মেয়েটি দেখতে দারুণ রূপসী প্রকৃতি গড়েছে তারে,
অনিন্দ্যতার অপরূপ সাজে জন্মেছে সংসারে।
চোখ দুটো নীল অসীম গভীর মায়াবতী জ্যোতি তার,
চুলগুলো যেন মেঘেদের ছায়া দেখতে চমৎকার!
ঠোঁট দু'টো তার কমলার কোয়া, আপেল সদৃশ গাল,
পাহাড়ের মতো ধ্যানী-ঋষিরাও বিচলিত চিরকাল।
দুধে-আলতায় রঙটি গায়ের লাবণ্যময় দেহ,
আকাশের ন্যায় কারুময় রূপ জগতে দেখেনি কেহ।
স্বর্গচ্যুতার মনোরম রূপ প্রকৃতি করেছে দান,
চরণ-চলনে রুমুঝুম বাজে হৃদয়-মোহিত গান।
লতিকার মতো দেহখানি, তা'তে খুঁত নেই এক তিল,
হাসি যেন তার মুক্তোর ধারা সুখ আনে অনাবিল।
কর্মে ও গুণে নিপুণ বালিকা আলস্য নেই মনে,
চাতুরীবিহীন হৃদয় যে তার জেনেছে সর্বজনে।
বন্ধু ও শিশু সকলের প্রতি অসীম দরদ তার,
নিষ্পাপ মন ফুলের মতোন, নেইতো অহংকার।
হেঁটে যাওয়া সব পথচারীজন বারে বারে ফিরে চায়,
এমন রূপের মানবী সৃষ্টি অসীমের মহিমায়।
এতো সুন্দর মেয়েটির মনে কষ্টের নদী বয়!
মনের দুঃখ বলতে পারে না চুপচাপ সদা রয়।
শুনতে পারে না পাখিদের গান, নদীর কলস্বর,
বিষন্ন চোখে চেয়ে থাকে দূরে সমস্ত দিনভর।
শান্ত-সুবোধ নিটোল রূপের বাকহারা ওই মেয়ে,
মনের আবেগ বুকে চেপে রেখে অনিমেষে থাকে চেয়ে।
এমন অনেক প্রতিবন্ধীর হাজার কষ্ট মনে,
দেখি না আমরা, ডাকি না কখনো সাদর সম্ভাসনে।
অবহেলা আর বিদ্রূপ করি, ভাবি না মানুষ তারা,
ভালোবাসা পেতে, ভালোবাসা দিতে, তারাও আকুলপারা।
মন বাতায়ন খুলে দিয়ে যদি ডাক দাও ইশারায়,
সকল কষ্ট ভুলে গিয়ে তারা বাঁচিবার দিশা পায়।
ওরা নিরুপায়, নয় জ্ঞানহীন, জড়বস্তুও নয়,
প্রতিবন্ধীও কর্মের গুণে জগতের বিস্ময়!
পৃথিবীর বুকে প্রতিবন্ধী সে, নামটি হকিং তার,
কাজে ও মেধায় অগ্রগণ্য শুনে রাখো সমাচার।
শারীরিকভাবে, মানসিকভাবে, দুর্বল বহু মন
পৃথিবীতে আছে, পর নহে তারা; আমাদের একজন।
অসহায় সব মানুষের প্রতি সুবিচার হোক আজ,
বুকে টেনে নেই এই মানুষেরে ভুলে গিয়ে সব লাজ।
শিক্ষা-স্বাস্থ্য, বিনোদনে আছে ওদেরও অধিকার,
সাহস যুগিয়ে ভালোবাসা দিলে, সুখী হবে সংসার।
সুন্দর তুমি মঙ্গলে জাগো ভালোবাসা আর প্রেমে,
পৃথিবীর মাঝে মানুষ জীবন যায়নিকো আজো থেমে।
এখনো পাখিরা প্রত্যহ ডাকে প্রত্যুষে-সন্ধ্যায়,
এখনো মানুষ মানুষের তরে সুর করে গান গায়।
সাগরে-ভূধরে, পাহাড়ে-নদীতে এখনো সুখের ছায়া,
মায়ের মুখের হাসিতে আদর, বোনের চোখেতে মায়া।
এখনো মানুষ মানুষের দুখে সমব্যথী বেদনায়,
এখনো মরণে মানুষের মনে বিষাদের ছোঁয়া পায়।
অবহেলা করে সরিয়ে দিও না, দুর্বলে কোনো মতে,
পরিচর্যায় গড়ে তোলে আনো সমাজের মূলস্রোতে।
রঙিন পৃথিবী রঙময় হবে দুর্বলে পেলে বল,
প্রকৃতি তখন উচ্ছ্বসী হয়ে সাজাবে সুনির্মল।
কানা-লুলা-বোবা, পাগল-ধেন্দা বলো নাকো আর তুমি,
সকলের তরে মাতৃসমান পৃথিবীর এই ভূমি।
মনে রেখো, এই প্রতিবন্ধীরা প্রতিভাবিহীন নয়,
ভালোবাসা পেলে তারাও যে পারে করতে বিশ্বজয়।
অবহেলা নয়, প্রাণ খুলে তারে বুকে নাও মমতায়,
ওরা বেঁচে রবে হতাশাকে ঝেড়ে মানুষের দুনিয়ায়।
সহমর্মিতার সংবেদনে এসো দেই প্রতিশ্রুতি-
'আমাদের হাত তাদের জন্য, তারা আমাদের জ্ঞাতি'।
২১/০৮/২০২২
মিরপুর, ঢাকা।