অভিমান তোর ক্ষয়ে ক্ষয়ে যায় শাপলা বনের 'পরে,
দূরে বসে তুই রাগিস কঠিন স্বরে।
চিৎকারি তুই বলে যাস ওরে হাজার ছলনে
কতো বিদঘুঁটে কথা!
ভুলে গিয়ে সরলতা।
আমি যে দেখেছি আকাশের তারা জ্যোতির্ময়ী রূপ,
চঞ্চল মনে প্রশান্তি এনে গভীর ক্ষরণে
শীতল পরশে মনের হরষে হই একেবারে চুপ।
সেইখানে যদি জাগে নিরবধি
অভিমান গলা তীব্র দহন বিষাদ-মনের জ্বালা,
ক্ষোভিত হৃদয় কিভাবে বাঁধবে তালা?
অভিমান ভরা হৃদয়ের মাঝে কষ্টরা বাঁধে বাসা,
মিথ্যে সকল প্রিয়তর কথা মানুষের ভালোবাসা।
তোর ঘরে তুই থাক,
অভিমান ফুলি' জলোচ্ছ্বাসের বন্যা বহিয়া যাক।
এখন কোথায় তুই?
ঝেড়ে মুছে দিয়ে সব যন্ত্রণা বলিবো না আর-
আয় কাছে তোরে ছুঁই।
চারিদিকে জল করে কোলাহল শাপলার বনে ঢেউ,
সূর্য নাচিছে জলের উপরে তীর্যকভাবে
আমি দেখিয়াছি, দেখিলো না আর কেউ।
অন্ধকারের প্রদীপ শিখার আলো!
ভাবিয়া ছিলাম যতন করিয়া কেটে নিবি সব কালো।
বিষের পুঁটুলি হৃদয়ে ভরিয়া চাস,
স্বর্গের জ্যোতি নামিয়া আসিবে মর্ত্য-চাতালে
তোর চারিপাশে আনিবে সবুজ ঘাস।
সারারাত ভরি' অভিমান করি' উল্টিয়ে দিবি
চন্দ্রসমেত নীল আকাশের ছাদ,
ঘুচা'তে সকল জীবনের অবসাদ।
তোর ঘরে তুই থাক,
নিজের অনলে নিজেকে পুড়িয়ে হবি যে ধূসর খাক।
আমার প্রথম ভালোবাসাগুলো
কমল করিয়া তোর চরণেই রাখি,
ছিলোনা কোনই ফাঁকি।
ভালোবাসাগুলো কপোতের মতো উড়িয়া উড়িয়া
দূরে চলে যায় বিষাদের গান শুনি;
বুঝিলি না তুই নিষ্ঠুরা অভিমানী!
দেবী জ্ঞানে তোরে রেখে অন্তরে প্রণতি রেখেছি
নিত্য পুজেছি অর্ঘ্য দিয়েছি প্রেম।
এইটুকু জানিলেম-
চাঁদের জোছনা ঢাকিয়া রাখিতে তুই হ'লি কালো মেঘ;
হৃদয়ের মাঝে বিষ-জ্বালা শুধু
ভক্তের তরে নিজ-স্বার্থ করিস না ক্ষাণিক ত্যাগ।
তোর ঘরে তুই থাক,
নিজের কালোয় চেতনখানিরে আঁধারে ঢাকিয়া রাখ।
ছিঁড়ে তুই সুতো যাবি কতো দূর
অভিমানী তুই বল্ আমায়?
আদরে বিদরে সোহাগ ভরিয়া
আমি ছাড়া কেবা বল্ থামায়?
স্বপনের ঘরে লাগলে আগুন
নিয়ে আসি প্রেমে জলের বাটি,
তৃষিত পরানে সান্ত্বনা দিয়ে
সামনে দাঁড়াই অমল খাঁটি।
তুই যদি চাস চলে যেতে, যাবি,
নিয়ে অভিমান অনর্গল,
কোনো অধিকারে ডাকবো যে তোরে,
ঢালতে চরণে চোখের জল।
অভিমানী তুই হাসিস না আর
রক্তে ভাসে যে চিত-কমল,
শাপলার বনে হুতাশন জ্বলে
নিভবে না তাহা ঢাললে জল।
নিঝুম নিশিথে ব্যথা নিয়ে বুকে
তোর ঘরে তুই এবার থাক,
পিরিতি বুঝিলি ভালোবাসাহীন
এবার নিজেকে ঢাকিয়া রাখ।
আত্মভোলা এই যে আমি দূরের পানে চাহি,
সুপ্তানলে জ্বলছি নিতি দুঃখে অবগাহি।
তোর নামেতে নিত্য গড়ি হীরার তাজমহল,
মহাকালের গ্রীবায় রাখি চেতন অবিরল।
বিশ্বাসেরই সলতেটাতে ফুঁ দিয়ে যাস তুই,
তবু তোকেই গোলাপ করে সাজাই আমার ভূঁই।
নাইবা দিলি আমার বনের কৃষ্ণচুড়ায় আগুন,
হৃদপিন্ডের রক্ত দিয়ে সাজাই তোরই ফাগুন।
আমার সাদা আকাশখানি মিশিয়ে ঐ অঙ্গে,
না-ই রাঙালে সজল প্রেমের নীলাভ তরঙ্গে।
অবুঝ মনের ভালোবাসার মুক্তো এনে আর
বলবো নাকো দে ঘুচিয়ে সকল অন্ধকার।
মন যমুনার জলে আমি ডুবছি নিরবধি,
চেয়ে নেবো তোরে আমি আবার আসি যদি।
তোর তরেতে হলাম আমি বর্ণমালার কবি,
মনে করিস পরিচয়টা শুধুই ছায়াছবি।
তোর ঘরে তুই থাক,
অভিমানের কৃষ্ণ মেঘে নিজকে ঢেকে রাখ।
২২/০৯/২০১৪।
পল্লবী, ঢাকা।
অভিমানের ঝালা-পালা
শেষ করে যাই এ বেলা।