব বাংলার স্বার্থ ও আন্দোলনকে চিরদিনের মত কণ্ঠরোধ করে দেওয়া। এই মামলা ও ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে সারা বাংলার ছাত্রজনতা আন্দোলনে মেতে উঠে।
কক্সবাজার মহকুমা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে প্রতিবাদ সভা আহবান করা হয়। কক্সবাজার মহকুমা আওয়ামী লীগের সভাপতি আফসার কামাল চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সভার প্রস্তুতি সভায় সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নুর আহমদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম, কোষাধ্যক্ষ একেএম মোজাম্মেল হক, ছাত্রলীগ নেতা নজরুল ইসলাম চৌধুরী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
সারা জেলায় প্রতিবাদ সভার প্রচারণা চালানো হয়। এ দিকে কক্সবাজারে এ সভা হচ্ছে জেনে স্পেশাল পুলিশ ও ইপিআরকে চট্টগ্রাম থেকে ম্যাজিস্ট্রেট পাঠানো হয়েছে যারা  প্রতিবাদ যারা করবে তাদের  গ্রেফতার করতে। অনেক বাধা বিপত্তির মধ্যেও পূর্ব নির্ধারিত বড় বাজারে গণ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। মহকুমা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবসার কামাল চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাক নুর আহমদ অসুস্থতার কারণে অনুপস্থিত থাকার কারণে মহকুমা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ এ কে এম মোজাম্মেল হকের সভাপতিত্বে সভা শুরু হয়। ছাত্রলীগ নেতা নজরুল ইসলাম চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন কক্সবাজার মহকুমা আওয়ামী লীগের অন্যতম সহ-সভাপতি ফয়েজ আহমদ চৌধুরী। প্রধান অতিথির ভাষনে আগত সংগ্রামী জনতাকে অভিনন্দন জানিয়ে তার বক্তব্যে বলেন, আমাদের সোনার বাংলা আজ পশ্চিম পাকিস্তানের শোষনের কারনে মরুভুমিতে পরিণত হয়েছে। এদের অত্যচার-অবিচার হতে বাঁচতে হলে ৬ দফা আমাদের বাঁচা-মরার দাবি আমাদের প্রিয় নেতা শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে যে মিথ্যা মামলা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দিয়ে বাংলাদেশের মানুষের ন্যায্য দাবি দাবিয়ে রাখতে পারবেনা। আমরা যেকোন মূল্যে আন্দোলনের মাধ্যমে তাকে ছেড়ে আনবই।
ওই প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখেন মহকুমা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম, প্রচার সম্পাদক জালাল আহমদ, আওয়ামী লীগ নেতা মোজাফ্ফর সওদাগর, জামাল হোসেন চৌধুরী, ছাত্র নেতা কামাল হোসেন চৌধুরী। ৬
৬ দফা আন্দোলনে আপোষহীন ইসলামপন্থী জামায়াত ই ইসলামী, নেজাম ই ইসলামী, কনভেনশন মুসলীম লীগ  সংগঠন ৬ দফার বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে মিছিল মিটিং করে। অপরদিকে বাঙালির আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকারের সংগ্রামী স্বাধীনতাকামী আওয়ামী লীগ- ছাত্রলীগ, পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি, ন্যাপ মোজাফ্ফর, ছাত্র ইউনিয়ন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে স্বাধীন বাঙলাদেশ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে ব্যাপক প্রচারাভিযানে সাহসী ভূমিকা ছিল প্রকম্পিত, তাদের মধ্যে অগ্নিযুগের বিপ্লবী কমরেড এডভোকেট সুরেশ সেন, বিপ্লবী কংগ্রেস নেতা জ্যোতিশ্বর চক্রবর্তী,  চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি জহিরুল ইসলাম, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ নেতা এডভোকেট মওদুদ আহমদ, কক্সবাজার মহকুমা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবসার কামাল চৌধুরী, সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট ফজলুুল হক, মনিরুল হক চৌধুরী, ফয়েজ আহমদ চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নুর আহমদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম, কোষাধ্যক্ষ এ কে এম মোজাম্মেল হক, প্রচার সম্পাদক জালাল আহমদ, আওয়ামী লীগ নেতা সমশের আলম চৌধুরী, শেখ মকবুল আহমদ সিকদার, এডভোকেট মোজাম্মেল হক, ছালেহ আহমদ চৌধুরী, মোসলেম খান, মজাফ্ফর সওদার, জামাল হোসেন চৌধুরী নুরুল আজিম চৌধুরী, বাদশা মিয়া চৌধুরী, আলী আহমদ বিকম, বখতিয়ার আহমদ চৌধুরী, শামসুল হুদা বিএসসি, মোজাফ্ফর সওদার, জামাল হোসেন চৌধুরী প্রমুখ অবদান রাখেন।
ছাত্রদের মধ্যে কামাল হোসেন চৌধুরী, কেন্দ্রিয় ছাত্রলীগ নেতা এটিএম জাফর আলম চৌধুরী, কৃষ্ণ প্রসাদ বড়ুয়া, নজরুল ইসলাম চৌধুরী, চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগ নেতা গোলাম রাব্বান, ছাত্র ইউনিয়ন নেতা ইদ্রিস আহমদ (১৯৬৫-৬৬ সালের কক্সবাজার কলেজ সংসদের ভিপি), নুর বক্স (১৯৬৫-৬৬ সালের কক্সবাজার কলেজ সংসদের জিএস), সুভাষ দে, সিরাজুল মোস্তফা, নুরুল ইসলাম চৌধুরী প্রকাশ ঠান্ডা মিয়া, আবুল কাসেম, সাইফুল্লাহ খালেদ, আবদুল মাবুদ সিকদার, দীলিপ দাশ, ছাত্রলীগ নেতা শাহজাহান চৌধুরী (সাবেক হুইপ, বর্তমানে কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি), সাজ্জাদ, রহিম, আবদুল জাব্বার চৌধুরী, সন্তোষ কুমার বড়–য়া, সুরক্ষিত বড়–য়া, আবদুল করিম, রাজা মিয়া, তৈয়ব উল্লাহ চৌধুরী, নুরুল আবছার সহ আরো অনেকে।
অপরদিকে স্বায়ত্বশাসনের ভিত্তিতে আপোষকামী জনপ্রিয় কেন্দ্রিয় বাগ্ময় সদস্য মৌলভী ফরিদ আহমদ, খতিবে আজম মাওলানা সিদ্দিক আহমদ, আজিজুর রহমান প্রকাশ লাল আজিজ, মাওলানা আফজাল আলী, জিন্নাত আলী, মোহাম্মদ রশিদ বিএ, আবদুল গফুর চৌধুরী, জাফর আলম চৌধুরী, মোখতার আহমদ চৌধুরী, জালাল আহমদ চৌধুরী, মৌলভী জাকারিয়া, উখিয়ার মকবুল 'আহমদ সিকদার, ঈদগাঁও’র জালাল আহমদ ফরাজি প্রমুখ পাকিস্তান সমর্থক ইসলামপন্থীর দল পাকিস্তানের পক্ষ নেয়।৭
ছয় দফার আন্দোলন বেগমান হতে হতে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ায় পূর্ব বাংলাকে স্বাধীন করার অভিপ্রায়ও যুক্ত হতে থাকে সবার মাঝে। স্বাধীনতাকামী প্রত্যেক দলের নেতারাই পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়ে স্বাধীন বাংলা প্রতিষ্ঠার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। এরই ধারাবাহিকতায় সিরাজ সিকদারের নেতৃত্বাধিন পূর্ববাংলা শ্রমিক আন্দোলনের রাজনৈতিক থিসিস ‘পূর্ব বাঙলা পাকিস্তানের একটি উপনিবেশ এবং জাতির দ্বন্দ্বই এখানে মুখ্য। তাই সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে পূর্ব বাঙলাকে স্বাধীন করতে হবে।’ এর সাথে একমত হয়ে ১৯৬৭ সালের শীতের শুরুতে সিরাজ সিকদারের নেতত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণ রসায়ন বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র মো. আনোয়ার হোসেন (মুক্তিযোদ্ধা, ১১ নং সেক্টর কমান্ডার কর্ণেল আবু তাহের এর ছোট ভাই, পরবর্তীতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি) সহ ১৫জন মুক্তিকামী ছাত্র লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে টেকনাফ অঞ্চলে ঘাঁটি এলাকা গড়ে তুলতে কক্সবাজারের টেকনাফে আসেন। এ উদ্দেশ্যে বার্মায় সশস্ত্র বিপ্লবেরত কমিউনিস্ট পার্টির সাথে যোগাযোগ করা হয়। সিরাজ সিকদার ও ড. মো. আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে উক্ত বিপ্লবী গ্রুপ বার্মায় বিপ্লবরত কমিউনিস্ট পার্টির সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে সক্ষম হলেও তাদের বিপ্লবী উদ্যোগ শেষ পর্যন্ত সফল হয়নি। বেশ কয়েক মাস পর তারা ঢাকায় প্রত্যাবর্তন করে। ৮
নিউক্লিয়াসের সহযোগী সংগঠন সূর্য
১৯৬৯ সালে কক্সবাজার শহরে নিউক্লিয়াসের সহযোগী সংগঠন হিসেবে সূর্য নামের একটি গোপন বিপ্লবী দলের আত্মপ্রকাশ হয়। ১৯৬৬-৬৭ সনে কক্সবাজার কলেজ ছাত্র সংসদের জিএস কৃষ্ণ প্রসাদ বড়–য়ার নেতৃত্বে ডিনামাইট দিয়ে দোহাজারী সেতু উড়িয়ে দেয়া, বিদ্যুৎ, টেলিফোন, টেলিগ্রামের তার কেটে দিয়ে কক্সবাজারকে ক্রমান্বয়ে স্বাধীনতার চূড়ান্ত পয়ায়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যকে সামনে রেখে আত্মপ্রকাশ করা এ সংগঠনে ছিলেন জালাল আহমদ, প্রিয়তোষ পাল পিন্টু, তৈয়বুল্লাহ চৌধুরী, শামসুল আলম, পরিমল পাল, মোহাম্মদ জুলফিকার আলী, দিদারুল আলম চৌধুরী, বেলাল, আনোয়ার ইকবাল, নুরুল আমিন, প্রবীর ভট্টাচার্য প্রমুখ। বড় বাজারে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও ন্যাপ মোজাফ্ফর নেতা সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে সূর্যের প্রায় বৈঠক হতো।৯ মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে এ সংগঠনের আত্ম প্রকাশ হলেও কক্সবাজার মহকুমার আওয়ামী লীগের বাধার কারণে সে কার্যক্রম তেমন ফলপ্রসু হয়নি বলে প্রিয়তোষ পাল পিন্টু ব্যক্তিগত আলাপে জানিয়েছেন।



ঋণী
১.    শওকত হাফিজ খান রুশ্নি, ‘সাহসী ঠিকানার একাত্তর’, দ্বিতীয় প্রকাশ- ২১ ফেব্রুয়ারি ২০০৪, ম্যাকস, চট্টগ্রাম, পৃ: ১৫
২.    ড. হারুন-অর-রশিদ, ‘বাংলাদেশ: রাজনীতি সরকার শাসনতান্ত্রিক উন্নয়ন ১৭৫৭-২০০০’, ১ ফেব্র“য়ারি ২০০১, নিউ এজ পাবলিকেশন্স, ঢাকা: পৃ: ২৬২-৬৩।
৩.    অ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলাম, বাংলাদেশের রাজনীতি : আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগ বিরোধী রাজনীতি,  ফেব্রুয়ারি ২০১২, অঙ্কুর প্রকাশনী, ঢাকা, পৃ:৭৮।।
৪.    সুলতান আহমেদ (১৯৬৬ সালের উখিয়া হাই স্কুলের ৯ম শ্রেণী এবং স্কুলের ফাস্টবয়, পরবর্তীতে আইনজীবী), ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকার, ১ জুন ২০১৩, ঝাউতলাস্থ তার বাসায়।
৫.    ড. হারুন-অর-রশিদ, প্রাগুক্ত, পৃ: ২৬৩। / মঞ্জুরুল আহসান খান, মুক্তিযুদ্ধ চলছে, উদ্ধৃতি: শাহীন রহমান সম্পাদিত, ‘আমাদের মুক্তিযুদ্ধ’, জাতীয় সাহিত্য প্রকাশনী, ঢাকা: পৃ: ৪৫।
৬.    মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম, আমার দেখা শেখ মুজিব ও কক্সবাজারের স্বাধীনতা সংগ্রাম, বিজয় ২০১২, কক্সবাজার জেলা প্রশাসন, পৃ: ৯৭
৭.    স. আ. ম শামসুল হুদা চৌধুরী, প্রসঙ্গ-রাজনীতি, ‘কক্সবাজারের ইতিহাস’, ৩০ জুন ১৯৯০, কক্সবাজার ফাউন্ডেশন, পৃ: ২৪৯
৮.    ড. মো. আনোয়ার হোসেন, ‘তাহেরের স্বপ্ন’, ‘সমবীক্ষণ’ (কর্ণেল আবু তাহের বীর উত্তম স্মারক বক্তৃতা সংখ্যা), ২৯ অক্টোবর ২০১০, সমাজ সমীক্ষা সংঘ, চট্টগ্রাম, পৃ: ৭-৮।
৯.    কৃষ্ণ প্রসাদ বড়–য়া, ৬০ দশকে কক্সবাজারের ছাত্র আন্দোলন, ১২ আগস্ট ২০১০, দৈনিক রূপসীগ্রাম।