আজ কবি হাজেরা কোরেশী অপি-এর কাব্যগ্রন্থ ''মনের সাতকাহন'' হাতে পেলাম। নতুন বইয়ের মোড়ক খুলে পাতা উল্টালে যে সুবাস পাওয়া যায়; তা শিউলি-গোলাপ-জুঁই-এর সুবাসের চেয়ে কম নয়। কবিকন্যা সুমাইয়া ইব্রাহিমের সুন্দর প্রচ্ছদের কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশিত হয়েছে অনন্য প্রকাশন থেকে; অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০২১ এ।
স্বভাবসুলভ অভ্যাসের বশে বইটি দৃষ্টির সীমানায় মেলে ধরি। কবির পরিচিতি পাঠ করি। একই সঙ্গে পিতা-মাতাসহ অনেককে উৎসর্গ করার উৎসর্গপত্রটিও পড়ি। কবির মনের একান্ত কিছু ভাবনা নিয়ে বলা, ''না বলা কিছু কথা'' পড়ি। ভালো লাগার সম্মোহনীতা আমার মাঝে ক্রিয়াশীল হলো। অতঃপর, অনেকগুলো কবিতার মাঝে উল্টিয়েপাল্টিয়ে বেশ কয়েকটি কবিতা পাঠ করি। কোন কোন কবিতা পাঠ সমাপনান্তে একটু চোখ বন্ধ করে ভাবতে হয়েছে। কাব্যগ্রন্থের প্রথম কবিতা 'ঈমান বাঁচাই' ধর্মীয় চেতনার একটি সাবলীল ও সুন্দর লেখা।
অতঃপর, কবিতা পড়তে পড়তে ভালো লাগার একটি আবেশ সৃষ্টি হলো। এক নাগাড়ে অনেকগুলো কবিতা পড়লাম। অন্যরকম সৃষ্টি চারখানা 'ধাঁধা কবিতা'ও পাঠ করলাম। এই চারটি কবিতা বারবার পড়া এবং তার উত্তর খুঁজে পাওয়ার জন্য দীর্ঘ সময় কেটে গেলো। কবিতার নিচে কবি নোট লিখে দিয়েছেন[ - 'ধাঁধাঁর উওর কেউ দিতে চাইলে, আমার প্রদত্ত ইমেইলৈ দিতে পারবেন'।
কবির পরিবারের মাতা, প্রয়াত পিতা, ভাই-বোন, স্বামী এরূপ অনেক আত্মীয়কে উৎসর্গ করে বেশ কয়েকটি কবিতা লিখেছেন। আবার কোন কোন আত্মীয়ের জীবনের কোন ঘটনাকে কেন্দ্র করেও কিছু কবিতা আছে। কবির জীবনের অভিজ্ঞতালব্ধ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বেশকিছু কবিতা পাঠ করলাম। অর্থাৎ, কবির লেখাগুলো কাল্পনিক কাব্যিক প্রকাশের চেয়ে, জীবনঘনিষ্ঠ সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, চাওয়া-পাওয়া ইত্যাদি বিষয়াবলী কবিতার উপজীব্য বিষয় হয়ে আমার মতো নগন্য পাঠককে আন্দোলিত করে তুলেছে।
কাব্যগ্রন্থ ''মনের সাতকাহন''-এ বেশ কয়েকটি কবিতা বাংলা কবিতা ওয়েবসাইটের কবিতার আসরের কবিদের প্রতি ভালোবাসা-স্নেহ-শ্রদ্ধাজ্ঞাপন উল্লেখপূর্বক; তথা উৎসর্গ করে কিছু কবিতা আছে। যা কবি-মনের কপটতাহীন সরলতাকে প্রতিভাস করে তুলে। যাদেরকে উৎসর্গ করে কবিতা লিখে মলাটবদ্ধ করে প্রকাশ করেছেন; তারা উক্ত কবিতাগুলো পাঠ করলে নিশ্চয়ই ভালো লাগার কথা। যেমন আমার ভালো লেগেছে 'দুষ্টু দাদা'' কবিতাটি।
ছন্দের প্রতি কবির আলাদা একটি দুর্বলতা আছে, তা তাঁর কবিতা পাঠে অনুমিত হলো। সেদিকটি তিনি রক্ষা করতে চেয়েছেন, খুব যত্নের সাথে। তাঁর কাব্যগ্রন্থের কবিতাগুলো পাঠ করলে সহসাই অনুমান করা যায়। কবির কাব্যগ্রন্থের কবিতাগুলোতে যেমন জীবনবোধের কথা আছে, তেমনি ধর্মীয় চেতনা অথবা দেশাত্মবোধের ইতিবাচক এবং ব্যাঙ্গাত্মক কবিতাও আছে। কয়েকটি শিশুতোষ ছড়া বেশ মুগ্ধকর; যা জীবনঘনিষ্ঠ চেতনার আবহে সৃষ্টি হয়েছে। তার কবিতাগুলোকে খুবই উচ্চমার্গের হয়েছে বলে, হয়তোবা আত্মতুষ্টি পাওয়া যাবে না; তবে, 'কবিতা হয়নি' বলেও সহজে ঠেলে ফেলে দেয়াও যাবে না। এমন কিছু কবিতা পাঠ করলাম, যা পাঠকের মনে রেখাপাত করার যোগ্যতা রাখে। সব মিলিয়ে ''মনের সাতকাহন'' একটি অনন্য কাব্যগ্রন্থ। যে কোন পাঠকের কাছে নিশ্চয়ই ভালো লাগবে। আমার বিশ্বাস, কবি হাজেরা কোরেশী অপি-এর কাব্যগ্রন্থ 'মনের সাতকাহন'-এর কবিতাগুলো পাঠ করে, কোন পাঠকই বিরক্তিবোধ করবেন না। একটি কবিতা পাঠের পর, আরেকটি কবিতা পাঠের আগ্রহ বৃদ্ধি পাবে।
অভিনন্দন এবং শুভ কামনা কবি হাজেরা কোরেশী অপি। কাব্যগ্রন্থ 'মনের সাতকাহন' পাঠক সমাদৃত হোক কামনা করি।