সাদা কাগজের বুকে তোমার হাতে বানানো অক্ষর বন্দুকের গুলির মত শব্দ করলো হৃদয়ে।
এতক্ষণে শিক্ষিত মূর্খ মানুষেরা মদ খেয়ে বউ নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে । আমি ঘুমাতে পারি না কাঁদানি গ্যাস,বারুদের গন্ধে। দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে টপকে যাই কাঁটাতারের ভেরা। লাফ দিয়ে ধরে ফেলি ঈগলের কণ্ঠস্বর। রাজপথে থামিয়ে দেয় পুলিশ আর্মি সেনা বহর।
গুলির শব্দ আগুন চিৎকার চলতেই থাকে। কেউ বলছিল মানুষও মরেছে।আমি সাহস নিয়ে হাঁটতে থাকি, কাঁপতে থাকি ভিতরে ভিতর। গতরে একশো দুই ডিগ্রী জ্বর। ডাক্তার বলেছিল, কিভাবে যাবেন শহর?
এত ঘুটঘুটে অন্ধকার একটু পূর্ণিমার আলো হলে চাঁদের মত বুক দেখা যেতো তোমার। কিন্তু গুলির শব্দ আর মিছিলের গর্জন ছাড়া কোন শব্দ নেই। আমি মানুষের ভিতর ঝাঁপসা হয়ে যাই, দূরের ঘন কুয়াশার মত। তীব্র রৌদ্রের মত আলো আসে চোখে। পায়ের শব্দ গোঙানি আর তাজা রক্তের গন্ধ লাগে নাকে।
হঠাৎ ছিটকে পড়ি কারেন্টের খাম্বা হতে যেমন কালো কাক রাস্তায় লুটিয়ে পড়ে। পায়ের তলায় পিষ্ট হতে থাকি তবু চিৎকার দিয়ে বলতে পারি না -- আমাকে বাঁচাও বাংলাদেশ!
আমি কারো শিষ্য সৈনিক বা পা চাটা গোলাম নই। আমি সুদখোর, ঘুষখোর, আমলা, এমপি, মন্ত্রী, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, ক্যাড়ার, জঙ্গি নই। আমি শব্দের ফেরি করি, অক্ষর দিয়ে বানাই চাঁদের মুখ,তরবারি। আমি ক্ষুধার্ত, মূর্খ, শহর গ্রাম, দুর্ভিক্ষের ছবি আঁকি।
আমি চাল ডাল তেল পেঁয়াজ সব্জির দাম শুনে দীর্ঘশাস ছাড়ি। আমি সন্তানের শিক্ষা নিয়ে হতাশ হই। আমি শিউলি ফুলের গন্ধ ছাড়া রাতে ঘুমাতে পারি না। আমি ওষুধ কসমেটিক্স কিনতে পারি না বহুদিন। আমি বলতে পারি না - মাংস ম্যারিনেট হচ্ছে।
আমি এক ফোটা মাতৃদুগ্ধের জন্য শিশুকে কাঁদতে দেখেছি পথে। আমার সামনে হাত পেতে নিয়েছে বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা তবু মাছ খেতে পারে না এক বেলা।
আমি চিতায় পুড়ে এসেছি কয়েক প্রজন্ম। আমি সাক্ষী দিয়েছি বন্ধুর তালাক নামায়। আমি হালের গরু চড়িয়েছি মাঠে,গোলা ভরা ধান ছিল অগ্রায়ণ পৌষে। আমি চায়ের দোকানে রাজনৈতিক বিতর্ক শুনেছি বহুবার। আমি প্রতিমার মত ছিন্ন ভিন্ন টুকরো হয়ে গেছি। আমাকে একটু ধর বাংলাদেশ, আমি তলিয়ে যাচ্ছি অতলে।
আমি বাংলাদেশের হাত ধরে বের হয়ে আসি মিছিল হতে
রক্তাক্ত ছিন্ন ভিন্ন
মানুষ আমাকে কাঁধে করে নিয়ে যাচ্ছে
যেখান থেকে "মানুষ " শব্দটি উঠে এসেছিল পত্রিকায়।