ঢাকা লিট ফেস্টের সম্মেলনে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন লেখক, কবি ও প্রাজ্ঞজনের অংশগ্রহণ এবং সৃজনশীল সাহিত্য চর্চা ও জ্ঞান বিনিময়ের একটি মঞ্চে পর্যবসিত হয়েছে। ঢাকা লিট ফেস্ট,২০১৬ এ পৃথিবীর বহু দেশের কবি-সাহিত্যিক উপস্থিত ছিলেন। এদের মাঝে চমক ছিলো ২০০১ সালে সাহিত্যে নোবেলজয়ী ভারতীয় বংশোদ্ভূত ত্রিনিদাদের লেখক বিদ্যাধর সূর্যপ্রসাদ নাইপলের উপস্থিতি। এ নোবেল বিজয়ী লেখক গতকাল (১৭/১১/২০১৬) বাংলা একাডেমীর প্রাঙ্গনে ফিতা কেটে ঢাকা লিট ফেস্ট-এর ৬ষ্ঠ সংস্করণের উদ্বোধন করেন।
বিকেল ৩.০০ টায় ঢাকা লিট ফেস্ট (Dhakalitfest),২০১৬-এ উপস্থিত হওয়ার ইচ্ছা ছিলো। তাই, বাসার থেকে ২.০০ ঘটিকায় রওয়ানা দিয়ে বাসা থেকে বের হয়েছি। যাওয়ার পথেই আসরের কবি সৃজনী ফয়সাল আহমেদ মোবাইল করে জানতে চাইলো, আমি কোথায়? বললাম, 'আমি পথে, আসছি। আপনি কোথায়?' কবি বললেন, 'আমি বাংলা একাডেমি চিনি না। এটা কি ঢাকা ইউনিভার্সিটির পিছনে?' খানিকটা হেসে বললাম- 'ঢাকা ইউনিভার্সিটির পিছনে নয়; ভেতরেই। দোয়েল চত্বরের কাছাকাছি .....'।
আজ ঢাকা শহরের জ্যাম ছিলো না। মাত্র আধা ঘন্টার মধ্যে বাংলা একাডেমিতে পৌঁছেই কবির মোবাইলে জানতে চাইলাম, তিনি কোথায়? তিনি নজরুল মঞ্চের সামনে ছিলেন। তার সাথে দেখা হলো, পরিচয় হলো। তিন/চার ঘন্টার পথ পাড়ি দিয়ে সুদূর গাজীপুর থেকে এ তরুণ কবি এসেছেন কবিতা এবং বাংলা-কবিতা ওয়েবসাইটের প্রতি ভালোবাসার টানে। আমার সাথে থাকা আমার ছোট ছেলে সামী কবীরের (সপ্তম শ্রেণির পড়ুয়া) সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেম। এরপর, সামীর সাথে খুব ভাব করে নিলো। কবি চা খাওয়ার জন্য বললেন। আমি বললাম, সবাই আসুক, একসঙ্গে খাবো। তখন কবি আমাকে একটি চেয়ারে বসিয়ে সামীকে নিয়ে চলে গেলো। এর মাঝেই কবি রিক্তা রিচি তার বন্ধুকে নিয়ে হাজির। এ সময়ে কবি ফয়সাল আমার সামীসহ সে বৈকালিক নাস্তা এবং কফি পান করে এসেছেন। তাদেরকে নিয়ে ছবি তুললাম।
এদিকে নজরুল মঞ্চে অনুষ্ঠান চলছে। বাংলা একাডেমির পশ্চিম পাশের স্টেজ সাজানো কিন্তু খালি। সামনের চেয়ারগুলোতে দর্শক-শ্রোতা বসে আছে। পাশের জনের সাথে আলাপ করছেন। এখানে ৩-১৫ মিনিটে অনুষ্ঠান হওয়ার কথা। কবি নির্মলেন্দু গুণ ও কবি কামাল চৌধুরীর উপস্থিত হওয়ার কথা। এখনো কবি নির্মলেন্দু গুণ আসেননি। কবি এলেন প্রায় ৩-৪৫ এ। এসেই উঠে গেলেন স্টেজে। সামনের সারিতে বসার কিছুক্ষণ পরে মোবাইল করলো আসর কবি আনিছুর রহমান। তার সাথে দেখা হওয়া ও কুশল বিনিময়ের সময়ে মোবাইলের মাধ্যমে যোগাযোগ করলো কবি মোঃ ফিরোজ হোসেন। আমরা সবাই মিলে একটু দূরে গিয়ে গল্প করছি এবং ছবি তুলছি। আর ফাঁকে ফাঁকে কবি নির্মলেন্দু গুণের স্মৃতিকথা শুনছি।
কবির অনুষ্ঠান যখন শেষ আমরা সকলেই স্টেজে উঠলাম। কবিকে নিয়ে অনতিদুরে চেয়ারে বসলাম। এদিকে কবির সাথে উপস্থিত কবিভক্তদের ছবি তোলার হিড়িক পড়ে গেলো। ভক্তদের ভিড় কমছেই না। এই ফাঁকে আমি সামনে গিয়ে বললাম। আমরা বাংলা-কবিতা ওয়েবসাইটের পক্ষ থেকে কয়েক এসেছি। আমাদের কিছুটু সময় দিতে হবে।
কবি নির্মলেন্দু গুণ তাঁর 'মুখগ্রন্থ' (facebook) পাতায় 'কবিতাকুঞ্জের জন্য অর্থ সাহায্য চাই’- শিরোনামে গত ২৫ সেপ্টেম্বর ফেসবুকে স্ট্যাটাস লিখেন। সেই স্ট্যাটাসে কবি গুণ লিখেন, ‘নেত্রকোণার শহরতলী মালনীতে, মগরা নদী তীরে নির্মাণাধীন কবিতাকুঞ্জের ভবন নির্মাণ সম্পন্নকরণ, বিদ্যুত সংযোগ স্থাপন, পানির জন্য সাবমারসিবল পাম্প বসানো, পাঠাগারের জন্য বই কেনা ও বই রাখার জন্য আলমারি ও বসার জন্য চেয়ার টেবিল কিনতে কম করেও ৫-৭ লাখ টাকা দরকার হবে। আমার নিজের টাকা শেষ। সামনে কোনো অর্থকরী পুরস্কার পাওয়ার সম্ভাবনা দেখছি না। এমতাবস্থায়, আমি আপনাদের কাছে প্রস্তাবিত কবিতাকুঞ্জের জন্য অর্থ সাহায্যের আকুল আবেদন জানাচ্ছি।'
এ স্ট্যাটাস পাঠ করে বাংলা কবিতা ওয়েবসাইটের এডমিন কবি নির্মলেন্দু গুণের 'কবিতাকুঞ্জ'-এর উন্নয়নের জন্য হাত বাড়িয়ে দেন। প্রিয় এডমিন বাংলা-কবিতা ওয়েরসাইটের পক্ষ থেকে ৩০,০০০/- (ত্রিশ হাজার) টাকা পাঠান। সেই টাকার চেকখানি আমরা কবির হাতে তুলে দেই। প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে, সমুদয় অর্থটাই 'বাংলা-কবিতা ওয়েবসাইট'-এর এডমিন জনাব আশফাকুর রহমান পল্লব (পাগল কবি) প্রদান করেছেন। এডমিন নিজের নামে না দিয়ে বাংলা-কবিতা ওয়েবসাইটের নামে দেওয়ার জন্য আমার প্রতি অনুরোধ রাখেন।
কবির সাথে আধা ঘন্টার উপর সময় ধরে আমরা যারা উপস্থিত থেকে বিভিন্ন বিষয়ে আলাপ করি। আমাদের বাংলা কবিতা ওয়েবসাইটের বিভিন্ন দিক তুলে ধরি। ওয়েবসাইটের পেজ ওপেন করে কবিকে দেখালাম। কবি নির্মলেন্দু গুণকে যে 'খ্যাতিমনা কবি' হিসেবে আমাদের ওয়েবসাইটে রেখেছি; তাও দেখালাম। আর কারা কারা খ্যাতিমান তাদের নামগুলো দেখালাম। যখন কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের নামটি দেখলেন; তখনই একটু জোরেই হেসে উঠলেন। এ প্রসঙ্গে তার জীবনের একটি গল্প কিছুক্ষণ আগেই তিনি বলে এসেছেন। যা শুনে দর্শক-শ্রোতাগণ সকলেই হেসেছিলেন।
কবির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আমরা চলে আসছিলাম; এমন সময় কবি মলয় গাঙ্গুলী মোবাইলে জানতে চাইলো আমরা কোথায়? তিনি আসার পর আমরা সকলে মিলে মেলাঙ্গনের ভেতরের খাবারের দোকানের দিকে গেলাম। হালকা নাস্তা এবং কফি পর্ব শেষ করে কিছুক্ষন ঘুরাঘুরি কবলাম। প্রায় ৭-৩০ দিকে আমরা বিদায় নিলাম পরস্পর থেকে। একটি আনন্দঘন বিকেল এবং সন্ধ্যার কথা মনে থাকবে অনেক অনেক দিন।
বাংলা-কবিতা ওয়েবপেজে (https://www.facebook.com/BanglaKobitaWeb/) কিছু ছবি পোস্ট করা হয়েছে। কপি-পেষ্টের সুবিধার জন্য মন্তব্যের ঘরে লিঙ্ক দেয়া হলো।
ধন্যবাদ সকল বন্ধুদের; যারা কষ্ট করে আমার এ লেখাখানি পড়েছেন।
মিরপুর, ঢাকা
১৮/১১/২০১৬।