তোফাজ্জল আমাকে ঘুমাতে দেয় না  ।
তার অশ্রুসিক্ত কান্না, গোঙানির শব্দ  ।
আমাকে ঘুমাতে দেয় না  
রাত যত গভীর হয়, ঘুমাতে দেয় না ।
রাত  যত গভীর  হয়
পৃথিবীতে  ফোটে কত পাপড়ি ,  
ফড়িংয়েরা মেলে ডানা ।
মেঘের জলে ঘন কুয়াশার
আড়ালে পৃথিবী কেঁদে উঠে ।
সেই কান্নার ধ্বনি শুনেছ কি কেউ ?  
রাতে এসে মন খোলে ডাকাডাকি করে  
বাবা তোফাজ্জল,  কেমন আছ রে বাবা !  
কেমন  আছ পৃথিবীর যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেয়ে । একপ্লেট ভাত খাবে না, চলে এসো পৃথিবীতে ।
  
সেই এক প্লেট ভাত,
সবজি, মাংসের ভুনা
তার মৃত্যু ডেকে আনে ।
সে যদি জানত,
তাহলে হয়ত বলত
আমি ভাত খাব না।
কোন  বাবা  মা হারা
সন্তান তুমি, তোফাজ্জল!
ফিরে এসো কবর থেকে,  
উঠে এসো, দেখো
তোমার বুক চিরে
যারা জীবন মৃত্যু
খেলা খেলেছিল -
সেই  শকুনের দলের
বিচার হবে এই বাংলার মাটিতে ।  
তোফাজ্জল আমাকে ঘুমাতে দেয় না ।  

ছেলেটি এভাবে মারা যাবে
কেউ বিশ্বাস  করেনি ।
কি নির্মম, করুণ, অসহায়  সেই মৃত্যু !
আর্তপক্ষ সমর্থন সুযোগটুকুও দেয়নি ।
বুক ভরা  কান্নায় জল নেমে
এসেছিল কত মানুষের  চোখে ।
হিংস হায়েনা দল মেতে উঠেছিল-  
নরহত্যার   পৈশাচিকতায় ।
শিয়াল শুকনের দল  শুনেনি
কোনো চিৎকার, শুনেনি কোনো আর্তি,
প্রাণ ভিক্ষার আবদার ।
বুকে চাপাতি রোড  ঠাস দিয়ে
করেছে নিশ্বাস চিরতরে বন্ধ ।
বাজপাখি আর শুকনের মতো
কেড়ে নিয়েছে  প্রাণ ।
তোফাজ্জল  আমাকে ঘুমাতে দেয় না।

তার চোখে মুখে কতই না
স্বপ্ন ছিল কে জানিত !
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেধাবী
শিক্ষার্থীর এ কেমন জীবন ?
শুধু দুমুঠো ভাত,আর
এই  ভাতের জন্য মরণ ?
উসকোখুসকো চুল  
গলায় ঝুলছে তাবিজ ।
উদাম শরীরেই
ভাত খাবারের দৃশ্য ।  
এই যেন মরণের
খাবার খেয়েছে তোফাজ্জল ।
খাবার খেতে দিয়ে
মজা রসিকতা ছাড়েনি ।
মেধাবী নামে নরপশু
বিশ পঁচিশ জনে
উপুর্যপরি পিটুনির
তালে তালে নাচ ।
একবার নয়  
দুইবার নায়
তিনটিবার
একটি ছেলেকে
গণপিটনি দিলে কি হয় ?
শরীরের রক্তে মাংস
কি অবিশ্ষ্ট থাকে  ?
হৃদপিন্ডের ধুকধকানি ,
মুখে গোঙানির
আওয়াজ কেউ শুনেনি ।
চিৎকার করে কি বলে নি  
আমাকে তোমরা মেরো না
আমি আমার মায়ের
কাছে যেতে চাই ।
আমি চোর না
আমার হাতে টাকা নেই
আমাকে ছেড়ে দাও
আমি বাঁচতে চাই ।

আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের
ফজলুল হক হলের ছাত্র
এই  হলের খাবার
আমার ভালেো লাগে ।
আমি তাই এখানে
খাবার খেতে আসি ।
উদরপূর্তি খাবার
খাওয়ানোর পর
তোফাজ্জল কে  
জিজ্ঞেস করেছিল ওরা
খাবার কেমন হয়েছে ?  
তোফাজ্জল বলেছিল
খুব ভালো হয়েছে ।
কোনো অসভ্যপনা
চলে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ।
এইভাবে কি বাংলাদেশের  
প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে  
তোফাজ্জল  পিঠানো হয় ?
গেস্ট রুমে বন্দী করে
চলে রাতভর নির্যাতন ?

আবরার ফাহাদ, দমফাটা এক মৃত্যুর  নগ্ন খেলা !
কে না দেখেছে, কেঁদেছে বিশ্ববাসী ।  
সেই অন্যায়ের  বিচার শেষ না হতেই
আবরার ফাহাদের পুনরাবৃত্তি
কি তোফাজ্জল ভাগ্যে  ?
কি বলি ভাই !
এতিম ছেলের মুখের দিকে
তাকালে খুব মায়া লাগে !  
তোফাজ্জল, তুমি পৌরুষদীপ্ত
টগবগে এক অবিবাহিত  যুবক ।
কত যুবকের মনে আজ
প্রশ্ন রেখে গেলে  
অর্থ অভাবের মৃত্যু,
আর বেকার জীবন কত
অসহায়ের হয় ।

রাষ্টীয় লুটেরাদের দামি গাড়ি বাড়ি
আর  ভোগবিলাসী জীবনের বিপরীত  
নিঃস্ব মানুষদের আর্তচিৎকার, আহাজারি ।
কেউ তোলে  দেয় না ওদের মুখে  দুমুঠো ভাত ।  তোফাজ্জল তুমি বিষের  মর্মর ধ্বনি
ঝংকার তোলে গেলে ।

কত এতিম  অসহায় ছেলের করুন মৃত্যু
জীবনের গল্প বলে গেলে।  
তোমার প্রেমে মুগ্ধ আমি  
তোমার বিচার  প্রার্থী আমি
চেয়ে আছি  বাংলাদেশের
জর্জ কোর্টের দিকে।
তোফাজ্জল  আমাকে ঘুমাতে দেয় না ।