রাসেলের প্রাণ বিষাদিত করে বাংলাদেশের তাতাল-মাঠ,
হায়েনার দল নির্মমতায় সংহার করে প্রভাত পাঠ।
              পনের তারিখ বিষাদের দিন,
              আগষ্ট এলে বুকে বাজে বীণ;
মরমীয়া সুরে ঝংকারী উঠে পদ্মা নদীর উতল ঘাট,
পূত রক্তের রক্তিম ধারা সিক্ত করেছে শ্যামল মাঠ;
                                              জীবন পাঠ।

পামরের দল! কেমন পাষাণ মন যে তোদের, হে দুর্জন!
অপরাধহীন নারী ও শিশুকে হত্যা করিলে বিনা-কারণ।
               সিমার তুচ্ছ চির অভিশাপী
               হোসেনের শীর কর্তনে পাপী,
তার চেয়ে তোরা আরো যে অধম জানিলো জগৎ সেই বচন,
শত ধিক! ওরে জনমে জনমে জানাবেই এই বাঙালিমন;
                                                      জীবনক্ষণ।

বাঙালি জাতির ত্রাতা মুজিবুর শ্রেষ্ঠ বাঙালি সুজন প্রাণ,
বুলেট ছুঁড়িয়া ভীরু সন্ত্রাসী কেড়ে নিলি তাঁর জীবনখান।
                হাজার বছর সাধনার পরে
                মুজিব এসেছে বাংলার ঘরে;
মুক্তির নেশা জাগিয়ে দিয়েছে বাঙালি হৃদয়ে সুরের গান,
মৃতপ্রায় দেহে প্রাণ-সঞ্চার করেছে রাখাল নওজোয়ান।
                                                   জোয়ার বান ।

বিষাদের ছায়া ঢেকেছে আকাশ কান্নার সুর শুনছি ওই,
বঙ্গবঙ্গু শেখ মুজিবুর জাতির জনক এখন কই?
                টুঙ্গিপাড়ার শ্যাম বিথীকায়
               পিতার স্নেহে, মা-র মমতায়।
রক্ত-বীজের চেতনা ছড়িয়ে আগল খুলিয়া চাহিয়া রই,
শোক বিধুরতা শক্তি হইয়া মানুষ মননে জাগছে ওই।
                                                   বন্ধু কই?

চেতনবিদ্ধ মুক্তির কবি বীরপ্রসু দেশে মস্তবীর,
শ্যামল দেশেতে জন্ম লভেছে রক্ত গোলাপ মঞ্জুরীর।
              পরিজনসহ করে সংহার
              নাশিতে সকল শুভ চেতনার,
মঙ্গল দীপ আলোর নিশানা হরিতে চেতন বাঙ্গালির।
আগষ্ট এলে নয়ন জুড়িয়া দর দর বহে তপ্তনীর,
                                                রক্ত-ক্ষীর।

মেঘনার জল উথলিয়া উঠে ‘মুজিব’ ‘মুজিব’ করুণ সুর,
সারা বাংলায় বিষাদের গাঁথা মানুষের হিয়া দুখ-বিঁধুর।
              আকাশে জাগিছে সুর বেদনার,
              স্বপ্নভঙ্গ শুধু হাহাকার;
প্রতিরোধ নেশা জাগে অন্তরে জাগে জনতার সমুদ্দুর
পরজিত অরি দোঁসর তাদের বলে থাকো সবে অন্তপুর-
                                                  ঘোর দুপুর।

আগষ্ট এলে মরমের তলে কে যেন বাঁজায় করুণ তান,
নীল আসমান লাল রঙে ছেয়ে মাঠ জুড়ে আসে দুঃখবান।
              শোকের মাতম রহিয়া রহিয়া
              পরানের তলে যায় যে বহিয়া
দূর সাগরের ক্রন্দন শুনি ফুঁসিয়া উঠে যে জলের প্রাণ,
তাই বুঝি আজ সাগরে আকাশে একসাথে আনে ঝড়-তুফান;
                                                        ছন্দগান।

এখনো রাসেল বত্রিশে কাঁদে ডুকরিয়া উঠে লেকের জল,
রক্তের ধারা সারা বাংলায় বহিয়া চলেছে অনর্গল।
              রক্ত-শপথ এই বাঙালির
              প্রতিশোধ নেবে সকল খুনির
রক্তের ঋণ শোধিতে হবেই জেনে রেখো সব পামর-দল!
সত্যের হাতে খন্ডিত হবে মিথ্যা সকল হিংস্র-খল,
                                                      জগদ্দল।

জাতির জনক বুলেটে ঝাঁঝরা সিঁড়ির উপর নিথর লাশ,
বঙ্গ-জননী বিমূঢ় চেতন ভুলে গিয়েছেন হায়-হুতাস।
               পাগলিনী প্রায় চিৎকার করে
               তোরা কি জন্ম মায়ের উদরে?
পাকিস্তানীরা পারেনি মারিতে ফেলেছে শুধুই দীর্ঘশ্বাস,
বাঙালি মায়ের সন্তান হয়ে এমন পাষাণ, অবিশ্বাস!
                                                   নরপিচাশ।

দশ বছরের বালক রাসেল রাজনীতি তার কর্ম নয়,
তবওু রাসেল খুন হয়ে যায় এই কথা কোন ধর্মে কয়?
                মায়ের নিকট থাকবার তরে
               ফিরে এলো ফের উপরের ঘরে।
পাষাণ খুনিরা উল্লাসে মেতে প্রতি ঘর করে রক্তময়।
হায় পাপিষ্ঠ! এমন নিঠুর নির্দয় প্রাণ কখনো হয়,
                                                 জগৎময়?

মুয়াজ্জিনের আযানের ধ্বনী সুরেলা কন্ঠে মধুর সুর,
‘আল্লা মহান’ জগতের মাঝে বায়ু তরঙ্গে যাচ্ছে দূর।
              হত্যাকারীরা পাষন্ড অতি
              বত্রিশে চলে অতি দ্রুত গতি,
প্রভাত সূর্য রক্তের নদী উঠিল ফুঁড়িয়া সমুদ্দুর,
সারা বাংলায় ক্রন্দন ধ্বনী ঝংকারী উঠে হৃদয়পুর
                                                করুণ সুর।

জেগে উঠো ফের অসুর নাশিতে রক্ত নদীতে লাল বন্যা,
যাহার পরশে পদ্মা মেঘনা বিধৌত দেশ হয় ধন্যা।
              ললাটে তাঁহার ভাস্কর টিকা,
              পরানের তলে আনে অহমিকা;
সেই সুর আজ একীভুত করে রক্ত বীজের শ্যাম কন্যা,
বাঙালি আবার দৃঢ় চেতনায় সম্মুখে যাবে, হে অনন্যা!
                                                 বীর কন্যা।