আজ বিকেলটা ছিলো বড়োই মেঘলা। মেঘের ভারে আকাশটা যেন ওলানের মতো ঝুকে আছে পৃথিবীর দিকে। মনে হলো, একটি আঁকশি দিয়ে খোঁচা দিলেই ঝরঝর করে অঝোর ধারায় ঝরে পড়বে জলের কণা। সয়লাব হয়ে যাবে ঢাকার সমস্ত রাস্তাঘাট (একটু জোর বৃষ্টি হলেই সাধারনতঃ ঢাকার রাস্তায় নৌকা চলে)। কিন্তু না, ঝুম বুষ্টি যাকে বলে, তা' হলো না। ছিঁচকাদুনে বৃষ্টির মিহিন জলকণায় ভিজিয়ে দিচ্ছিল পথে হেঁটে যাওয়া সকল পথিককে।

কবি অনিরুদ্ধ বুলবুলের (মজিবুর রহমান বুলবুল) মোবাইল থেকে একটি কল এলো আমার মোবাইলে। রিসিভ করলাম-
- হ্যালো কবি, আসসালামু আলাইকুম।
- ওয়ালাইকুম সালাম। অফিসে আছেন কি?
- জ্বি, আছি। আসুন ছয়টার দিকে।
- আপনাকে 'সময়ের বাওকুড়ানি'র বাতাস দিবো। আহসান হাবীব সাহেবের কাছে যাবো। আপনার সময় হবে কি?
- নিশ্চয়ই যাবো। চলে আসুন পাঁচটার দিকে।

কবি এলেন প্রায় সাড়ে চারটার দিকে। হাতে দু'কপি 'সময়ের বাওকুড়ানি'। কবির লেখা একটি নূতন কাব্যগ্রন্থ। আমার টেবিলের  সামনের চেয়ারটায় বসার আগেই এগিয়ে দিলেন এক কপি 'সময়ের বাওকুড়ানি'। সুন্দর প্রচ্ছদ (প্রচ্ছদটি আগেই দেখেছি)। এঁকেছেন আহসান হাবীব। কাব্যগ্রন্থটির মুখবন্ধ লিখেছেন, 'এবং মানুষ'-এর সম্পাদক; কবি, গল্পকার ও প্রাবন্ধিক আনোয়ার কামাল। তাঁর ভাষায়, 'ইচ্ছা করলেই কবিতা লিখা যায় না। কবিতা একজন কবির বোধের বিষয়।' কাব্যগ্রন্থখানির প্রকাশক 'মানুষজন'। পুরুষ্ট কাগজে ছাপানো সুন্দর বইখানি উৎসর্গ করা হয়েছে, কবির ভাষায়-

      বাংলা কবিতা আসরের বন্ধুদের,
আর যারা প্রতিনিয়ত আমায় সাহিত্যচর্চায়
          প্রেরণা যুগিয়ে আসছেন

নূতন বইয়ের সুবাস মনকে আনন্দময় করে তুলে। কাব্যগ্রন্থটি হাতে নিয়ে খুলে দেখলাম। কাগজগুলো ধবধবে সাদা নয়। মনে হলো বেশ পুরোন (কাগজের রঙটিই এমন)। একটু হলদেটে রঙা। বইটি মেলে ধরার সাথে সাথে যে কবিতাটি হেসে উঠলো, তা হলো- 'সংরাগ'। প্রথম স্তবকটি আবৃত্তি করলাম কবির সামনেই-

অবোধ আনন্দের আশে তাকাই শূন্য দুরাশায়
কামনার বেশমীপথে আছি বসে তারই অপেক্ষায়।
ভালোবাসার পাশের ঘরেই অভিমানের বাস !
অভিমান সে মান না পেলেই ঘটে সর্বনাশ।

তারপর, কবির সাথে বের হয়ে পড়লাম স্বনামধন্য রম্যলেখক ও কার্টুনিষ্ট আহসান হাবীবের 'উন্মাদ'-এর অফিসের দিকে। উন্মাদের আস্তানায়  চমচমের সাথে বিখ্যাত 'খ্যাতা পুরি' খেলাম। অতঃপর এক চুমুকে এক কাপ খাওয়ার মতো 'গরম' চা।

বাসায় এসে বেশ কয়েকটি কবিতা পাঠ করলাম। কাগজে ছাপানো লেখা পড়তে গেলে অন্যরকম একটি সুখানুভূতি জাগে। আশি পৃষ্ঠার কাব্যগ্রন্থটিতে মোট  তেষট্টিখানা কবিতা আছে। এতে কয়েকটি গীতিকবিতাও স্থান পেয়েছে। সবগুলো এখনো পড়া হয়ে উঠেনি। বেশ কয়েকটি পড়েছি। সর্বশেষে পড়লাম 'সময়ের বাওকুড়ানি'-

সময়ের বাওকুড়ানি ভাসিয়ে নেয়
অনন্তে আঁকা স্বর্গখানা আমার;
বিস্তীর্ণ জলবাশির সাজানো প্রান্তরে
ইতস্তত ইতি-উতি পানা, দামি ভাবনার আবাসনী ঘোর,
সারল্য প্রান্তরে ভেসে যায় অনিমেষ লয়ে
আমি কি ওদেরই মতো?

'আমিও কি ওদেরই মতো?' এ প্রশ্ন কবির মতো আমাদেরও। শুভকামনা কবি অনিরুদ্ধ বুলবলের প্রতি। তাঁর কাব্যচর্চা আরো সুন্দর ও সুদূরপ্রসারী হোক, এই আমাদের কামনা।

সর্বশেষে, আশা করি, কবি অনিরুদ্ধ বুলবুলের 'সময়ের বাওকুড়ানি' পাঠক হৃদয়ে একটু চিন্তার উদ্রেক করবে। কবির দীর্ঘায়ু ও সুস্বাস্থ্য কামনা করছি।

২১/০৮/২০১৬
মিরপুর, ঢাকা।